বছরের ‘সবচেয়ে ভয়াবহ’ সামুদ্রিক বিপর্যয়ের ঘটনায় মে মাসের শুরুতে মিয়ানমার উপকূলে দুটি পৃথক নৌকাডুবিতে অন্তত ৪২৭ রোহিঙ্গার মৃত্যুর আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। সংস্থাটি বলেছে, চরম মানবিক সংকট এবং তহবিল সংকটের কারণে রোহিঙ্গারা জীবনবাজি রেখে সাগরপথে পাড়ি দিচ্ছেন। শুক্রবার (২৩ মে) এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছে জেনেভাভিত্তিক ইউএনএইচসিআর।
জাতিসংঘ সংস্থাটি বলছে, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক জলপথে পরিণত হয়েছে। এই পথে যাত্রাকারীদের প্রতি পাঁচজনের একজন নিখোঁজ বা মৃত হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিস্তারিত এখনও নিশ্চিত হওয়া না গেলেও প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, দুটি নৌকায় মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। প্রথম নৌকায় ২৬৭ জন ছিলেন, যাদের অধিকাংশ কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে এবং বাকিরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু করেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নৌকাটি ৯ মে ডুবে যায়। মাত্র ৬৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
দ্বিতীয় নৌকায় ২৪৭ জন ছিলেন এবং এটি ১০ মে ডুবে যায়। মাত্র ২১ জন বেঁচে যান। এছাড়া, ১৪ মে মিয়ানমার ছেড়ে যাত্রারত আরও একটি নৌকায় ১৮৮ জন ছিলেন বলে জানা গেছে। এটি পথেই আটকানো হয়েছে।
জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক হাই কিয়ুং জুন বলেন, চলমান মানবিক সংকট এবং অনুদান হ্রাস রোহিঙ্গাদের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। মানুষ নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আশায় এমন বিপজ্জনক পথে ঝুঁকছে। এই ট্র্যাজেডি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আশ্রয়প্রার্থী দেশগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা এখন অত্যন্ত জরুরি।
এদিকে, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রবল ঢেউ ও ঝড়ের মধ্যে এই নৌযাত্রা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ইউএনএইচসিআর বলছে, সমুদ্রে বিপদে পড়া মানুষকে বাঁচানো আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের আওতায় একটি মানবিক দায়িত্ব।
এজন্য সংস্থাটি আঞ্চলিক দেশগুলোকে আরও সক্রিয় হয়ে এমন ট্র্যাজেডি রোধে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি, যেসব দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ফিরে না আসা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যর্পণ সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মতে, ফলে আশ্রয়প্রাপ্তদের বাঁচিয়ে রাখতে এবং স্বাভাবিক জীবনের জন্য সহায়তা জোরদারে আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত রাখা জরুরি।
২০২৫ সালে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুতদের সহায়তায় ৩৮৩.১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এর মাত্র ৩০ শতাংশ তহবিল সংগৃহীত হয়েছে।