ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নাটোর সদর উপজেলায় মোস্তাক হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি মাছ নিধনে ব্যবহৃত গ্যাস ট্যাবলেট পানে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। রবিবার (১৪ জুলাই) উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের পূর্ব হাগুরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মোস্তাক নাটোর জজ কোর্টের স্ট্যাম্প ভেন্ডার।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইনে জুয়া খেলে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। ১৮-২০ লাখ টাকা মানুষের দেনা ছিলেন। গত কয়েক মাসে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে মানসিক চাপে ছিলেন।
পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, মোস্তাকের বাড়ি সদর উপজেলার উলিপুর এলাকায়। তিনি পূর্ব হাগুরিয়া এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে থাকতেন। ধীরে ধীরে ঋণে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১৮-২০ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। ঋণদাতাদের চাপে ১০-১২ দিন আগে আত্মগোপনে চলে যান। এ অবস্থায় ঋণদাতাদের চাপে মোস্তাকের স্ত্রী বাড়ি বিক্রির সাইনবোর্ড দেন। দুদিন আগে মোস্তাক বাড়ি ফিরে এলে ঋণদাতাদের চাপ আরও বাড়ে। একপর্যায়ে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে দুদিন অনাহারে কাটান। রবিবার সকালে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে চা পানের কথা বলে ৩৫ টাকা ধার নিয়ে গ্যাস ট্যাবলেট কিনে পান করেন। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা তাকে নাটের সদর হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নাটোর জজ কোর্টের এক আইনজীবীর সহকারী সারোয়ার জাহান সোহেল বলেন, ‘কোর্টের অনেকের কাছ থেকে ঋণ করেছেন মোস্তাক। ঋণ পরিশোধে বাড়ি বিক্রির কথাও তাকে বলেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ তার মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। মোস্তাকের বড় মেয়ে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। মেজো মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছেলের বয়স চার বছর। স্ত্রী গৃহিণী। এই অবস্থায় তাদের সংসার চলবে কীভাবে। ঋণই বা পরিশোধ হবে কীভাবে? এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে পরিবারটি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, ‘মোস্তাক ভালোই আয় করতেন। তার পরিবারের সদস্যদের পোশাক, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়ায় সংকটের ছাপ দেখা যায়নি। তবে মোস্তাক যাদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন তাদের অনেকে মোবাইলে জুয়া খেলে বাড়িঘর বিক্রি করে এখন নিঃস্ব। আমার ধারণা মোস্তাকও অনলাইনে জুয়া খেলে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ঋণদাতারাও।’
দিঘাপতিয়া বাজারের পান দোকানি শাহিন আহমেদ বলেন, ‘মোস্তাকের কাছে পান-বিস্কুটসহ বিভিন্ন জিনিস নেওয়া বাবদ ৭২৫ টাকা পাবো আমি।’
একই বাজারের ব্যবসায়ী সাহেব আলী বলেন, ‘দিঘাপতিয়া বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী নন্দনের কাছ থেকে মোস্তাক ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর বাইরে বিভিন্ন সমিতি ও অনেকের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন।’
প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ আনতে মাইক্রোবাস ভাড়া করতে পরিবারের কারও কাছে টাকা ছিল না। বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা চাঁদা তুলে পরে মাইক্রোবাস ভাড়া করে লাশ আনার ব্যবস্থা করেছি।’
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।’
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোস্তাকের আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’