যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভারত সফরের সময় কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার অনন্তনাগ জেলার পাহালগামের বিসারান ভ্যালিতে একদল সন্ত্রাসী পর্যটকদের ওপর গুলি চালালে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের সময়ও একইভাবে কাশ্মীরে বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল।
২০০০ সালের ২০ মার্চ, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের ভারত আসার কয়েক ঘণ্টা আগে অনন্তনাগের চিত্তিসিংহপোরা গ্রামে সন্ত্রাসীরা ৩৫ শিখ পুরুষকে গুলি করে হত্যা করেছিল। ওই হামলা ছিল কাশ্মীরে শিখ সম্প্রদায়ের ওপর প্রথম বড় আক্রমণ। এবারও ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের সফরকালে একই জেলায় হামলা ঘটল।
২০০০ সালের চিত্তিসিংপোরা হত্যাযজ্ঞ
মার্চ ২০ তারিখের সন্ধ্যায়, অনন্তনাগ জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চিত্তিসিংপোরা-তে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি হামলা চালায়। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাকের মতো পোশাক পরা ছিল এবং সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধানত শিখ অধ্যুষিত এই গ্রামে প্রবেশ করে। তারা পাহাড়ি প্রধান সড়কগুলো এড়িয়ে, অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে নীরবে ঢুকে পড়ে আপেল বাগান ও ধানক্ষেতের ফাঁক গলে।
সে সময় গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামবাসীরা মোমবাতি ও হারিকেনের আলোয় রাত পার করছিলেন, অনেকেই ট্রানজিস্টারে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সফরসংক্রান্ত খবর শুনছিলেন। আসন্ন বিপদের খবর না জেনে, কেউ কেউ তখন মাত্র স্থানীয় গুরুদ্বারায় সন্ধ্যার প্রার্থনা শেষে ফিরেছেন।
হামলকারীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গুরুদ্বারার আশপাশ, দোকান ও বাড়ির সামনে থেকে শিখ পুরুষদের জড়ো করতে শুরু করে। মোট ৩৭ জনকে ধরে আনা হয়। তাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন এমন গ্রামবাসী, যারা গণ্ডগোল দেখে হারিকেন হাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন—সম্ভবত সাহায্যের উদ্দেশ্যে।
সব পুরুষকে একত্র করে কাছ থেকে গুলি করা হয়। ৩৫ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন, বেঁচে যান মাত্র দুইজন।
কাশ্মীরে এক দশক ধরে চলা বিদ্রোহের মধ্যে শিখ জনগোষ্ঠীর ওপর এটিই ছিল প্রথম বৃহৎ আক্রমণ। এর আগে শিখরা মূলত এই সংঘাতের বাইরেই ছিলেন।
২০২৫ সালের পাহালগামের হামলা
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ২টার দিকে চার থেকে ছয়জন সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরে পাহালগামের বিসারান মেডো এলাকায় হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সন্ত্রাসীরা প্রথমে পুলিশ সদস্য সেজে পর্যটকদের নাম জিজ্ঞাসা করে। এরপর তারা হিন্দু ও শিখ পর্যটকদের আলাদা করে কালিমা পাঠ করতে বলে। যারা পাঠ করতে পারেনি, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।
একজন আহত নারীকে সন্ত্রাসীরা বলেছে, তোমাকে আমরা বাঁচিয়ে দিলাম, যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই হামলার কথা বলতে পারো। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার এক এজেন্ট।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স এ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অন্যান্য নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
হামলার ঘটনায় কাশ্মীরে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক তল্লাশি চলছে।
দুই দশক আগে ক্লিনটনের সফরকালে হামলার পর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেছিল। এবারের হামলাও দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিকরা।
সূত্র: এনডিটিভি