রিকশা চালান শিবচরণ। এমনিতেই খুবই টানাটানির সংসার। করোনাভাইরাস সংকটে তার আয় আরও অনেক কমে গেছে। এই অবস্থায় স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন তার ৩৬ বছর বয়সী স্ত্রী ববিতা। বিল হয় মোট ৩৫ হাজার টাকা। এত টাকা দেয়ার সাধ্য শিবচরণের নেই। তার দাবি, টাকা মেটাতে না পেরে হাসপাতালের প্রস্তাব অনুযায়ী এক লাখ টাকায় সাত দিনের ছেলেকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলায়। আর হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিল দিতে না পারায় সদ্যজাতকে ছিনিয়ে নিয়েছেন হাসপাতালের মালিক তথা চিকিৎসক। অভিযোগ পেয়ে হাসপাতাল সিল করল স্বাস্থ্য বিভাগ। খোঁজ নেই নবজাতকের।
দলিত দম্পতি শিবচরণ-ববিতার অভিযোগের পর এ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, আগ্রার জেলা প্রশাসক প্রভু এন সিং বলেছেন, এটা রীতিমতো গুরুতর ঘটনা। তদন্ত হবে। দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে। কাউন্সিলার হরি মোহন বলেছেন, তিনিও শুনেছেন, বিল দিতে না পেরে ছেলেকে বিক্রি করতে হয়েছে।
শিবচরণ ও ববিতার পাঁচ সন্তান। তারা শম্ভু নগরে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। রিকশা চালিয়ে দিনে একশ’ টাকার বেশি পান না। তার ১৮ বছর বয়সী বড় ছেলে একটি জুতা তৈরির কারখানায় কাজ করত। লকডাউনের পর সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কোনও সরকারি কর্মী তাদের কাছে যাননি। কোথায় গেলে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাওয়া যায়, সেটাও কেউ তাদের বলেনি। শিবচরণ টিওআকে বলেছেন, তারা সরকারি বিমা বা আয়ুষ্মান ভারতে নথিভুক্তও নয়।
শিবচরণ বলেছেন, ববিতার গর্ভযন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর তারা হাসপাতালে যান। সিজারিয়ান হয়। ২৫ আগস্ট তার স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার কথা ছিল, তাই সকালেই সেখানে পৌঁছে যান শিবচরণ। তবে হাসপাতাল বিপুল টাকার বিল ধরিয়ে দিলে তিনি চোখে অন্ধকার দেখেন। তাদের কাছে বিল দেয়ার টাকা ছিল না। তারা কেউ লেখাপড়া জানেন না। তাই যেখানে সই করতে বলা হয়েছে, সেখানে তারা টিপছাপ দিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল তাদের কোনও বিল বা কাগজ দেয়নি।
শিবচরণের দাবি, হাসপাতালের মালিক ডাক্তারকে অনেক অনুনয়-সহ তিনি জানান, তার কাছে মাত্র ৫০০ টাকা রয়েছে। তার কথায় অবশ্য বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রকাশ করেননি ওই চিকিৎসক। অনেক তর্কাতর্কির পরে তিনি জানান, বিল না দিতে পারার জন্য নবজাতক শিশুকে ছাড়া হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে, কেউ জোর করেনি। শিবচরণই বাচ্চাকে স্বেচ্ছায় ফেলে রেখে চলে গেছে। এ নিয়ে হাসপাতাল এবং শিবচরণ ও ববিতার মধ্যে লিখিত চুক্তি হয়েছে।
তবে শিবচরণ-ববিতা এখন ছেলে ফেরত চান। অসহায় দম্পতি এরপর সমাজসেবী নরেশ পারশের কাছে গিয়ে সবিস্তারে ঘটনা সম্পর্কে জানান। ববিতার দাবি, ওই চিকিৎসক তার সদ্যোজাত সন্তানকে আত্মীয়ের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।