X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি কোন পথে?

এস এম আববাস
০৭ জুন ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১৫:৪৪

দেশের বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি নিয়ে শিগগিরই সমাধানে যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডিগ্রি (পাস) স্তরের কলেবর বাড়ার কারণে বর্তমানে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ জরুরি বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়। নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। ইতোমধ্যে দেশের বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি (পাস) স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে নীতিমালা সংশোধন করে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করতে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির প্রয়োজন হবে।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা মনে করি তৃতীয় শিক্ষক দরকার। কারণ কোর্সের যে কলেবর ও সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে দুজন শিক্ষকের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারি না।  আমাদের জনপ্রশাসনে যেতে হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে যেতে হয়। আমরা এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে যখন পাঠাই তারপর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তৃতীয় শিক্ষকের পদটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমাদের আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেন-দরবারে যেতে হবে। আশা করছি তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি স্তরের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় দুজন শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিতে কলেজগুলোকে বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় তিন জন শিক্ষকের এমপিও দেওয়ার সুযোগ না থাকায় একজন শিক্ষক (যাকে তৃতীয় শিক্ষক বলে অভিহিত করা হয়) এমপিওবঞ্চিত হন। এসব শিক্ষকদের সময়ে সময়ে এমপিও দিতে বিশেষ আদেশ জারি করা হলে সেসব তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির সুযোগ পান। বাকিরা বিনা বেতনে বছরের পর বছর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।  আর এতে ডিগ্রি স্তরে শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারে না প্রতিষ্ঠানগুলো।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য উদ্যোগ নেয়। বিগত সময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দেওয়ায় নীতিমালা সংশোধন করে তৃতীয় শিক্ষকের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। তবে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরে শিক্ষার মান ধরে রাখা এবং বিভিন্ন ধরনের সফট স্কিল বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।  এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিগ্রি স্তরের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বেসরকারি কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বিশেষ ব্যবস্থায় এমপিওভুক্তির কার্যক্রমও বহাল রাখা হয়েছে। 

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ১ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে দেশের তৃতীয় শিক্ষকদের তথ্য চেয়ে পত্র দেয়। ওই পত্রে জানানো হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রিস্তরে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে গত ১ মার্চ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২০২০ সালে নতুন এমপিওভুক্ত ৫৬টি বেসরকারি কলেজে নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় শিক্ষকদের তথ্য পাঠাতে বলা হয়। এছাড়া এনটিআরসিএ সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে।

তৃতীয় শিক্ষকদের ভোগান্তি

বেসরকারি কলেজে ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্স স্তরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা শর্ত রয়েছে।  ওই শর্ত পূরণ করেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্তি নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত কোনও বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না। এমপিওভুক্তির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশটুকু পান শিক্ষক-কর্মচারীরা।  কিন্তু তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিও না হওয়ারা কারণে মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে ব্যবস্থায় এমপিওভুক্তির জন্য নানা জায়গায় তদবির করে অর্থ খরচ করেন শিক্ষকরা।  তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ব্যবস্থায় এমপিও নির্দেশনা পেতেও কেটে যায় বছরের পর বছর।

১০ শিক্ষকের এমপিও স্থগিতের ভৌতিক আদেশ

২০২০ সালে এমপিওভুক্ত হয় দেশের ৫৬টি কলেজ।  এই কলেজগুলোর বেশিরভাগের তৃতীয় শিক্ষকসহ সব শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করা হয়। কিন্তু ভৌতিক কারণে উত্তরাঞ্চলের চারটি কলেজের ১০ জন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।

এমপিও স্থগিত হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা গ্রিডি কলেজের ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক জেসমিন খাতুন, ইতিহাসের প্রভাষক আনোয়ারুল ইসলাম ও বাংলার প্রভাষক ভিগুরাম চক্রবর্তী।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উদয়ন মহিলা কলেজের ইতিহাসের প্রভাষক মিলন মিয়া ও সমাজকর্মের প্রভাষক মামুনুর রশিদ।

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, ইংরেজির প্রভাষক আনোয়ারুল ইসলাম ও বাংলার প্রভাষক জিহাদ হোসেন। আর গাইবান্ধা সদরের হাজী ওসমান গনি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক নুরহাজান বেগম।

এসব শিক্ষকরা সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে স্থগিত এমপিও আবার চালুর নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছেন।  এর আগে  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরেও তারা এমপিও চালু করার জন্য আবেদন জানান। 

এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকরা অভিযোগে বলেন, আমরা নতুন এমপিওভুক্ত হয়েছিলাম। আমরা তো কোনও অপরাধ করিনি। কিন্তু যারা এমপিওভুক্ত করেছিলেন তারা মন্ত্রণালয়ের কাছে মানবিক বিবেচনাতে হলেও কোনও নির্দেশনা চাইতে পারতেন। কিন্তু তা না করে হঠাৎ আমাদের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। অথচ আমাদের মতো এমপিওভুক্ত অনেক শিক্ষক নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। তাদের এমপিও ঠিক রেখে আমাদের এমপিও বন্ধ করে কেন মানবেতর জীবন-যাপনে ঠেলে দেওয়া হলো?

/এমআর/
সম্পর্কিত
ট্রেনিং নেই তবু মাস্টার ট্রেইনার
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
দারুল ইহসানের বৈধ সনদধারীদের এমপিওতে বাধা নেই
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি