গ্রিসের বিখ্যাত পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি ও এর আশেপাশের অঞ্চলে গত কয়েক দিনে ২০০টিরও বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এই ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ইউরোপ-মেডিটেরানিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটছে। গত সোমবার বিকেলে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১।
ব্রাসেলস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী মিতসোতাকিস বলেন, গত কয়েক দিন ধরে কর্তৃপক্ষ একটি অত্যন্ত তীব্র ভূতাত্ত্বিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি দ্বীপবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
ভূমিকম্পের এই ধারাবাহিকতা একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটক ফেরি ও ফ্লাইটে করে সান্তোরিনি এবং পার্শ্ববর্তী আনাফি, আইওস ও অ্যামোরগোস দ্বীপ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা আহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সান্তোরিনি দ্বীপটি একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ওপর অবস্থিত। তবে এই ঘটনাকে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত না করে বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছে, গত কয়েক দিনে ৩ মাত্রার বেশি প্রায় ২০০টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
গ্রিসের বিশিষ্ট ভূকম্পবিদ গেরাসিমোস পাপাদোপোলোস সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতা একটি বড় ধরনের ঘটনার ইঙ্গিত দিতে পারে। তিনি বলেন, সব আশঙ্কা এখনও উন্মুক্ত। ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েছে, মাত্রা বেড়েছে ও ভূমিকম্পের কেন্দ্র উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গেছে। যদিও এগুলো টেকটোনিক ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরিজনিত নয়, তবুও ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে।
সান্তোরিনি দ্বীপটি প্রতি বছর ৩০ লাখেরও বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে। খ্রিস্টপূর্ব ১৬২০ সালের দিকে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট নাটকীয় খাড়া পাহাড়ের পাশে সাদা রঙের গ্রামগুলো পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই অগ্ন্যুৎপাতটি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুৎপাতগুলোর মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়।
ওই অগ্ন্যুৎপাত দ্বীপের একটি বড় অংশ ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং বিস্তীর্ণ এলাকা ছাইয়ে ঢেকে দিয়েছিল। এটি প্রাচীন মিনোয়ান সভ্যতার পতনের কারণ হিসেবেও বিবেচিত হয়, যা এই অঞ্চলে বিকশিত হয়েছিল।
যদিও সান্তোরিনিতে এখনও একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে, সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল ১৯৫০ সালে।
গ্রিসের ভলকানিক আর্কের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান ভূকম্পবিদ এফথিমিওস লেকাস গত সপ্তাহে বলেছেন, আমাদের বুঝতে হবে যে সান্তোরিনি আগ্নেয়গিরি প্রতি ২০ হাজার বছর পর পর খুব বড় বিস্ফোরণ ঘটায়। শেষ বিস্ফোরণটি ঘটেছিল ৩ হাজার বছর আগে, তাই আমাদের সামনে একটি বড় বিস্ফোরণের মুখোমুখি হওয়ার আগে অনেক সময় আছে।
এদিকে, ভূমিকম্পের আতঙ্কে ফেরি ও ফ্লাইটে করে হাজার হাজার মানুষ সান্তোরিনি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। জলবায়ু সংকট ও নাগরিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ফেরি অপারেটর ও এয়ারলাইনগুলো অতিরিক্ত পরিষেবা যোগ করেছে।
সান্তোরিনিতে ১৭ বছর ধরে বসবাসকারী পর্যটন গাইড কোস্টাস সাকাভারাস এএফপিকে বলেছেন, তিনি আগে কখনও এই মাত্রার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা পাননি। তিনি বলেন, গতকাল প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর কাঁপছিল। এটা আগেরবারের চেয়ে আলাদা মনে হচ্ছে।
সাকাভারাস তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রবিবার ফেরিতে করে দ্বীপ ছেড়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এই সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত মূল ভূখণ্ডে থাকার পরিকল্পনা করছি। আমি মনে করি আগামীকাল এটি আরও তীব্র হবে এবং আমি আশা করি তারপর এটি শান্ত হবে।
জরুরি পরিষেবা দল দ্বীপের প্রধান হাসপাতালের পাশের একটি বাস্কেটবল কোর্টে তাঁবু স্থাপন করেছে। চারটি দ্বীপের স্কুল বন্ধ রয়েছে। মোবাইল ফোনে পুশ নোটিফিকেশন পাঠানো হয়েছে, যেখানে পাথর ধসের আশঙ্কা রয়েছে এমন এলাকা থেকে দূরে থাকতে এবং কিছু উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বলা হয়েছে।