ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়াকে ‘অবাস্তব শর্ত’ দিয়ে যুদ্ধবিরতির আলোচনা বিলম্বিত করার অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় তিনি বলেন, যদি রাশিয়া অবাস্তব শর্ত আরোপ করে এবং অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে কঠিন পরিণতি হওয়া উচিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর যুদ্ধবিরতির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে এবং আলোচনা ‘অবিলম্বে’ শুরু হবে।
জেলেনস্কি মঙ্গলবার পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ শুরু করেছেন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ শেষে এক বার্তায় তিনি বলেন, আমরা অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি যাতে মস্কোর ওপর চাপ বাড়ে এবং রাশিয়াকে আচরণ পরিবর্তনে বাধ্য করা যায়।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইইউ প্রায় ২০০টি রুশ ট্যাংকারকে তাদের ‘ছায়া নৌবহর’ তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাজ্য ১৮টি ট্যাংকারসহ সামরিক সরবরাহকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন একটি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি স্মারকলিপি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তবে যুদ্ধবিরতির ৩০ দিনের প্রস্তাবের ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, শান্তিচুক্তির স্মারকলিপি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব এখন কিয়েভের। তবে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, আলোচনার জন্য কোনও নির্ধারিত সময়সীমা নেই এবং থাকতেও পারে না।
ইউক্রেন জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৭টি সংঘর্ষ হয়েছে এবং তারা ১ হাজারের বেশি রুশ সেনাকে হতাহত করেছে।
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস বলেন, পুতিন সময় নষ্ট করছেন, এটা এখন পরিষ্কার। দুঃখজনকভাবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে না তিনি শান্তিতে আগ্রহী।
এদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করবেন না, কারণ এতে সাম্প্রতিক অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে।
পুতিন এর আগে ৮-১১ মে রাশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয় দিবস উপলক্ষে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন, তবে কিয়েভ এতে যোগ দেয়নি। জেলেনস্কি তখন বলেছিলেন, স্থায়ী ও প্রকৃত যুদ্ধবিরতি ছাড়া এমন ঘোষণায় কোনও আস্থা রাখা যায় না।
এর আগে ইস্টার উপলক্ষে ৩০ ঘণ্টার একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, কিন্তু উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে তা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করে। চলমান এ যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত ও লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শান্তিচুক্তির বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও যুদ্ধ থামার ইঙ্গিত মেলেনি।