২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত ৩২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করেছে— যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত বাজারভিত্তিক পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন স্থবিরতার পর বৈশ্বিক চাহিদা কিছুটা বাড়া, বাজার বৈচিত্র্য এবং কৌশলগত রফতানি উদ্যোগের ফলেই এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।
ইইউ শীর্ষে, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, তৈরি পোশাক রফতানিতে সবচেয়ে বড় বাজার হয়ে উঠেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউতে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট আরএমজি রফতানির প্রায় ৫০ শতাংশ (৪৯.৭৮ শতাংশ)।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৬ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক— মোট রফতানির ১৯.০৯ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার এবং কানাডায় ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার।
বাজারভিত্তিক প্রবৃদ্ধির চিত্র
ইইউ’র বাজারে রফতানি বেড়েছে ১০.৫৫ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি ১৫.৭৫ শতাংশ, কানাডায় বেড়েছে ১৩.৮৬ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩.৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ইইউর অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি, যেখানে রফতানি আয় ৪ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্পেন (২.৮৫ বিলিয়ন ডলার) ও তৃতীয় ফ্রান্স (১.৭৮ বিলিয়ন ডলার)। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন, যেখানে যথাক্রমে ২২.৯০ শতাংশ ও ১৯.৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
অপ্রচলিত বাজারে ৬.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে ‘নন-ট্র্যাডিশনাল’ বা অপ্রচলিত বাজারগুলোর অবদানও বাড়ছে। এই খাতে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রফতানির ১৬.৭৯ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.২৫ শতাংশ। এই বাজারে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। ভারতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৮৫ শতাংশ, জাপানে বেড়েছে ১০.৪১ শতাংশ।
নিটওয়্যার ও ওভেন, দুই খাতেই অগ্রগতি
আরএমজির দুটি প্রধান উপখাতেই প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। নিটওয়্যার রফতানি বেড়েছে ১০.৭৪ শতাংশ ওভেন পণ্যে প্রবৃদ্ধি ৯.১৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক বাণিজ্য দ্বন্দ্ব এবং সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা কাজে লাগাতে অপ্রচলিত বাজারের দিকে আরও কৌশলগত দৃষ্টি প্রয়োজন।
কী বলছেন শিল্প উদ্যোক্তারা
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এই প্রবৃদ্ধি আমাদের সক্ষমতা ও সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটগুলোতে কৌশলগত বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ তার মতে, প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন বাজারে প্রবেশের পাশাপাশি টেকসই উৎপাদন, মজুরি কাঠামো এবং প্রযুক্তির উন্নয়নেও গুরুত্ব দিতে হবে।