নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বাস টার্মিনালের বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে আটক বাংলাদেশি আকায়েদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় চারজন আহত হলেও সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের ঘটনাটিকে জঙ্গি হামলা মনে করছে তারা। নিউ ইয়র্ক পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৭ বছর বয়সী আকায়েদের জাতীয়তা নিশ্চিত করেনি। তবে একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এমএসএনবিসি দাবি করেছে, আটককৃত আকায়েদ বাংলাদেশি এবং জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত।
নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নেইল দাবি করেছেন, ২৭ বছর বয়সী সন্দেহভাজনের নাম আকায়েদ উল্লাহ। তার শরীর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জখম হয়েছে। এখন তিনি হাসপাতালে রয়েছেন।পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন আকায়েদ উল্লাহর শরীরে একটি পাইপ বোমা বাঁধা ছিল।মেট্রো স্টেশনে থাকা অবস্থায় কোথাও আঘাত হানার আগেই বোমাটি তার শরীরেই বিস্ফোরিত হয়। এর আগে এক টুইট বার্তায় পুলিশ জানায়, আহতদের মধ্য থেকেই একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটক সন্দেহভাজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় বেলিভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছে। তবে এদের কারও জীবনশঙ্কা নেই। শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিস্ফোরণের ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, ‘ ঘটনাস্থলের প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যায়, লোকটি উন্নতমানের কম প্রযুক্তির বিস্ফোরক ডিভাইস শরীরের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এটার বিস্ফোরণ ঘটায়।’ এ ঘটনায় নতুন করে আর কেউ আহত হয়নি জানিয়ে পুলিশ সবাইকে এলাকাটি এড়িয়ে চলতে বলেছে।
সাবেক কমিশনার বিল ব্রাটন এমএসএনবিসি-কে বলেন, লোকটি আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত । নিউইয়র্ক পোস্টে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলা হয়, সম্ভবত পরিকল্পিত হামলার উদ্দেশ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি তার জ্যাকেটের ডান পাশে বোমাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে এটি বিস্ফোরিত হয়।
পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম টার্মিনাল। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে টাইমস স্কয়ারের কাছে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে নিজেদের দাফতরিক টুইটার পাতায় একটি টুইট করেছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ। এতে বলা হয়, ‘নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ ম্যানহাটনের ৮ নং এভিনিউর ৪২ নং সড়কে একটি বিস্ফোরণের খবর পেয়েছে এবং ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ, সি ও ই সারিগুলো ফাঁকা করা হচ্ছে।’ বিস্ফোরণের পরপরই নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন রুটের যান চলাচল এলোমেলো হয়ে যায়। মেট্রোপলিটন পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ ঘটনার পর থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন ৪২তম রাস্তাটি এড়িয়ে চলছে।
পুলিশ কমিশনার জন ও’নেইল বলেন, ‘ আমাদের জীবন পাতাল রেলের চারপাশেই ঘোরে। সবাই নিউ ইয়র্ককে পছন্দ করে কারণ আমরা বিশ্বের বাতিঘর । আমরা দেখিয়েছি, বিভিন্ন পটভূমির ও বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের সমাজও হতে পারে। সন্ত্রাসীরা একে খাটো করে দেখতে চায়। তারা নিউ ইয়র্কে হামলা চালানোর জন্য ছটফট করে।’
নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের সাবেক কমিশনার বিল ব্রাটন এমএসএনবিসি-কে বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী আকায়েদ আইএসের হয়ে ওই বোমা বহন করছিল। তাই এটা অবশ্যই সন্ত্রাসী হামলা, অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক।’
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র সারাহ সান্ডার্স। ঘটনাটি তদন্তে এফবিআইও কাজ শুরু করেছে। নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কোউমো বলেন, ‘এ ধরনের চেষ্টা চালিয়ে নিউ ইয়র্কবাসীর কোনও ক্ষতি করা যাবে না। স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার চায় এমন অনেকেই আমাদের লক্ষ্যবস্তু করতে চায়। চলুন কাজে ফিরে যাই। তাদের আমরা বিরক্ত করার সুযোগ দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় আমরা এমন অনেকেরই লক্ষ্যবস্তু। আমরা বুঝি, আমাদের উপকূলে স্ট্যাচু অব লিবার্টি আছে আর এটা আমাদের আন্তর্জাতিক লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে।