X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষার রেফারেন্স বই চেয়ে চেয়ে আর কতদিন?

উদিসা ইসলাম
২৩ এপ্রিল ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ২২:০০

বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক রায়হান (ছদ্মনাম) তার গবেষণার লিটারেচার রিভিউ করতে গিয়ে বারবার আটকে যান একটি জায়গায়। ইন্টারনেটে প্রবন্ধ আছে, কিন্তু মূল টেক্সটে প্রবেশাধিকার নেই। গ্রহণযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ইমেইল ঠিকানা দিলে তবেই তিনি সেটি পড়ার অনুমতি পাবেন। তার বিদেশ থাকা অ্যাকাডেমিশিয়ান বন্ধুদের অনুরোধ করে সেসব টেক্সট ই-মেইলে নিয়ে—তবেই তিনি কাজ এগিয়ে নিতে পারেন। বছরজুড়ে সহায়তা করা প্রবাসী বন্ধুরাও বেশ বিস্ময়ের সঙ্গেই প্রশ্ন করেন—এভাবে চেয়ে চেয়ে আর কতদিন? দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের গবেষকদের জন্য কবে এই সুযোগ করে দেবে? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গবেষণার রেফারেন্স বই ও জার্নাল সহজলভ্য করে তুলতে প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেষ্টা থাকলেও এ ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেহাল দশা।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা ও পিএইচডি গবেষণার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের জন্য দেশ-বিদেশের রেফারেন্স বই ও  জার্নাল নেই। শিক্ষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইলেক্ট্রনিক লাইব্রেরি করা জরুরি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দুই চার পাঁচ দশটা বিখ্যাত রিপোসিটরির সঙ্গে চুক্তি করে হয়তো। সেখান থেকে কিছু এক্সেস ছেলেমেয়েরা পাচ্ছেন। গবেষকরা পাচ্ছেন। কিন্তু এর ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ম্যাটেরিয়ালসে  ঢোকা যায় না। মানে শর্তানুযায়ী ফি বা চাঁদা পুরোটা পরিশোধ করা নেই।  সুতরাং, সমস্যা হলো—টাকা নেই, বিনিয়োগ নেই লাইব্রেরি খাতে। জাস্টোর, হেইনঅনলাইন, লেক্সিস-নেক্সিস, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, স্প্রিঞ্জার, রুটলেজ ইত্যাদি ভার্চুয়াল লাইব্রেরির সদস্য হওয়া খুব ব্যয়সাপেক্ষ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, রিসার্চ করতে যে বইপত্র, জার্নাল, কেস, রেফারেন্স অর্থাৎ যে যে ম্যাটেরিয়ালস লাগবে, তা পাবো কোথায়? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বই আছে, কিন্তু পড়ার মতো বই কম। বিষয়ভিত্তিক বই কম।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ মনে করেন, গবেষণা দিয়ে একটি দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সঠিক লোক দিয়ে, সঠিক পরিবেশ দিয়ে গবেষণার সুফল আদায় করা। নিজ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার মাসের জন্য একটি ভিজিটিং ফেলোশিপ নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে দিয়ে তারা এই চার মাস গবেষণা করিয়ে একটি জার্নাল পেপার লিখিয়ে নিয়েছে। পৃথিবীর এমন কোনও বড় লাইব্রেরি নেই, যেখানে ওদের অভিগম্যতা নেই। আমার যত খরচ লেগেছে সবটাই তারা দিয়েছে। আমি নিউজিল্যান্ডে বসে ওদের সরকারের টাকায় চার বছর ধরে বাংলাদেশের ভূমি আইনের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি নিয়েছি।’

ড. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘ধরুন, বাংলাদেশের আশির দশকের কোনও বই দেশেই পাচ্ছি না, তো আমার ইউনিভার্সিটিকে বলার পর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আমেরিকার ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে সেই বই এনে দিলো। আপনার মন খারাপ, আপনাকে ফ্রি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট দেখাবে।  তো এই হলো সিরিয়াসনেস, বিনিয়োগ আর মোটিভেশন।’

এ ক্ষেত্রে করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত হাজার হাজার বিষয়ভিত্তিক বই কিনে দেশে কয়েকটি শ্রেষ্ঠ জাতীয় লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে। সেগুলোর ইলেক্ট্রনিক আর্কাইভিং করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেই লাইব্রেরির সঙ্গে সংযোগ করাতে হবে। প্রত্যেক জাতীয় লাইব্রেরিকে দেশের এবং বিদেশের লাইব্রেরির সঙ্গে লিয়াজোঁ করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে বই ইন্টার-লোন সুবিধা পাওয়া যায়। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে, যারা লাইব্রেরি সায়েন্সে পড়াশোনা করা, তাদের দিয়ে। সাধারণ দক্ষতায় হবে না।  প্রয়োজনে বিদেশের সাহায্য নিতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান মনে করেন, গবেষণার গুরুত্ব বুঝার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বে অ্যাকাডেমিশিয়ানদের সুযোগ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষকদের উপযোগী লাইব্রেরি ফ্যাসিলিটি আমরা তৈরি করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বই ইস্যু করতে পারে না। দেশের লাইব্রেরিগুলোরই পারস্পরিক লেনদেন নেই, বিদেশের লাইব্রেরির অ্যাকসেস তো আরও পরের কথা। অবশ্যই এই সুযোগ শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে করে দিতে হবে। তবে এটি তখনই সম্ভব, যখন দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরা গবেষণার গুরুত্ব নিজেরা বুঝতে পারবেন।’

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্ট (ইউল্যাব)-এর মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান করণীয় উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন রিসোর্স বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ডাটাবেজ সাবস্ক্রাইব করতে হবে। এগুলো যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য। কিন্তু জ্ঞানও তো সস্তা জিনিস না। যেকোনও ভালো বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হলো ভালো লাইব্রেরি। আর বর্তমান সময়ে ভালো লাইব্রেরি মানেই ভালো অনলাইন রিসোর্স। ইউল্যাবসহ প্রথম সারির কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই চেষ্টা আছে। কিন্তু আরও দরকার। নর্থসাউথ, ইউল্যাব, আইইউবি, ইউআইইউ আর ব্র্যাক ছাড়া বাকিদের অত রিসোর্স নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একেবারে বেহাল অবস্থা।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসগণগ্রন্থাগারে গণফাটল, পাঠকের নিত্যসঙ্গী আতঙ্ক
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের ৬ বছর, কী প্রভাব পড়েছে সমাজে
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস আজ, থাকছে নানা কর্মসূচি
সর্বশেষ খবর
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
দিনাজপুরে ইউপি নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চাচা নিহত
দিনাজপুরে ইউপি নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চাচা নিহত
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ