X
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
৩০ বৈশাখ ১৪৩১

বানে সব হারিয়ে বাপ-দাদার ভিটে ছাড়ছেন প্রতাপনগরের মানুষ

আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা
২৬ আগস্ট ২০২০, ১০:৩৭আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২০, ১১:৩৯

বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা লোকজন
আবুল কালাম গাজী (৪৭), নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে তার। ঝুঁর্কিপূণ হওয়ায় আম্পানের আগে প্রশাসন তাকে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যায়। ঝড়ের পরে এসে দেখেন তার ঘরটি আর নেই। টিনের চাল উড়ে গেছে, মাটির দেয়াল পড়ে গেছে। উপকূলে থাকলে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করতেই হবে। আম্পানের পর সরকারিভাবে পাওয়া টিন এবং একটি সংস্থা থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে আবারও একটি ইটের ঘর তোলেন সেখানে। কিন্তু বিধিবাম। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে এবং অমাবস্যার প্রবল জোয়ারে কপোতাক্ষের বাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়াসহ পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে আবুল কালামের ঘর-বাড়ি ক্লোজারে (খাল) চলে গেছে। আগে থেকে বুঝতে পেরে কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। সেসব জিনিসপত্র নিয়েই বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে নৌকায় করে এসেছেন প্রতাপনগরের লস্কারী খাজরা চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তার সামনে। তার মতো অনেকেই বানের জলে সব হারিয়ে ছেড়েছেন ভিটে-মাটি। শুধু প্রতাপনগর নয়, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনির শ্রীউলার মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে।

বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা লোকজন

আবুল কালাম গাজীর স্ত্রী নারগিস বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গত চারদিনের মধ্যে মাত্র তিন চার বেলা খাওয়া হয়েছে। রান্নার জায়গা নেই। আর থাকা গেলো না এই এলাকায়। যা ছিল সব নিয়ে চলে যাচ্ছি।’

পানিতে তলিয়ে গেছে সবকিছু

কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘কোথায় যাবো ঠিক নেই। তবে এখানে আর ফিরবো না। ফিরবো কোথায় জায়গা-জমি যা ছিল সবতো ক্লোজার (খাল) হয়ে গেছে। কষ্ট করে সম্পদ তৈরি করবো আর কিছুদিন পর তা ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে নিয়ে চলে যাবে। তার চেয়ে অন্য এলাকায় কিছু করতে পারি কিনা দেখি।’

বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা লোকজন
সেখান থেকে একটু সামনে যেতেই দেখা হয় একই এলাকার ফিরোজা বেগমের (৪৪) সঙ্গে। তাদের সাত কাঠা জমি খালে বিলীন হয়েছে। শুধু নিতে পেরেছেন ঘরের কয়েকটি খুঁটি আর কিছু জ্বালানি। তিনি তার তিন ছেলেকে নিয়ে সাতক্ষীরার ভোমরা যাবেন দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে থেকেই খুঁজবেন নতুন আশ্রয়।

বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা লোকজন
এই কয়দিন খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয়নি বলেই কাঁদতে কাঁদতে ফিরোজা বেগম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে জোয়ার-ভাটার মধ্যেও বসবাস করছিলাম। যাওয়ার জায়গা নেই। তাই হাজার কষ্ট করে হলেও নিজের বাড়িতে ছিলাম। তিন ছেলে ইটভাটায় কাজ করে আম্পানের আগে তিনটি ঘর তৈরি করেছিলাম। কিন্তু কপোতাক্ষের ভয়াল গ্রাসে সব নিয়ে গেছে। আম্পানে এত ক্ষতি হয়নি আমাদের। আমার জীবনে এত পানি কখনও দেখিনি। সব সাগর হয়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট কিছু নেই। যাদের বাড়িঘর আছে তারা বের হতে পারছে না। বাজার করতে পারছে না। এলাকার অধিকাংশ মানুষের না খেয়ে দিন কাটছে। সরকার এই এলাকায় দ্রুত বাঁধের ব্যবস্থা না করলে এসব এলাকার কিছু থাকবে না। সব নিয়ে যাবে কপোতাক্ষ-খোলপেটুয়া নদী।’ 

বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা লোকজন
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘একের পর এক দুর্যোগ আমাদের এখানে লেগেই আছে। আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতেই কপোতাক্ষ-খোলপেটুয়া বাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা পানিতে ভাসছে। জোয়ারের পানিতে বড় বড় খালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেক মানুষ বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কোথায় যাবে কোথায় থাকবে তারা কিন্তু জানেন না। তারপরও বাঁচার আশায় তারা চলে যাচ্ছেন।’

বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা লোকজন
তিনি আরও জানান, এখানকার মানুষ খুবই কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছে। একটি রাস্তা ভালো নেই। একটি মানুষ মারা গেলে তার দাফন করার মতো জায়গা নেই। ইউনিয়নের ২১ গ্রামের ২০টি তলিয়ে রয়েছে। খুব দ্রুত বাঁধগুলো সংস্কার করা না হলে মানচিত্র থেকে প্রতাপনগর হারিয়ে যাবে। ইউনিয়নটি কপোতাক্ষ-খোলপেটুয়া নদীর সঙ্গে মিশে যাবে। 

বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা লোকজন
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আমরা দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি। কিন্তু তাদের রান্না করার জায়গা নেই যে রান্না করে খাবে। আমাদের একটাই দাবি, ‘আমরা ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই।’

/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সাতক্ষীরায় আম পাড়া শুরু, ২৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে সারা দেশে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
সুনাম ধরে রাখতে সাতক্ষীরায় ‘আম ক্যালেন্ডার’ ঘোষণা
সর্বশেষ খবর
ইউনিয়ন ব্যাংক ও মেডর‌্যাবিটস হেলথকেয়ারের চুক্তি স্বাক্ষর
ইউনিয়ন ব্যাংক ও মেডর‌্যাবিটস হেলথকেয়ারের চুক্তি স্বাক্ষর
নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি নেতাকে শোকজ
নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি নেতাকে শোকজ
শিক্ষার্থীকে মারধর করে শিক্ষক বললেন, ‘শাসন করেছি’
শিক্ষার্থীকে মারধর করে শিক্ষক বললেন, ‘শাসন করেছি’
বিমানবন্দর ও টঙ্গী থেকে ৭ ছিনতাইকারী গ্রেফতার
বিমানবন্দর ও টঙ্গী থেকে ৭ ছিনতাইকারী গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
আমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
বাংলা ট্রিবিউনের দশম বর্ষপূর্তিআমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
যেভাবে বরণ করা হবে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে
যেভাবে বরণ করা হবে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে
জাতীয় দলে খেলতে গেলে সাপোর্ট লাগে: ইমরুল  
জাতীয় দলে খেলতে গেলে সাপোর্ট লাগে: ইমরুল  
চিনি খাওয়া বন্ধ করলে কী হয়?
চিনি খাওয়া বন্ধ করলে কী হয়?