কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ১৯ বস্তা টাকা। শনিবার (৬ মে) সকালে বাক্স খুলে পাওয়া টাকা দিনব্যাপী চলে গণনা। রাতে গণনা শেষে অঙ্ক দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা। সঙ্গে মিলেছে বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।
রাত সোয়া ৯টায় মসজিদের দানবাক্স খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, চার মাস পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গণনা শেষে পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা দাঁড়িয়েছে। এর আগে কখনও একসঙ্গে এত টাকা পাওয়া যায়নি।
গত ৭ জানুয়ারি খোলা হয়েছিল এসব দানবাক্স। তখন পাওয়া যায় চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। সেটি ছিল এ যাবতকালে দানের সর্বোচ্চ টাকা। এর আগে ২০২২ সালের ১ অক্টোবর খোলা হলে পাওয়া যায় তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। একই বছরের ২ জুলাই খুলে তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা পাওয়া গেছে।
মসজিদ সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাধারণত ৯০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে ভরে যায় আটটি বাক্স। এ কারণে তিন মাস পরপর খোলা হয়। তবে এবার রোজাসহ নানা কারণে একটু দেরিতে খোলা হলো।
আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় ও বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে খোলা হয় সব দানবাক্স। এরপর টাকাগুলো ১৯ বস্তায় ভরে নিয়ে যাওয়া হয় দোতলায়।
স্থানীয়রা জানায়, মুসলমানসহ সব সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়- এই বিশ্বাস থেকে অনেকে টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার দেন। তবে অর্থ ও মূল্যবান ধাতুর পাশাপাশি পাওয়া যায় চিঠি। সেখানে লোকজন তাদের জীবনের পাওয়া, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির আর্জি ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করেন।
টাকা গণনার কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার নাবিলা ফেরদৌস, সাদিয়া আফরীন তারিন, মসজিদের ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন।
সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, দানবাক্সের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। পরে বস্তাগুলো ধরাধরি করে দোতলায় নেওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমাণ গণনাকারীদের সামনে ঢেলে দেওয়া হয়। শুরু হয় গণনা।
মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়র।
মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি মানব সেবায় ভূমিকা রাখছে। করোনা মহামারির সময় মসজিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্র কিনে দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়। এসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড সারা বছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য এনায়েত করিম বলেন, কেবল মুসলমান নয়, অন্য ধর্মের লোকজনও পাগলা মসজিদে বিপুল অঙ্কের টাকা-পয়সা দান করেন। মসজিদটি সব ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতা ও আস্থার জায়গা। ফলে দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ মসজিদ পরিদর্শনে আসেন। যা প্রকৃত অর্থে বিরল একটি বিষয়।
মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে দানের টাকা জমানো হচ্ছে। এ টাকায় এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল কমপ্লেক্স হবে। যেখানে ৬০ হাজার মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থাও থাকবে। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরও নানা আয়োজন। এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সবকিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই মূল কাজে হাত দিতে পারবো।
শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে ১০ শতাংশ ভূমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ মসজিদের পরিধির পাশাপাশি বেড়েছে খ্যাতিও।