X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাবির কাউন্সেলিং সেন্টার

আবিদ হাসান
১৯ মার্চ ২০২৪, ২০:২৪আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ২০:২৪

প্রতিটি মানুষের সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য মানসিক সুস্থতা। শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য একজন মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। জীবনে চলার পথে ব্যক্তি কীভাবে বিভিন্ন চাপ সামলে নেবেন, অন্যের সঙ্গে মিশবেন এবং সুস্থ জীবনযাপন করবেন, অর্থাৎ জীবনের সব পর্যায়েই সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের কোনও বিকল্প নেই।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৩ সালে চালু করে ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শ দফতর। এই কেন্দ্রের অধীনে শিক্ষার্থীদের নানাবিধ মানসিক-সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।

কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যমতে, গত চার বছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ সেশন) সেবা নিয়েছেন ১৩৪০ জন শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরা মোট ৫ হাজার ২২২টি সেশনে অংশ নিয়েছেন।

ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শ কেন্দ্র জানায়,  ২০১৯-২০ সেশনে ৪২০ জন শিক্ষার্থী ১৭৩০টি সেশনের মাধ্যমে সেবা নেন, ২০২০-২১ করোনাকালে অনলাইনে সেবা গ্রহণ করেন ৩৬ জন, ২০২১-২২ সেশনে ৪০৩ জন শিক্ষার্থী ১৭৬০টি সেশনে সেবা নেন এবং ২০২২-২৩ বছরে ৪৮১ জন শিক্ষার্থী ১৭৩২টি সেশনে অংশগ্রহণ করে সেবা নিয়েছেন।

যেসব সেবা দেওয়া হয়

শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়ার জন্য ১১টি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দফতরটি। এগুলো হলো—১. আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের পরিচিতি অনুষ্ঠান, ২. ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি’ শীর্ষক পুস্তিকা মুদ্রণ ও বিতরণ। এই পুস্তিকায় যাবতীয় তথ্য সবিস্তারে  লেখা থাকে। কোথায় গেলে শিক্ষার্থীরা কোন সেবা পাবেন, আইনি সহায়তার জন্য কী করতে হবে ইত্যাদি।

৩. প্রশিক্ষিত কাউন্সেলরদের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়। মূলত এটিই কেন্দ্রের প্রধান কাজ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী- উপদেষ্টারা রেফার করলে বা শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় এলে তাদের সেবা দেওয়া হয়।

৪. শিক্ষার খরচ মেটাতে  ছাত্রছাত্রীদের খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান। ৫. বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস এবং বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উদযাপন। ৬. ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন। ৭. ডিউক অব এডিনবার্গস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম।

৮. দৃষ্টি, শ্রবণ ও অন্যান্য শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জসহ ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা। ৯. ছাত্র-উপদেষ্টা নিয়োগ। ১০. কাউন্সেলর বা মনোবিজ্ঞানীর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। ১১. শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা।

যেভাবে সেবা দেওয়া হয়

কাউন্সেলররা ক্লায়েন্টদের ব্যক্তিগত, আবেগী, সামাজিক বৃত্তিমূলক ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন। এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টরা চাওয়া-পাওয়া ও তার ইতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হন বলে জানা যায়। সেবা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী—তার চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণের পরিবর্তন আনতে সহায়তা প্রদান করা হয়। ক্লায়েন্টের বিভিন্ন দক্ষতা প্রতিভা চিহ্নিত করে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কাউন্সেলিং সেবার মাধ্যমে সিদ্ধান্তহীনতা, হতাশা, বিষণ্নতা ও নানারকম ভীতি মোকাবিলা করার জন্য শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা হয়।

বিভিন্ন নামে এসব সেবা প্রদান করা হয়। যেমন- ভয়ভীতি মোকাবিলা করে সবার সঙ্গে মিশতে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য “সামাজিক দক্ষতা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট’, রাগের নেতিবাচক দিক রাগ নিয়ন্ত্রণ এবং রাগ যথাযথ বহিঃপ্রকাশের কৌশল নিয়ে ‘রাগ নিয়ন্ত্রণ’, ইভটিজিং প্রতিরোধে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা এবং যথাসময়ে না বলতে পারার কৌশল ‘এসারটিভনেস”।

কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ও কাউন্সেলর ফয়জুন্নেসা জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজারদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা করা হয়। এর মাধ্যমে ছাত্র উপদেষ্টারাই শিক্ষার্থীদের সমস্যা শুনে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য না করা, তাদের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা, প্রয়োজন অনুসারে পরামর্শ দফতরে রেফার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন হলে বিভিন্ন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সভা সেমিনার করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মানসিক সেবা সেন্টার। মেয়েদের জন্য পাঁচটি হলে- রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল, সুফিয়া কামাল হলে সেন্টার থাকলেও ছেলেদের ১৩টি হলের মধ্যে শুধু বিজয় একাত্তর ও অমর একুশে হলে এই সেন্টার রয়েছে।

যেভাবে সেবার প্রচার চালানো হয়

প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর কেন্দ্রীয়ভাবে একটি অরিয়েন্টেশন আয়োজন করা হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত বিষয়ক একটি পুস্তিকা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা কোথায় গেলে কোন সমস্যার সমাধান পাবেন, সে বিষয়ে এই পুস্তিকায় সবিস্তারে লেখা থাকে। এছাড়া বিভাগীয় ওরিয়েন্টেশনগুলোতে কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার করা হয়।

শিক্ষার্থীরা কী ধরনের সমস্যা আসেন

নির্দেশনা ও পরামর্শ দফতরের (কেন্দ্রের) তথ্যমতে, শিক্ষার্থীরা প্রধানত প্রেমঘটিত সমস্যা, অর্থাৎ প্রেমে বিচ্ছেদের পর সৃষ্ট সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সেবা নিতে আসেন। এছাড়া রয়েছে পারিবারিক সমস্যা, বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর অভিযোজন সমস্যা, ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়।

সেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

তথ্য বলছে, বছরে গড়ে প্রায় সাড়ে চারশ’ শিক্ষার্থী সেবা নেন। তবে শিক্ষার্থীরা এই কেন্দ্রের সেবা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন—এখানকার সেবার মান খুবই ভালো। আবার কেউ বলেছেন, দফতরের পরামর্শ মতো সেবা নিয়েও তেমন একটা উপকার পাননি।

২০১৯-২০ সেশনে সেবা গ্রহণ করা এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিনিধির। নাম প্রকাশ না করে তিনি জানান, ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ছাত্রনির্দেশনা পরামর্শ দফতরে কাউন্সেলরের কাছে যান তিনি। কাউন্সেলর খুব মনোযোগ দিয়ে তার সমস্যাগুলো শোনেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। তার কাছে এখানকার সেবার মান ভালোই লেগেছে। এই শিক্ষার্থী আরও জানান, ধর্মীয় বিষয়ে তার কিছু সমস্যা ছিল, যে কারণে তিনি আর পরে এখানকার সেবা নেননি।

২০১৭-১৮ সেশনের এক শিক্ষার্থী ২০২৩ সালে ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দফতরের কাউন্সেলিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জানান, কেন্দ্রের কাউন্সেলর প্রথমে তার সমস্যাগুলো শোনেন। সপ্তাহখানেক পর্যবেক্ষণে রাখেন। এরপর চার সপ্তাহ ধরে সেবা দেন। এই শিক্ষার্থীর দাবি, কেন্দ্রের পরামর্শগুলো মেনে চলা হলেও তার মানসিক স্বাস্থ্যের কোনও উন্নতি হয়নি। এখানকার সেবাও ভালো লাগেনি বলে তিনি জানান।

২০২০-২১ সেশনের এক শিক্ষার্থী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা পরামর্শ দফতরের সেবার মান খুবই ভালো। কাউন্সেলররা ক্লায়েন্টের সমস্যাগুলো খুব যত্নের সঙ্গে শুনে থাকেন। কোনও বিষয়ে তারা নেতিবাচক মন্তব্য করেন না। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সেশনে সমস্যা শোনেন এবং পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলো অল্প অল্প করে দেন। একসঙ্গে দেন না, যাতে সেবাগ্রহীতার ওপরে বাড়তি চাপ না পড়ে। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে এখানকার সেবা নিয়ে আমার উপকারই হয়েছে। বর্তমানে আমি মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
কোড সামুরাই হ্যাকাথনের দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ, ৪৬ দল নির্বাচিত
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
সর্বশেষ খবর
তীব্র তাপদাহে মেয়েদের স্বস্তির সংবাদ দিলেন সালাউদ্দিন
তীব্র তাপদাহে মেয়েদের স্বস্তির সংবাদ দিলেন সালাউদ্দিন
বেসিস নির্বাচন: দেশের সফটওয়্যার খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চান ইকবাল আহমেদ
বেসিস নির্বাচন: দেশের সফটওয়্যার খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চান ইকবাল আহমেদ
টি স্পোর্টসে বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজ
টি স্পোর্টসে বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজ
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবসায়িক সম্মেলন
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবসায়িক সম্মেলন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই