ভোলার সড়কে তিন জন যাত্রী নিয়ে চালাতে চাইছেন না সিএনজি অটোরিকশাচালক ও মালিকরা। তারা আগের মতো পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে চালানোর দাবিতে সোমবার (১২ মে) সকালে ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে শত শত সিএনজি অটোরিকশা রেখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে চলাচলের দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দুপুর পর্যন্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন সিএনজিচালক ও মালিকরা। পরে অটোরিকশা চলাচলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক চালকদের ওপর আরোপিত শর্ত শিথিলের ও মালিকদের আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তির দাবিতে একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে দিয়েছেন।
স্মারকলিপি দেওয়া শেষে ভোলা সিএনজি চালক-মালিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘গত ৬ মে ভোলা জেলা প্রশাসকের এক সভায় চালক-মালিকদের ওপর কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, সিএনজি অটোরিকশায় তিন জনের বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। তিন জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে চালক বা মালিকদের লোকসান গুনতে হবে। এতে অটোরিকশা চালক ও মালিকদের পথে বসতে হবে। তাই আগের মতো পাঁচ জন করে যাত্রী চলাচলের দাবি জানাচ্ছেন অটোরিকশাচালক ও মালিকরা। দাবি না মানলে ভোলার সড়কে প্রায় সাড়ে ৪০০ সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখা হবে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘বাস মালিক-শ্রমিক এবং সিএনজি অটোরিকশা চালক-মালিক সমিতির সঙ্গে দুই দফা সমঝোতা বৈঠকের পর ওই সিদ্ধান্ত হয়েছে। উভয় পক্ষ সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। এখন সিএনজি অটোরিকশাচালক ও মালিকরা এটা না মানলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবিতে গত ৪ মে বিকালে ভোলার পাঁচটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। এতে সমর্থন দেয় ভোলা বাস মালিক সমিতি। দাবি আদায়ে বাস শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এরপর তিন দফা দাবিতে পরদিন সকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতি।
এ অবস্থায় ৬ মে সকাল ১০টায় ভোলা বাস মালিক সমিতি, বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি ও অটোরিকশা চালক সমিতির নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সমঝোতা বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন। সেখানে কিছু সিদ্ধান্তের পর বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র ও বাস মালিক সমিতির নেতারা জানান, ওই দিন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শ্রমিক ইউনিয়ন বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়। বৈঠকে আটটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ভোলার মধ্যে থাকা মহাসড়কে (বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অংশ) তিন চাকার কোনও যান চলবে না, তবে আঞ্চলিক মহাসড়কে (ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়ক) চলবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক পাশে (সামনে) কোনও যাত্রী নিতে পারবেন না। কেউ আইন নিজের হাতে নিয়ে কোনও কাজ করতে পারবেন না। নিবন্ধন পাওয়া ৪৪৯টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়া কোনও অটোরিকশা সড়কে চলতে পারবে না। ফিটনেস ও রুট পারমিট ছাড়া কোনও বাস চলাচল করতে পারবে না। সনদে উল্লিখিত আসনের বাইরে বাসে যাত্রী নেওয়া যাবে না। ধর্মঘটের সময় আন্দোলনকারীরা যদি কোনও অটোরিকশা ভাঙচুর করেন, সিএনজি মালিক সমিতির নেতারা থানায় মামলার পর তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে বাস মালিক সমিতি ক্ষতিপূরণ দেবে।
জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসন আটটি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মানবিক বিবেচনায় আমরা বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। ওসব সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও মালিকরা। এখন আবার নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা।