X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোনিয়া গান্ধী থেকে পি কে হালদার: সবার পেছনে কারা এই ‘ইডি’?  

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি 
০১ আগস্ট ২০২২, ০১:১২আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ০১:১২

ভারতে ইদানিং যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাটি সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে ও খবরের শিরোনামে– সেটি হল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট বা ‘ইডি’। কিছুদিন আগেও যে সংস্থাটির নাম সাধারণ মানুষের কাছে প্রায় অজানাই ছিল, সেই ইডি নিয়েই এখন এদেশের ড্রয়িং রুম থেকে চায়ের দোকান – সর্বত্র চলছে চর্চা। 

আর এর কারণটাও খুব সহজ। সম্প্রতি এ দেশে যতগুলো হাই-প্রোফাইল আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্ত হয়েছে বা হচ্ছে, তার প্রায় সবগুলোতেই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে এই সংস্থাকে। তাদের নিশানায় আসছেন একের পর এক বাঘা বাঘা ও ওজনদার নাম।

ইডি অফিসে হাজিরা দিতে যাচ্ছেন সোনিয়া গান্ধী  

কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও তার ছেলে রাহুল গান্ধীকে ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতির মামলায় দিনের পর দিন ধরে একটানা জেরা করা হচ্ছে। কারা করছে? ইডি। 

বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের মামলায় অভিযুক্ত পি কে হালদারকে কলকাতার কাছে বারাসত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে তার বেনামি সম্পত্তি। কারা করছে? ইডি। 

পি কে হালদারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন ইডি কর্মকর্তারা

পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি মন্ত্রিসভার ‘দুনম্বর’ ছিলেন যিনি, সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৫০ কোটি রুপি নগদ অর্থ ও প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার, বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হচ্ছে। কারা করছে? ইডি। 

মহারাষ্ট্রে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় নিরুপম – যিনি অপসারিত মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে ধরা হয় – তার বাড়িতে আজ (রবিবার) হানা দেওয়া হয়েছে, জব্দ করা হয়েছে তার স্ত্রীর বিপুল সম্পত্তি। কারা করছে? ইডি।  এবং এরকম উদাহরণ আরও অজস্র। 

ভারতের বিরোধী দলগুলো স্বভাবতই অভিযোগ করছে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সংস্থাটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে শুধু বিরোধী নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে। পার্লামেন্টেও তারা প্রশ্ন তুলছেন, ইডি কেন শুধু কংগ্রেস, তৃণমূল বা শিবসেনার বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধেই তদন্ত করছে? কই, কোনও বিজেপি নেতা তো তাদের রাডারে আছেন বলে শোনা যাচ্ছে না! 

কিন্তু ইডি-র দাপট তাতে এতটুকুও কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দেশের যে আইনটির সুবাদে ইডি’র এত ক্ষমতা, সেই প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ)-কে চলতি সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখার পক্ষে রায় দেওয়ার পর পর ইডি-র সক্রিয়তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী নিত্যা রামকৃষ্ণন বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘এক কথায় এই পিএমএলএ আইনটিকে একটি ড্রাকোনিয়ান (দানবীয়) আইন বলা যেতে পারে। এই আইনটিতে ইডি-কে একরকম ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলেই অনেকে এটিকে শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।’ 

তিনি আরও বলছেন, ‘বিচারব্যবস্থার মূল কথাই হচ্ছে, অপরাধ প্রমাণিত না-হওয়া পর্যন্ত একজন অভিযুক্তকে নির্দোষ বলে ধরা হবে। কিন্তু পিএমএলএ প্রথম থেকেই ধরে নেয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী। এমন কি এই আইনে ইডি-কে প্রথমেই অভিযুক্তের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি জব্দ করারও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে – যাতে তার আদালতে আইনি লড়াই লড়ার আর্থিক ক্ষমতাটুকুও থাকে না।’ 

নিত্যা রামকৃষ্ণন

ভারতের আইন বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, একবার পিএমএলএ আইনে ইডি কাউকে গ্রেপ্তার করলে তার কার্যত জামিন পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। এই বিতর্কিত আইনটি ২০০২ সালে দেশের আর একটি বিজেপি সরকারের (অটলবিহারী বাজপেয়ী) আমলেই প্রণয়ন করা হয়। দুদশক বাদে সুপ্রিম কোর্টও তার সাংবিধানিক বৈধতাকে মেনে নিল। 

আর এই পিএমএলএ আইনের সুবাদেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট বা ইডি হঠাৎ করে ভারতে এতটা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও একমত। 

ঘটনাচক্রে, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দশ বছরের কংগ্রেস আমলে (মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়) ইডি সারা দেশে মাত্র ১১২টি অভিযান চালায়। আর ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এই আট বছরের বিজেপি আমলে তারা এর মধ্যেই ৩০৩০টি অভিযান চালিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির আমলে ইডি-র সক্রিয়তা বেড়েছে প্রায় তিরিশ গুণ। 

যদিও ইডি-র করা মামলায় ‘কনভিকশন রেট’ – অর্থাৎ যেখানে অভিযুক্তরা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বা সাজা পেয়েছেন – খুবই কম। গত সতেরো বছরে ইডি-র করা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মামলায় মাত্র ১৭টি কেসে কনভিকশন হয়েছে। 

দিল্লিতে রাজনৈতিক ভাষ্যকার কল্যাণ গোস্বামী মনে করেন, সম্প্রতি ইডি-র মতো এমন একটি সংস্থার হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বড় ভূমিকা আছে। 

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলছিলেন, ‘মনে রাখতে হবে ইডি-র যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালে ইইউ বা এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হিসেবে। এটি ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের অধীন একটি সংস্থা, সরাসরি দেশের অর্থমন্ত্রীর অধীনে। পরে এটির নামকরণ করা হয় ইডি, আর নতুন বিভিন্ন আইনের সুবাদে এটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।’ 

‘এখন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন লো-প্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাকে সামনে রেখে পেছন থেকে অমিত শাহর কলকাঠি নাড়া খুব সহজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই তার ক্যাবিনেট কলিগকে সামনে রেখে পেছন থেকে ইডি-কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন, এটা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে।’  

তিনি আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এতোদিন ভারতে যে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে এসব কাজে লাগানো হত, সেটি কিন্তু সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীনে। এখন সিবিআইয়ের বদলে ইডি-কে ব্যবহার করা হলে নরেন্দ্র মোদিকেও গোটা বিতর্ক থেকে দূরে রাখা সহজ হবে। 

এসব কারণেই সহসা ভারতে আজকাল এত বেশি করে ইডি-র নাম শোনা যাচ্ছে, আর বড় বড় রাঘব বোয়ালরা একে একে তাদের জালে জড়াচ্ছেন।

/জেজে/
সম্পর্কিত
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
দক্ষিণ লেবাননে ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে ইসরায়েল
হিজবুল্লাহর ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা