নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে সেদিন (৩ এপ্রিল) মামুনুল হক স্ত্রী দাবি করা জান্নাত আরা ঝর্ণাকে নিয়ে আট হাজার টাকা প্যাকেজের রুম ভাড়া করেছিলেন। ঝর্ণার করা ধর্ষণ মামলায় সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আদালতে এ কথা বলেন রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ পলাশ। সাক্ষীর বরাত দিয়ে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রকিবুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
আজ নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মোট তিন প্রত্যক্ষদর্শী এই মামলায় সাক্ষ্য দেন। বাকি দুজন হলেন রিসোর্টের পাবলিক রিলেশন্স কর্মকর্তা নাজমুল হাসান অনি ও আনসার সদস্য রতন বড়াল।
সোমবার আদালতে পাঁচ সাক্ষী উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও ছিলেন চার জন। তবে আদালতে হাজিরা দেওয়া ইসমাইল হোসেন নামের আনসার সদস্যের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। পরের তারিখে তার সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৪৩ জন। গত ২৪ নভেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণা।
মামলার চাক্ষুষ সাক্ষী আব্দুল আজিজ পলাশ আদালতে বলেছেন, ‘গত ৩ এপ্রিল বিকাল ৩টার দিকে একটি সাদা প্রিমিও কারে মামুনুল হক বোরকা পরা এক নারীকে নিয়ে রয়্যাল রিসোর্টে আসেন। এ সময় তিনি স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষটি আট হাজার টাকা প্যাকেজের আওতায় ভাড়া নেয়। রুম ভাড়া নেওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীরা সেখানে আসেন।’
সাক্ষীরা আদালতকে বলেন, ‘ওই দিন রিসোর্টে বিশৃঙ্খলার পর ওই নারীর সঙ্গে কী সম্পর্ক জানতে চাইলে তাকে স্ত্রী দাবি করেন মামুনুল। তবে এই বিষয়ে বৈধ কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। রিসোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যদের সামনেই মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণা বিয়ের প্রলোভনে রিসোর্টে এনে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে সবার সামনে ওই কথা স্বীকারও করেন মামুনুল হক।’
মামুনুল হকের আইনজীবী একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেন, ‘সাক্ষীরা তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষও তাদের জেরা করেছেন। সাক্ষীরা অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি।’
‘সাক্ষ্য আসামিপক্ষের অনুকূলে রয়েছে’ বলে দাবি করেন ওমর ফারুক। তিনি দাবি করেন, ‘মামলার বাদী মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। তৃতীয় কোনও পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।’
চলতি বছরের ৩ এপ্রিল বিকালে সোনারগাঁ উপজেলার রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে এক নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ লোকজন। তখন ওই নারীকে নিজের বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল। ঘটনা জানাজানি হলে সন্ধ্যায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা ওই রিসোর্ট ঘেরাও করেন। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত থাকা অবস্থায় মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় নেতাকর্মীরা। পরে রাতভর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন উত্তেজিত হেফাজত কর্মীরা। ওই ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এই ঘটনার প্রায় মাসখানেক পর ৩০ এপ্রিল মামুনুলের বিরুদ্ধে তারই দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ওই নারী ধর্ষণ মামলাটি করেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের আশ্বাসে তার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন মাওলানা মামুনুল হক। আইনত তাদের বিয়ে হয়নি। এই মামলায় গত ৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। এর আগে, ১৮ এপ্রিল ঢাকায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামুনুল হককে গ্রেফতার করে।
