ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেবে ৮৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ৯০ কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি থাকছে ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
সোমবার (১৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট উপস্থাপন করেন।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবারের বাজেটে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। কিছু খাতে সামান্য হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলেও সামগ্রিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়েছে। যেমন, বেতন, ভাতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে পণ্য ও সেবা, পরিবহন, পেনশন, গবেষণা অনুদান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে।
প্রতিবছর জুন মাসের মধ্যে বার্ষিক সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবার তা হচ্ছে না। এমনকি জুলাইয়ের মধ্যেও অধিবেশন আয়োজন সম্ভব হবে কি না, সে নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ‘এ বছর প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সিনেট অধিবেশন নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে থাকা ২৫ জনের মেয়াদ ১৫ জুন শেষ হয়েছে। এছাড়া ৩৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে অনেকেই অতীতে ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর আগে একই কারণে আমরা সিন্ডিকেট সভাও আয়োজন করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিনেটে সরকার পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি থাকার কথা, কিন্তু এখনও সেই মনোনয়ন আসেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নয়, বরং প্রশাসনিক জটিলতার কারণেই এ বছর নির্ধারিত সময়ে অধিবেশন আয়োজন করা যাচ্ছে না।’
গবেষণা খাতে বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামান্য বাড়িয়ে করা হয়েছে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এটি মোট বাজেটের মাত্র ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
গবেষণার বরাদ্দ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্বাধীনতা নেই। ইউজিসি একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়, আমরা সেটির বাইরে যেতে পারি না। অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোরও বিশেষ সুযোগ নেই। যতদিন বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে স্বাধীন না হবে, ততদিন গুণগত মান বৃদ্ধির আশাও সীমিত থাকবে।’
তিনি আরও জানান, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে আমরা গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়টি তুলেছি। তিনি আমাদের প্রস্তাব আকারে তা জমা দিতে বলেছেন।”
২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট বাজেটের ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ তথা ২৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে বেতন বাবদ। এছাড়া ২০ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ ২১৫ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ভাতা বাবদ, পণ্য ও সেবা বাবদ ২৭ দশমিক ৬২ শতাংশ তথা ২৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং পেনশন বাবদ ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ তথা ১৩৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
