X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা নীতির ফলে এক তৃতীয়াংশ কমবে উইঘুর মুসলিমদের সংখ্যা

বিদেশ ডেস্ক
০৮ জুন ২০২১, ১১:৩৭আপডেট : ০৮ জুন ২০২১, ১১:৩৭

চীনের নিপীড়নমূলক নীতির ফলে দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের জনসংখ্যা আগামী ২০ বছরে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এমনটাই উঠে এসেছে জার্মানির একজন গবেষকের সাম্প্রতিক গবেষণায়।

এতে হয়েছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চীন সরকার যে আঞ্চলিক নীতি গ্রহণ করেছে জিনজিয়াং-এ বসবাসরত সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা আগামী ২০ বছরে ২৬ লাখ থেকে ৪৫ লাখ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। প্রদেশটিতে জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পশ্চিমা দেশ চীনকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বেইজিং বলছে, জন্মহার কমে যাবার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে।

জিনজিয়াং প্রদেশে চীন সরকারের দমন-পীড়নের কারণে উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জনসংখ্যার ওপর প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন জার্মানির গবেষক অ্যাডরিন জেনজ। উইঘুরদের ব্যাপারে বেইজিং-এর নতুন নীতির আগে গবেষকরা ধারণা ছিল, ২০৪০ সালের মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের কারণে এ সংখ্যা ৮৬ লাখ থেকে এক কোটি পাঁচ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

জার্মান গবেষক জেনজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, উইঘুর মুসলিমদের বিষয়ে চীন সরকারের যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে সেটি উঠে এসেছে এই গবেষণায়। জেনজ তার রিপোর্টে বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ সেখানকার চারটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর জবরদস্তিমূলক জন্মনিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করে। এজন্য সন্তান জন্মদানে সক্ষম ৮০ শতাংশ নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য নানা ধরণের সার্জারি এবং বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, জিনজিয়াং প্রদেশে চীন প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের আটকে রেখেছে। এর অন্যতম উদ্দেশ্যে হচ্ছে তাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা। খবরে বলা হচ্ছে, চীনের মূলধারার হান জনগোষ্ঠিকে জিনজিয়াং-এর কিছু এলাকায় বসবাসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে। জার্মান গবেষক জেনজ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চীন সরকারের নতুন নীতির কারণে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জনসংখ্যা কমলেও হান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়বে।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে জন্মহার প্রায় ৪৯ শতাংশ কমেছে। গত সপ্তাহে বেইজিং ঘোষণা করেছে যে, এখন থেকে দম্পতিরা তিনটি পর্যন্ত সন্তান নিতে পারবে। চীনে আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে জন্মহার ব্যাপকভাবে কমে যাবার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। তবে জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি দেখা গেছে। ফাঁস হওয়া বিভিন্ন তথ্যে দেখা যাচ্ছে, জন্মনিয়ন্ত্রণের সরকার নির্ধারিত কোটা ছাড়িয়ে গেলে নারীদের আটকে রাখা হচ্ছে কিংবা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

জার্মান গবেষক জেনজ এর আগে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন সেখানে বলা হয়েছে, জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু গর্ভবতী নারীরা যদি গর্ভপাত করাতে রাজি না হয়, তাহলে তাদের আটকে রাখার হুমকি দেওয়া হয়। অনেক নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য এবং জোরপূর্বক বন্ধ্যা করা হচ্ছে। বেইজিং অবশ্য বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, উইঘুর মুসলিমদের টার্গেট করে সেখানে কিছু করা হচ্ছে না। সার্বিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রভাব সেখানকার সংখ্যালঘুদের ওপরও পড়েছে।

অঞ্চলটিতে মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সহজলভ্য হওয়ায় ফলেও জন্মহার কমেছে বলে দাবি চীনের। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ে গণহত্যার যে কথা বলা হচ্ছে সেটি ‘পুরোপুরি ননসেন্স।’ যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে যে চীন-বিরোধীরা রয়েছে এটি তাদের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। তারা সব সময় চীন-ভীতিতে ভোগে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এই গবেষণা এবং এর পদ্ধতির বিষয়টি তারা বিভিন্ন গবেষকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, যারা জনসংখ্যা, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। জেনজ-এর নতুন এই গবেষণাকে তারা ভালো কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে কোনও কোনও গবেষক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কয়েক দশক পর্যন্ত জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্লেষণ এমন কিছু বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে যেগুলো হয়তো আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

/এমপি/
সম্পর্কিত
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!