নেত্রকোনার মদন উপজেলায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে দিলুয়ার (৩৫) ও মোজাহিদ (২৪) নামে দুই যুবককে রাতভর নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দুই যুবকের চোখ কালো কাপড় দিয়ে এবং দড়ি দিয়ে হাত ও পা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এর আগে, গত শনিবার (১৭ মে) দিবাগত রাতে উপজেলার বরাটি গ্রামে এমন ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার দিলুয়ার ডেকোরেশন ব্যবসার একজন শ্রমিক এবং মোজাহিদ অটোরিকশাচালক। তারা দুজনই উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের মোয়াটি গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দিলুয়ার গত মঙ্গলবার (১৯ মে) মদন থানায় ৫ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনও মামলা হয়নি বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে কাজের কথা বলে দিলুয়ার ও মোজাহিদকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় বরাটি গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে শরীফ। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বরাটি গ্রামের দানা মিয়ার বাড়ির সামনে নিয়ে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে কয়েকজন তাদের চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরে দানা মিয়ার বসতঘরের খুঁটির সাথে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে। পরে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এদিকে গত রবিবার (১৮ মে) সকালে ভুক্তভোগীর স্বজনরা তাদের ছাড়িয়ে আনেন। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দিলুয়ারের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দিলুয়ার বলেন, ‘কাজের কথা বলে সবুজ মেম্বারের ছেলে আমাকে ও মোজাহিদকে তাদের গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পরেই লোকজন এসে আমাদের ধরে চোখ বেঁধে ফেলে। পরে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে চুরি করতে এসেছি বলানোর জন্য সারা রাত মারধর করে। পরদিন সকাল ১০টার দিকে দরবার সালিশ করে আমাকে ছাড়ানো হয়। আর এই ঘটনা থানায় জানালে জরিমানা দিতে হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। আমরা কোনও চুরি করিনি। আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
ঘটনা জানতে দানা মিয়ার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের ঘরের গরু চুরি করতে এসেছিল। পরে বাড়ির সামনে পুকুরপাড় থেকে তাদের ধরা হয়। লোকজন তাদের ধরে আমাদের ঘরের সামনেই বেঁধে রাখে। দুই মাস আগে আমাদের একটা মোটর চুরি হয়েছিল। সেটা তারা নিয়েছে বলে স্বীকারও করে।’
এ বিষয়ে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করার জন্য এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’