X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গা ও জিএম কাদেরের ভাতিজা আসিফের শোচনীয় পরাজয়ের নেপথ্যে

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:২৭আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২২

রংপুর-১ আসনে বহুল আলোচিত রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা ও দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আপন ভাতিজা আসিফ শাহারিয়ার সেখানকার স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলুর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। এই নিয়ে রংপুরসহ সারা দেশে আলোচনা চলছে।

সরেজমিন ঘুরে, সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ কারণে পরাজিত হয়েছেন রাঙ্গা ও আসিফ। অপরদিকে, এর মধ্য দিয়ে রংপুর-১ আসনে দীর্ঘ ৫২ বছরের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটলো। এবারই প্রথম এলাকার মানুষকে এমপি হিসেবে পেলো এ আসনের মানুষ।

রাঙ্গার পরাজয়ের নেপথ্যে

মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর রওশন এরশাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে মনোনয়ন নিতে ব্যর্থ হন। পরে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও রাঙ্গা হাঁটেন উল্টো পথে। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

রাঙ্গা ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসনে তিনবারের নির্বাচিত এমপি। রাঙ্গার ধারনা ছিল, এই তিন টার্মে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। নিজেকে গঙ্গাচড়ার বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যদিও তার মূল বাড়ি নগরীর গুপ্তপাড়া মহল্লায়। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি গঙ্গাচড়ায় জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেন। শুধু তাই নয় তিনি ভোটারও হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জাপার ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে।

তিনি নতুন করে দলে আসা কয়েকজনকে তার সব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেন। তারা এমপির নামে বিভিন্ন বরাদ্দের চালসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল। চক্রটি তাকে সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

এবারের নির্বাচনি প্রচারণায়ও তার সঙ্গে ছিল চক্রটি। ভোটের দিনের আগ পর্যন্ত তারা ভোটের সম্পৃক্ত করতে পারেনি।

তৃতীয়ত রাঙ্গার সঙ্গে সাধারণ মানুষ কথা বলার জন্য গেলে কয়েকজন সিন্ডিকেট চক্র তাকে ঘিরে রাখার কারণে নির্বাচনের প্রকৃত তথ্য তার কাছে পৌঁছায়নি। এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। রংপুর-১ আসনের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেশিরভাগ কেন্দ্রেই তার এজেন্ট ছিল না। পোলিং এজেন্ট হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের খাবার বা অন্যান্য ব্যয়ের অর্থ সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নেওয়ায় এজেন্টরা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়।

চতুর্থত তিস্তা নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়া উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে ভোটাররা তাকে ভোট দেয়নি। অন্যদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রাঙ্গাকে ভোট দেননি ভোটাররা।

সাধারণ ভোটাররা বলেছেন, যারা রাঙ্গাকে ঘিরে রাখতেন গত ১০ বছরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। তারা কমিশন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে।

পঞ্চম কারণ হচ্ছে স্বাধীনতার পর একবারই শুধু ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে গঙ্গাচড়ার বাসিন্দা এমপি হয়েছিলেন। এরপর সব নির্বাচনে গঙ্গাচড়ার বাইরের কেউ এখানে এমপি হয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান গঙ্গাচড়ার বাসিন্দা হওয়ায় ‘বহিরাগত হঠাও এলাকাবাসীকে ভোট দাও’ স্লোগান তুলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আবেদন তৈরি করতে সক্ষম হন। তাছাড়া রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান দলীয় নেতা হিসেবে পুরো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করেছেন। আর যারা রাঙ্গার পক্ষে ছিলেন আওয়ামী লীগের সেই নেতারা শেষের দিকে তার পক্ষ ত্যাগ করেন।

ফলে একদিকে জাপার ভোট এবং চাটুকারদের কথা বিশ্বাস করা সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে রাঙ্গা ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।

জি এম কাদেরের ভাতিজা আসিফের পরাজয়ের কারণ

রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সমর্থনে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। এর মধ্যে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আপন ভাতিজা আসিফ শাহারিয়ারকে রংপুর-১ আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। আর রংপুর-৩ আসনে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সমর্থনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে। জি এম কাদেরের পক্ষে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রকাশ্যই সমর্থন দিয়ে নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিলেও রংপুর-১ আসনে স্বতন্ত্রের পক্ষে কাজ করে।

এ ছাড়া গঙ্গাচড়ায় জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে একেবারে দুর্বল ছিল। বেশিরভাগ নেতাকর্মী রাঙ্গার পক্ষে থাকায় নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে তেমন কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারেননি তিনি। 
অপরদিকে রংপুর নগরীর পৈতৃক বাসা স্কাই ভিউ থেকে দুপুরের পর নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালানোটাও সাধারণ ভোটাররা ভালোভাবে নেননি। কোনও কেন্দ্রেই জাপার পোলিং এজেন্ট ছিল না। ফলে আসিফ রংপুর-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের মাঝে কোনও স্থান করতে না পারায় মাত্র ১০ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান লাভ করে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন।

/এফআর/
সম্পর্কিত
পরাজয় ঢাকতে অভিযোগ তুলছে বিএনপিনির্বাচনে অংশ নিতে জাপার ওপর চাপ ছিল: জি এম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সর্বশেষ খবর
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু