X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র: অসম্ভব বলছেন গবেষকরা, হচ্ছে তদন্ত কমিটি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৭

বিভিন্ন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণাপত্র নকলের অভিযোগ উঠেছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। জালিয়াতির মাধ্যমে এক বছরে ১০২টি গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন ওই শিক্ষক—এমন অভিযোগ তুলেছেন আরেক গবেষক। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ।

তিনি বলেন, ‘গবেষণাপত্র জালিয়াতির বিষয়ে একজন গবেষক আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) সুপারিশ করা হবে।’

গত ৩ ডিসেম্বর ‘এক বছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি দেখে অবাক হয়েছেন দেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ওই শিক্ষকের গবেষণাপত্র জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে, সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনের কাছে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন। প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তিহীন দাবি করে প্রতিবাদলিপিতে এই শিক্ষক উল্লেখ করেছেন, তাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এবং সম্মানহানির উদ্দেশ্যে সংবাদটি করানো হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘কোলাবরেশনের মাধ্যমে এক বছরে শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সানওয়ে ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার এক বছরে ১৩৫টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। আমি বিশ্বের নামকরা দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করি, বিধায় কোলাবরেশনের মাধ্যমে আমার পক্ষে ১০২টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে বিশ্বের ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় পরপর দুবার স্থান পেয়েছি আমি। সেখানে বাংলাদেশের হাতেগোনা কিছু গবেষক জায়গা পেয়েছেন। এছাড়া আমি বাংলাদেশের সেরা গবেষকদের নিয়ে গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস’র নির্বাচিত অ্যাসোসিয়েট ফেলো। শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা আমার নেশা। অমি গবেষণা নিয়েই থাকতে চাই। শিক্ষকতা জীবনে আমার অনেক ফেলো এবং শিক্ষার্থী ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় একটি মহল আমার গবেষণাকাজ বাধাগ্রস্ত করতে এবং সুনাম ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় সংবাদ প্রকাশ করানো হয়েছে।’

এই শিক্ষক আরও উল্লেখ করেন, ‘এসব গবেষণাপত্র আমি একা প্রস্তুত করিনি। এর কোনোটিতে একক গবেষক হিসেবে কাজও করিনি। গবেষণাপত্র প্রস্তুতে আট থেকে ১০ জন সহযোগী ছিলেন। তাদের কোলাবরেশনের মাধ্যমে এক বছরে ১০২টি গবেষণাপত্র তৈরি ও প্রকাশ করলেও আসলে এগুলো ছয়-সাত বছরের ধারাবাহিক গবেষণার ফসল।’

কিন্তু রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ড. আবু রেজা তৌফিকুল ইসলামের নামেই ১০২টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। কোলাবরেশনের মাধ্যমে গবেষণাপত্র তৈরির দাবি করলেও সেখানে সহযোগী হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করেননি। মালয়েশিয়ার এক গবেষক এক বছরে ১৩৫টি গবেষণাপত্র তৈরির যে উদাহরণ এই শিক্ষক দিয়েছেন, তারও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই গবেষণাপত্রগুলো আমি একা তৈরি করিনি। আমার সঙ্গে অনেক সহযোগী ছিলেন। আর এক বছরে প্রকাশ করলেও এগুলো ছয়-সাত বছরের ধারাবাহিক গবেষণার ফসল।’

তবে তৌফিকুল ইসলামের এই দাবিকে অসম্ভব এবং অনৈতিক বলে উল্লেখ করেছেন প্রখ্যাত রবীন্দ্র-গবেষক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘মৌলিক কোনও গবেষণা এক বছরে ১০২টি এককভাবে হোক কিংবা যৌথভাবে; এটি একেবারেই অসম্ভব। এর দাবি করা অনৈতিক। কোনোভাবেই বিষয়টি মানার মতো নয়। যেখানে একটি নরমাল আর্টিকেল তৈরি করতে চার-পাঁচ দিন লেগে যায়, সেখানে প্রতিটি গবেষণাপত্র তৈরিতে তিন দিন সময় লাগার দাবি একেবারেই অযৌক্তিক।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের কথা উল্লেখ করে ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি ভারতের নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর থিসিস করেছি। এটি করতে আমার চার বছরের বেশি সময় লেগেছিল। ২০০২ সালে রবীন্দ্র-গবেষক হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছি। এখন যিনি বা যারা বছরে ১০২টি গবেষণাপত্র তৈরির দাবি করেন, কিংবা এর পক্ষে যুক্তি দেন; তারা গবেষণা নিয়ে কী ভাবছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। কোনও গবেষক-ই বিশ্বাস করবেন না। এটি শুধু অস্বাভাবিক নয় বরং অনৈতিক। বছরে ১০০টি গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন, এমন গবেষকের নাম আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে কখনও শুনিনি। বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত সংবাদটি দেখে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি।’

ড. তৌফিকুল ইসলামের নামে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ড. এ আর খান নামের একজন গবেষক। অভিযোগে তিনি  উল্লেখ করেন, ড. তৌফিকুল ইসলাম গত এক বছরে চীন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণাপত্র থেকে কপি করে ১০২টি গবেষণাপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিয়েছেন। তিনি অর্থের বিনিময়ে ব্রাজিলের ড. গুইহারমি মালাফাইয়ার নকল করা গবেষণাপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিন দিনে একটি ও বছরে শতাধিক গবেষণাপত্র তৈরি জালিয়াতি ছাড়া কিছুই হতে পারে না।

বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে ড. তৌফিকুলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় লিখিত সেই অভিযোগে। সেইসঙ্গে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও তদন্তের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন- একবছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন!

/এএম/এফএস/
সম্পর্কিত
জিএসটির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, আটক ২ সহস্রাধিক
টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিং: বাংলাদেশ থেকে শীর্ষে বুয়েট, বেসরকারিতে নর্থ সাউথ
সর্বশেষ খবর
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
চাইলেই কি বনের আগুন প্রতিরোধ সম্ভব
চাইলেই কি বনের আগুন প্রতিরোধ সম্ভব
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস