X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক অপরাজিতার গল্প

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
০৮ মার্চ ২০২২, ২০:১৪আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ২০:২৭

সামাজিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকার গল্প প্রায়ই শোনা যায়। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে হার মানেন অথবা শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করেন। কিন্তু নিজের নির্যাতনের বিচার আর সন্তানের পরিচয় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের গল্প শুধু সিনেমা বা নাটকে দেখা গেলেও বাস্তবে তেমন উদাহরণ পাওয়া যায় সচরাচর। এমনই এক দীর্ঘ লড়াইয়ে নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিচার আর সন্তানের পিতৃ পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন কুড়িগ্রামের এক নারী।

অপরাজিতা ওই নারী বাড়ি সদর উপজেলায়। একই এলাকার আলী সরদার ওরফে খয়ের আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তারপর. . .

কী ঘটেছিল

ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালে। বিয়ের ২০ দিনের মাথায় তালাক দেন স্বামী খয়বর আলী সরদার। বাবার বাড়িতে ফিরে আসার ২১ দিনের মাথায় সেই খয়বর সুযোগ বুঝে ধর্ষণ করে তাকে। এই পাশবিকতা মেনে নেননি ভুক্তভোগী ওই নারী। আইনের আশ্রয় নিয়ে ন্যায়বিচার দাবি করেন। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলে। কিন্তু তাতে ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার শেষ হয়নি। ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়ে একটি মেয়ে সন্তানের মা হন ভুক্তভোগী। কিন্তু চতুর খয়বর ওই সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে। শুরু হয় সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় আদায়ের লড়াই। সন্তানের পরিচয় নিয়ে বিতর্কে নাজেহাল হলেও হাল ছাড়েননি ভুক্তভোগী নারী। আদালতে আবেদন করে পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ পরীক্ষার দাবি করেন। পরীক্ষায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে জন্ম নেওয়া শিশুর বায়োলজিক্যাল সম্পর্কের প্রমাণ মেলে। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আর খয়বরের আর্থিক ক্ষমতায় দীর্ঘ দশ বছরেও মিলছিল না বিচার এবং সন্তানের স্বীকৃতি। মাঝপথে ভয়ভীতি, অর্থ দিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব এমনকি ওই নারীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় একের পর এক তারিখ পেছানো আর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির রোষানলে পড়ে মাঝে মাঝে নিরাশ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু কিছুতেই হার মানেননি ভুক্তভোগী। নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থেকেও সেলাইয়ের কাজ করে নিজের ও শিশু সন্তানের প্রয়োজন মিটিয়েছেন।

অপেক্ষার পালা শেষ

২০১০ সালে সংঘটিত এই ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন কুড়িগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষ্য-প্রমাণে খয়বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। একইসঙ্গে জন্ম নেওয়া সন্তানের স্বীকৃতি ও তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। খয়বর বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে শাস্তি ভোগ করছে।

প্রান্তিক এলাকার বাসিন্দা হয়েও নিজের লড়াই নিয়ে ওই নারী বলেন, ‘এগারোটি বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু থেমে যাইনি, ধৈর্য হারাইনি। আজ আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার সন্তানও তার স্বীকৃতি পেয়েছে।’

শেষ হয়নি লড়াই

আদালতের রায়ে অভিযুক্ত খয়বরের শাস্তি হলেও সন্তানের ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত রায় এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে সন্তানের লেখাপড়া আর জীবিকা নির্বাহের ব্যয় নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জানান লড়াকু এই নারী।

‘আদালতের রায়ে খয়বরের কারাবাস চললেও আমার মেয়ের ভরণ-পোষণ দেওয়া নিয়ে রায়ের বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। মেয়ের লেখাপড়া ও ভরণ-পোষণের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। রায়ের কপিসহ জেলা প্রশাসক বরাবর ভরণ-পোষণের আবেদন করলেও গত এক বছরেও তা পাইনি। আমি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’ রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার লড়াই শেষ হয়নি। এতদিন অপরাধীর বিচার ও মেয়ের স্বীকৃতি চেয়ে লড়াই করলেও এখন রায় বাস্তবায়ন নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে। এটি একজন নারীর জন্য অত্যন্ত হতাশার। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশে এখন অনেক পদে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু একজন অসহায় নারী হয়ে আমি আমার সন্তানের ন্যায়সঙ্গত অধিকার পাচ্ছি না। আমি প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবো।’

 

 

/আরকে/এমএএ/
সম্পর্কিত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
জরিপের তথ্যনারীবান্ধব টয়লেট সুবিধা পান না ৯৩ শতাংশ নারী
সংরক্ষিত আসনের ১৬ শতাংশ এমপির পেশা রাজনীতি
সর্বশেষ খবর
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ