রাশিয়া ও ইউক্রেন একসঙ্গে ৩৯০ জন করে বন্দি বিনিময় করেছে। যা যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ার সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিটি পক্ষ ২৭০ জন সেনা ও ১২০ জন বেসামরিক নাগরিককে মুক্ত করেছে। শনিবার ও রবিবার আরও বন্দিমুক্তির কথা রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবার মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিল দুই পক্ষ। যদিও যুদ্ধবিরতিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি, বন্দিবিনিময়ের এই চুক্তিই ছিল একমাত্র কার্যকর অগ্রগতি। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ মোট ১ হাজার জন করে বন্দিমুক্তি দেবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত রুশ নাগরিকদের বর্তমানে ইউক্রেনের প্রতিবেশী বেলারুশে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের মানসিক ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে, এরপর তাদের রাশিয়ায় ফেরত নেওয়া হবে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে কিছু বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন, যারা কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় অনুপ্রবেশের সময় আটক হয়েছিলেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মুক্তিপ্রাপ্তদের ছবি প্রকাশ করেছেন। ছবিতে দেখা গেছে, মাথা কামানো বন্দিরা উচ্ছ্বসিতভাবে ইউক্রেনের জাতীয় পতাকায় আবৃত হয়ে স্বাধীনতা উদ্যাপন করছেন।
ইউক্রেনীয় টেলিভিশন এসপ্রেসো টিভি একটি ভিডিও প্রচার করেছে, যাতে একজন বন্দির স্ত্রী কিয়েভের স্বাধীনতা স্কয়ারে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পতাকায় মোড়ানো সেই নারী জানান, তিনি ২০২২ সাল থেকে স্বামীর মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুখবর পান।
ভিক্টোরিয়া নামের ওই নারী বলেন, আমরা অপেক্ষা করেছি, আশা রেখেছি এবং লড়াই করেছি।
ইতোমধ্যে চেরনিহিভ অঞ্চলে সাংবাদিকদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যেখান থেকে মুক্ত বন্দিদের নিয়ে আসা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই পক্ষকে আলোচনায় বসাতে চাপ দিয়ে আসছিলেন। বন্দিবিনিময় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, উভয় পক্ষকে অভিনন্দন। এটি কিছু বড় কিছুর সূচনা হতে পারে???
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতে উভয় পক্ষের কয়েক লাখ সেনা হতাহত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও নির্ভরযোগ্য তথ্য উভয় পক্ষই প্রকাশ করেনি। ইউক্রেনের বহু বেসামরিক নাগরিকও রাশিয়ার হামলায় নিহত হয়েছেন।
ইউক্রেন তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে রাশিয়া বলছে, নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা হামলা বন্ধ করবে না। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য এসব শর্তকে ‘অসম্ভব দাবি’ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, শান্তি প্রক্রিয়া আটকে গেলে তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। তবে সোমবার পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পর আপাতত কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
রাশিয়া বলছে, যুদ্ধ চলাকালেই তারা আলোচনায় আগ্রহী। তবে আলোচনার বিষয় হতে হবে যুদ্ধের ‘মূল কারণ’। যার মধ্যে ইউক্রেনকে আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া, সামরিকভাবে নিরস্ত্রীকরণ এবং পশ্চিমা সামরিক জোট থেকে দূরে রাখা অন্তর্ভুক্ত। কিয়েভ বলেছে, এই শর্তগুলো আত্মসমর্পণের শামিল এবং এটি ভবিষ্যতে রুশ আগ্রাসনের সামনে ইউক্রেনকে অসহায় করে তুলবে।
শুক্রবার রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের রাকিভকা নামের একটি গ্রাম দখল করেছে।
এদিকে ওডেসা অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ কিপার জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে রাশিয়া বন্দর অবকাঠামোতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে একজন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন।