X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাবিতে ‘লস রিকভারি প্ল্যান’

চার মাস বলা হলেও সেমিস্টার শেষ হচ্ছে ছয় মাসে

আবিদ হাসান
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩:৩০আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:৪৩
সুস্থ পৃথিবীতে হঠাৎ হানা দেয় স্মরণকালের সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারি। থমকে যায় পুরো বিশ্ব। থেমে যায় বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। হারায় বহু প্রাণ। প্রায় সব সেক্টরই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল শিক্ষা ব্যবস্থা। ক্রমেই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হলেও আমাদের দেশে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনলাইনে ক্লাস চললেও পদচারণা ছিল না স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের করোনার অন্তত এক ডোজ টিকা নিশ্চিত করার শর্তে ক্রমান্বয়ে খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলগুলো।

এদিকে করোনার ভেতরে সৃষ্ট সেশনজট কাটিয়ে উঠতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ‘লস রিকোভারি প্ল্যান’। এতে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে, আর এক বছরের ইয়ার আট মাসে করার কথা বলা হয়৷ ২০২২ সালের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদসহ সব অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছে। তবে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে আগের মতোই ছয় মাসে শেষ হচ্ছে সেমিস্টার। সোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির চাইতেও কিছুটা পিছিয়ে আছে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।

সোশাল সায়েন্সে ‘লস রিকোভারি প্ল্যান’ অনুসরণ না করায় তৈরি হয়ে ইয়ার জটিলতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ২০২১-২২ সেশনের ক্লাস। কলা অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে আগের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার আগস্টে শেষ হলেও সোশাল সায়েন্সে শেষ হবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। যার ফলে সোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে প্রথম বর্ষে এখন দুই সেশন। আর বিষয়টি নিয়ে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ সোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টি ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টি কর্তৃপক্ষ বলছে, চেষ্টা সত্ত্বেও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক স্বল্পতা ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কারণে এটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০২০-২১ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তির সময় শুনেছি সেমিস্টার চার মাসে হবে। কিন্তু ভর্তির পর দেখি ছয় মাসের রুটিন এবং সেই আলোকেই ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ভর্তি হওয়া অন্য ফ্যাকাল্টির বন্ধুরা ইয়ার শেষ করে ফেলেছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বৈত নীতি কেন? কেন এই দ্বিচারিতা? ২০২১-২২ সেশনের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।  তারা প্রশ্ন করে, ভাই কোন ইয়ার? তখন কী  বলবো? ওরাই তো ফার্স্ট ইয়ারে।  তাহলে আমরা কোন ইয়ারে পড়ি?

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম সাব্বির বলেন, লস রিকোভারি প্ল্যান ফলো না করার কারণে আমরা এখন অবধি এক বছর পিছিয়ে আছি। যেখানে অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার/ইয়ার ফাইনাল দিয়ে নতুন বর্ষ শুরু করছে। এদিকে সেকেন্ড সেমিস্টারের ক্লাস শেষ না হতেই চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। সেকশনভিত্তিক ক্লাস না হওয়ায় ক্লাসরুম সংকটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এক ব্যাচের ক্লাস শেষ না হতেই আরেক ব্যাচ বাইরে অপেক্ষায় থাকে। ইতোপূর্বে কিছু কোর্সের ক্লাস ডিউরেশন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা থাকলেও এখন এক ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এক ঘণ্টায় শিক্ষকরা পাঠ ভালোভাবে শেষ করতে পারেন না। আমরা শিক্ষার্থীরাও বুঝে উঠতে পারি না। এর ওপর নতুন ব্যাচের ক্লাস শুরু হলে ভোগান্তির মাত্রা কিছুটা হলেও বাড়বে। ডিপার্টমেন্ট/ফ্যাকাল্টি চাইলে লস রিকোভারি প্ল্যান অনুযায়ী সেমিস্টার শর্ট করতে পারতো। আমাদেরও সেশনজট নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হতো না।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সালমান শরীফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে চার মাসে সেমিস্টার শেষ করার কথা থাকলেও ডিপার্টমেন্ট ছয় মাসে সেমিস্টার নিচ্ছে। ফলে আমরা বাকি ডিপার্টমেন্ট থেকে ১ সেমিস্টার পিছিয়ে পড়েছি। অন্যদিকে ফাস্ট ইয়ারের দুটি ব্যাচকে একই সঙ্গে ক্লাস করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

সোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির সবচেয়ে ধীরগতির বিভাগ হলো কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডার। ফ্যাকাল্টির অন্য সব বিভাগের চাইতে বেশ কিছু দিন পরে শুরু হয় সব পরীক্ষা। বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ধীরগতির ডিপার্টমেন্ট কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার। এর সব কাজ চলে কচ্ছপ গতিতে। আমাদের সঙ্গে ২০১৫-১৬ সেশনে ভর্তি হওয়া অন্য সব ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা প্রায় এক বছর আগে মাস্টার্স শেষ করেছে। তার মাসখানেক পর রেজাল্ট পেয়ে গেছে। আর  আমরা মাত্র পরীক্ষা দিলাম। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে কার্যক্রম আরও সচল করা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না। আমরা যে বিষয়টা (লস রিকোভারি প্ল্যান) ফলো করছি না তা না। আমরাও সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।  কিন্তু বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক স্বল্পতা ও আনুষঙ্গিক কারণে বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসহ কয়েকটি বিভাগে চার-পাঁচ জন শিক্ষক দিয়ে ডিপার্টমেন্ট চলে। আমরা চেষ্টা করছি 'লস রিকোভারি প্ল্যান' বাস্তবায়ন করার।
/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কোড সামুরাই হ্যাকাথনের দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ, ৪৬ দল নির্বাচিত
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
অ্যাকাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টারপ্ল্যান’
সর্বশেষ খবর
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী