টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সময় ট্রলারডুবির ঘটনায় ১১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এক জেলেকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই জেলেকে স্পিডবোট নিয়ে খুঁজতে গিয়ে স্পিডবোটসহ দুজন নিখোঁজ হয়েছেন।
বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে গোলারচর সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে এই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। পরে আশপাশের ট্রলারের লোকজন এসে ডুবে যাওয়া ট্রলারের ১১ জন মাঝিমাল্লাকে উদ্ধার করেন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা মো. সাদ্দামের মালিকানাধীন ট্রলারটি টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিভিন্ন নিত্যপণ্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় ট্রলারটি ডুবে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে স্পিডবোটসহ আরও দুই জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- সেন্টমার্টিনের ৯ নং ওয়ার্ড দক্ষিণপাড়ার নুর মোহাম্মদ শওকত, একই এলাকার মোহাম্মদ ফাহাদ শাহিন এবং ৮ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইসমাইল।
সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, ১২ জেলে ও মাঝিমাল্লা ট্রলারটি নিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তখন সাগরে প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে সেটি ডুবে যায়। স্থানীয় জেলেরা তখন নৌকা নিয়ে গিয়ে ১১ জনকে উদ্ধার করে। কিন্তু নিখোঁজ একজনকে খুঁজতে গিয়ে আরও দুই জন নিখোঁজ রয়েছেন। মোট তিন জন নিখোঁজ।
অনুমতি নিতে গিয়ে কোস্টগার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষ
প্রথম ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ জেলের খবর পেয়ে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধারের জন্য যেতে অনুমতি চাইলে প্রায় চার ঘণ্টা দেরি করে কোস্টগার্ড। পরে এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কোস্টগার্ড সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় কোস্টগার্ডের গুলিতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কোস্টগার্ড কর্মকর্তাসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছে কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি ৭ নং ওয়ার্ড কোনাপাড়ার বাসিন্দা করিম উল্লাহর ছেলে হামিদ হোসেন।
সেন্টমার্টিন হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. নাইমুর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ একজনকে সেন্টমার্টিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার ডান হাতের কনুইতে গুলি লেগেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফ বা কক্সবাজার নেওয়া প্রয়োজন।
তবে সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। অনেকেই অনেক কিছু ছড়াচ্ছে। আপনি ভালো করে খোঁজ নিন।
বৈরী আবহাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা চালানো যায়নি
বুধবার থেকে টানা ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে কক্সবাজারে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ট্রলার নিয়ে খুঁজতে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও ফিরে আসতে হয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার নিয়ে খুঁজতে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও ফিরে আসতে হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোস্টগার্ডের সঙ্গে দ্বীপবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘ট্রলারডুবির ঘটনায় উদ্ধার করতে গিয়ে আরেকটি স্পিডবোটডুবির ঘটনা ঘটে। এতে স্পিডবোটের দুজন নিখোঁজ আছে। আর কোস্টগার্ডের সঙ্গে দ্বীপবাসীর বিরোধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।‘