গাজায় মানবিক সহায়তা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের ওপর নতুন করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ড্রোন হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। মঙ্গলবার ভোর থেকে দিনের বিভিন্ন সময়ে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
গাজার হাসপাতাল সূত্রে আল-জাজিরাকে জানানো হয়েছে, শুধু ত্রাণ পয়েন্টগুলোর আশপাশে হামলায় নিহত হয়েছেন ৫০ জন। এর বাইরে গাজাজুড়ে আরও ২১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে ওয়াদি গাজার দক্ষিণে সালাহউদ্দিন সড়কে একটি ত্রাণকেন্দ্রে অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ১৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে আল-আউদা হাসপাতালে পৌঁছানো মৃতদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণে খান ইউনুসের নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে।
অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে গাজা সিটি এবং রাফাহতে ত্রাণকেন্দ্রে আসার পথেই প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
আল-জাজিরার হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানান, আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এমন রক্তাক্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে যে অনেকেই চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ত্রাণবাহী ট্রাকের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ছোড়ে। এটা ছিল এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ। আমরা পালাতে চেষ্টা করলেও ট্যাংক আর ড্রোন হামলা থামেনি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা সিটির নেটজারিম করিডোরের কাছাকাছি ঘটনাগুলো তারা তদন্ত করছে। তাদের দাবি, সন্দেহভাজনরা সেনাদের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় গুলি ছোড়া হয়েছে।
ঘটনাগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা। মে মাসের শেষদিক থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করে সংস্থাটি।
এই ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে নিয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি মঙ্গলবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটি একটি অপমানজনক, অমানবিক ব্যবস্থা। একটি মৃত্যুকূপ, যা বাঁচানোর চেয়ে বেশি জীবন কেড়ে নিচ্ছে।
জাতিসংঘ এই সংস্থাকে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, এটি মানবিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্য পূরণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জিএইচএফ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০০ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে।
সোমবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে ১৫টি মানবাধিকার সংগঠন এই ব্যবস্থার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গাজায় বেসরকারি সামরিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের দাবি তুলেছে।