X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

‘আমাকে ধরে এনে কিছু বই সামনে দিয়ে মামলা দিয়েছে, কী অপরাধ তাও বলেনি’

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৬ মার্চ ২০২৩, ২০:৫০আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ২০:৫০

রাজশাহীর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বেলপুকুর থানার অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত ৩৩ জন জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে বলে দাবি করে করছে পুলিশ। তবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন অভিযুক্তরা। তাদের দাবি, তারা নিতান্তই সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সময় অন্যায়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়েছে। মিথ্যা জঙ্গি মামলা দিয়েছে। অথচ জঙ্গিদের তারা ঘৃণা করেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকালে আরএমপির বেলপুকুর থানায় অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত ৩৩ জন আসামি হাজিরা দিতে আসেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার বিষয়টি জানতে চাইলেই তারা নিজেদেরকে জঙ্গি না দাবি করে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

তাদেরই একজন হায়াতুল্লাহ। তিনি বেলপুকুর থানাধীন ভড়াপাড়ার বাসিন্দা। তিনি দাবি করেন, ‘আমি রড মিস্ত্রির কাজ করি। আমাকে রাস্তার ওপর থেকে ধরে নিয়ে এসেছিল। আমি রাস্তা ফিয়ে যাচ্ছিলাম। কয়েকজন এসে বললো, চলো। আমি বললাম কোথায় যাবে, তারা বললো, স্যার ডেকেছে। কিছু কথা আছে। আমি বললাম, কী কথা এখানেই বলেন। তারা বললো, না যেতে হবে। আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। এক রাত আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো। ধরার সময়, আমার কাছে রড মিস্ত্রির কাজের উপকরণ সব নিয়ে নিয়েছে। পরে সামনে কিছু বই দিয়ে আমাকে মামলা দিয়েছে। বইয়ের মামলা দিয়েছে। আমার কী অপরাধ তাও বলেনি। র‌্যাব ধরেছিল। এখন থানায় হাজিরা দিচ্ছি।’

নাম প্রকাশ না করে আরেকজন গভীর নলকূপ মিস্ত্রি বলেন, ‘আমাকে দিয়ে কাজ করাবে বলে ডেকেছিল। একসঙ্গে বসে চা খেলাম। আমাকে বললো, দেখেন তো গাড়ি তে লোক আছে না কি? গাড়ির কাছে গেলাম। ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে নিলো। এরপর সাত দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো। এরপর রাতে হলিদাগাছি এলাকায় দুটা জিহাদি বই, একটা পিস্তল দিয়ে গ্রেফতার করলো। অথচ আমি জীবনে জঙ্গির কাজ করিনি। আমি মিস্ত্রি মানুষ। কাজ করেই সংসার চলে। এখনও এভাবেই চলছে।’

তাদের আরেকজন ফার্মেসি ব্যববসায়ী বলেন, ‘আমি আসরের নামাজ পরে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর আমাকে আটক করা হয়েছিল। পরে গোয়েন্দা সংস্থার লোকই তদন্ত করে বলেছিল, তোমাকে কেন আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে? তোমার তো কোন জঙ্গি সম্পৃক্ততা পায়নি। আর আমি কোনোদিনই জঙ্গি ছিলাম না। জঙ্গিকে ঘৃণা করি। তারপরও ২০১৬ সালে আমার ফার্মেসির দোকান থেকে ডেকে এনে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছিল। সেই মামলার জামিনে মুক্ত হয়ে এখনও হাজিরা দিচ্ছি।’

জামিনপ্রাপ্ত ৩৩ জন আসামি এভাবেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে গণমাধ্যমকর্মীদের বক্তব্য দেন। এ ছাড়া অন্য সাধারণ মামলার আসামিদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মামলা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে বেলপুকুর থানা পুলিশও।

গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে বেলপুকুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি ২০২১ সালে নভেম্বরে জয়েন করি। এরপর আগে যেসব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তাদের শনাক্ত করে কথা বলি। এখন প্রতি মাসে একবার করে হাজিরা দেয়। আর তারা (জঙ্গিরা) যে অভিযোগ করছে তা ঠিক না।’

এদিকে, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলমের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অনন্য উদ্যোগে নেতিবাচক জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করছে বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত ১১১ জঙ্গি। বৃহস্পতিবার বিকালে বেলপুকুর থানায় অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত ৩৩ জন জঙ্গি হাজির হন। তারা ওসি মনিরুল ইসলামের কাছে হাজিরা দেন। এ সময় অনেক গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা ব্যক্ত করেন।

জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরের ১২টি থানার মধ্যে ছয়টি থানা যথাক্রমে বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, মতিহার, বেলপুকুর, পবা ও চন্দ্রিমা থানায় জঙ্গি সংক্রান্ত ২৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে, ১৪টি বিচারাধীন ও তিনটি তদন্তাধীন রয়েছে। ২৬ মামলায় ১১১ জনের মধ্যে জেএমবির ৮৬, হিযবুত তাহরীরের ১৫, শাহাদৎ আল হিকমার এক, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক ও আনসার আল ইসলামের আট জন জঙ্গি রয়েছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার লড়াই করছে। এত সংখ্যক জঙ্গি মামলার আসামিকে এ ধরনের কর্মসূচির আওতায় আনা আরএমপির একটি নজিরবিহীন উদ্যোগ।

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘এটি আরএমপির প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। থানায় নিয়মিত হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জামিনে মুক্ত জঙ্গি মামলার আসামিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন এবং আমরাও চাই জঙ্গি মামলার আসামিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।’

উল্লেখ্য, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বেলপুকুর থানায় মোট ৩৮ জন তালিকাভুক্ত জঙ্গি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জন নিয়মিত থানায় হাজিরা দিচ্ছেন ও একজন জেল হাজতে রয়েছেন। থানায় হাজিরা দেওয়া ৩৩ জনের মধ্যে তিন জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টের আদেশে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। বাকি ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন বিচারাধীন আদালত থেকে জামিনে মুক্ত আছেন এবং এক জনকে মামলা তদন্তকালে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে চার জন জঙ্গির তথ্য সংগ্রহে কার্যক্রম চলমান আছে।

পরীক্ষামূলকভাবে বেলপুকুর থানায় ৩৩ জনের হাজিরার মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হলো। এপ্রিল থেকে আরও চার থানায় এ কর্মসূচি শুরু করা হবে। আরএমপির এ মহতী উদ্যোগ অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গি মামলার আসামিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ নগরবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছেন।

/এফআর/
সম্পর্কিত
নৌ পথে ঈদযাত্রা ও পশুবাহী নৌযান নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ: অতিরিক্ত আইজিপি
ইজিবাইকে যাত্রী ওঠানো নিয়ে সংঘর্ষ, ওসিসহ আহত ৩০
আওয়ামী লীগের ৫ ইউপি সদস্যকে ধরে পুলিশে সোপর্দ
সর্বশেষ খবর
পূজার অনুষ্ঠানে হামলায় আহত ৩, গ্রেফতার ২
পূজার অনুষ্ঠানে হামলায় আহত ৩, গ্রেফতার ২
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি
কালুরঘাটে হচ্ছে নতুন সেতু, ভিত্তিপ্রস্তরে থাকছে না প্রধান উপদেষ্টার নাম
কালুরঘাটে হচ্ছে নতুন সেতু, ভিত্তিপ্রস্তরে থাকছে না প্রধান উপদেষ্টার নাম
টিভিতে আজকের খেলা (১৩ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১৩ মে, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি