বিলুপ্তপ্রায় সব দেশীয় ছোট মাছ খাবারের টেবিলে ফিরিয়ে আনতেই ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশের মিঠা পানির ২৬০টি প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে।
এর মধ্যে বিএফআরআই-এর লাইভ জিন ব্যাংকে ১১২ প্রজাতির দেশীয় ছোট মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছের মধ্যে দেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের সংখ্যা ৬৪টি।
তারা বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মাছের ওপর গবেষণা চালিয়ে ইতোমধ্যে ৪০ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পাবদা, গুলশা, টেংরা, গুজি আইর, চিতল, ফুলি, মহাশোল, বৈরালী, বালাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিসা, গজার, রানী, বাতাসি, পিয়ালী অন্যতম। এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হওয়ায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের প্রাপ্যতা সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাছের মূল্য সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এসেছে।
বিএফআরআই এর তথ্যমতে, ২০০৮-২০০৯ সালে চাষের মাধ্যমে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন যা ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। এর ফলে গত ১২ বছরে দেশে ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ।
দেশের মৎস্য উৎপাদনে দেশীয় ছোট মাছের অবদান ৩০-৩৫ শতাংশ। দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়া বর্তমানে হ্যাচারিতে দেশীয় মাছের পোনা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। পোনা প্রাপ্তি সহজতর হওয়ায় বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে পাবদা গুলসার সিং, টেংরা, মাগুর ও কৈ মাছ ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে। ইদানিং বৈরালি, মেনি ও বাটা মাছের চাষ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, দেশীয় মাছ খাবার টেবিলে ফিরিয়ে দিতেই ২০২০ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিএফআরআই লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। দেশীয় মাছ লাইভ জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সব দেশীয় মাছকে পুনরুদ্ধার করার জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় সব দেশীয় মাছকে পর্যায়ক্রমে খাবার টেবিলে ফিরিয়ে আনায় এসব গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।