বগুড়ার সোনাতলায় আধিপত্য বিস্তার ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধে স্থানীয় বিএনপি নেতার এবং তার লোকজনের মারধরে আহত যুবদল নেতা রাশেদুল হাসান রাশেদ (২৭) মারা গেছেন। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এর প্রতিবাদে নিহতের পক্ষের লোকজন হামলাকারী বিএনপি নেতাদের ৪-৫টি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিলাদুন্নবী এ তথ্য দিয়ে জানান, শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও মামলা হয়নি।
পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, নিহত রাশেদুল হাসান রাশেদ বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের পাকুল্লা গ্রামের সাইফুল ইসলাম আকন্দের ছেলে। তিনি পাকুল্লা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, জিয়া সাইবার ফোর্স জেলা শাখার সহসভাপতি ও সোনাতলা উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।
পাকুল্লা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে এলাকাবাসীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একপক্ষে পাকুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নান বাটালু, অপরপক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী হাসান নারুন এবং আরেকটি পক্ষে বগুড়া শহর জামায়াতের সাবেক এক দায়িত্বশীল নেতা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে গত এক মাস ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। স্কুলের কমিটি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি ও যুবদল নেতা ও তাদের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওই জামায়াত নেতা গ্রামের মসজিদে ইমামতি শেষে মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে গ্রামের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। দাওয়াত শেষে বগুড়া শহরে চলে যান। ওই সময় যুবদল নেতা রাশেদুল হাসান রাশেদও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
সন্ধ্যার দিকে যুবদল নেতা রশেদ মোটরসাইকেলে করে পাকুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নান বাটালুর নেতৃত্বে তার লোকজন রাশেদকে ধাওয়া করেন। রাশেদ প্রাণ বাঁচাতে মোটরসাইকেল ফেলে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান।
যুবদল নেতা রাশেদের মৃত্যুর খবর প্রচার হলে তার পক্ষের স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বাটালু ও তার ৪-৫ সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ সময় বাড়ির লোকজন পালিয়ে রক্ষা পান।
এ হামলা প্রসঙ্গে পাকুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নান বাটালু দাবি করেন, জামায়াত নেতার নেতৃত্বে যুবদল নেতা রাশেদ তার বাড়িতে হামলা করতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় বাজারে মহড়া দেন। জামায়াত নেতা ফিরে যাওয়ার পর কে বা কারা রাশেদের ওপর হামলা করেন। ওই হামলার সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই।
ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী হাসান নারুন বলেন, ‘ওই দিন সন্ধ্যায় যুবদল নেতা রাশেদ মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় বাটালুর নেতৃত্বে তার লোকজন ধাওয়া করেন। রাশেদ মোটরসাইকেল ফেলে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছিল।’
ওসি মিলাদুন্নবী জানান, একটি স্কুলের কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতার মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে বিএনপি নেতাদের হামলায় আহত যুবদল নেতা রাশেদ হাসপাতালে মারা গেছেন। এর প্রতিবাদে হামলাকারী বিএনপি নেতা ও তার সমর্থক ৪-৫ জনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মামলা হয়নি। মামলা হলে তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।