দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে ভেটারপাড়া, কাঁচদহ (মাঝিরপাড়া) ও সিরাজ ফকিরপাড়া গ্রাম। তিন গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ, খেলার মাঠসহ তিন কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন পাঁচ হাজার গ্রামবাসী।
গ্রামবাসী জানান, ২০ বছরে ভেটারপাড় গ্রামটি দেড় কিলোমিটার, মাঝিপাড়া গ্রামের এক কিলোমিটার এবং সিরাজ ফকিরপাড়া গ্রামের আধা কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিন গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার বাপ-দাদার ভিটামাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ১৫ বছর আগে রংপুরের বদরগঞ্জ থানায় করতোয়ার একটি শাখা ঘিল্লাই নাম ধারণ করে ভেটারপাড়া ও মাঝিপাড়া গ্রাম থেকে দেড় কিলোমিটার দূর দিয়ে প্রবাহিত হতো। তার পৌনে এক কিলোমিটার দূর দিয়ে প্রবাহিত হতো করতোয়া নদী। করতোয়া নদী বড় ও খরস্রোতা হওয়ায় ধীরে ধীরে গতিপথ পরিবর্তন করে ভেটারপাড়া ও মাঝিপাড়া গ্রামের কাছে এসে ঘিল্লাই নদীর সঙ্গে মিশে যায়। এরপর সেখান থেকে ভাঙনের শুরু।
তারা বলেন, আমরা বহুদিন ধরে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য সবার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ব্যবস্থা নেয়নি। ভাঙনকবলিত ভেটারপাড়া, কাঁচদহ ও সিরাজ ফকিরপাড়া গ্রামের অসহায় মানুষ তাদের রক্ষার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।
ভেটারপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ মুনছুর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নদীটা সাত বছরে হামার বাড়িঘর, জমিজমা সব খাইছে। এবার মাথা গোঁজার শেষ ঠিকানাও খাবি।’
কাঁচদহ মাঝিরপাড়া গ্রামের সুনীল চন্দ্র বলেন, ‘ভোট আসলি সবাই হামার কাছে দৌড়ায়, বাঁধ দিবি ব্রিজ দিবি, ভোট পার হয়ে গেলি কান্দিউ কারও পাওয়া যায় না।’
বিনোদনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেননি।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ সোম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কখনও নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেননি। উপজেলা প্রশাসন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিরাজ ফকিরপাড়া গ্রামে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে ড্রেজিং করে করতোয়াকে পুরনো গতিপথে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই মুহূর্তে এ ধরনের পরিকল্পনা নেই। এখানকার পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে।’
দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নবাবগঞ্জের তিনটি গ্রামকে করতোয়ার ভাঙন থেকে রক্ষায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের জন্য ডিও লেটার দিয়েছি। দ্রুত এই তিনটি গ্রাম রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে।’