X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পূজায় আর ঘট ভরেন না মিরিটি গ্রামের ‘পল্টু’

রক্তিম দাশ, কলকাতা
০২ অক্টোবর ২০২২, ১১:৫৩আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৫৮

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কীর্ণাহার শহরের ছোট্ট একটি গ্রাম মিরিটি। দুর্গাপূজার সপ্তমীর দিন সকালে আর দুর্গাপূজার ঘট ভরতে দেখা যায় না গ্রামের ‘পল্টু’কে। ভাবছেন এই ‘পল্টুটা’ আবার কে? ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, বাংলাদেশি জৈব-রসায়নবিদ ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদাসহ অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী মানুষের জন্ম এই বীরভূমে। এই তালিকায় আছেন ভারতের ত্রয়োদশতম রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। গ্রামে পল্টু নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি।

ভারতের টু-জি কেলেঙ্কারি থেকে স্পেকট্রাম; সব সমস্যার সমাধানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন একসময়ের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু দুর্গাপূজার চারদিন সব কিছু ভুলে বাড়ির পূজায় মেতে উঠতেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৯৬ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দাদা তারকনাথ মুখোপাধ্যায় বাড়িতে দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন। এরপর পূজার দায়িত্ব নেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫৬ সাল থেকে পূজার হাল ধরেন প্রণব। ১৯৭২ সালের বন্যায় জলে গ্রাম ডুবে যাওয়ায় সেবছর পূজায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। আর ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে সেবারও পূজোয় অংশ নিতে পারেননি। আর এক বার উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন ও এক বার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নির্বাচনে পূজায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। 

নদী থেকে পূজার ঘট ভরার সময় মন্ত্র পাঠ করছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায় (ফাইল ছবি)

এই চার বছর ছাড়া প্রতিবছরই ষষ্ঠীর দিন বিকালে তিনি চলে আসতেন তার বোনের বাড়ি পরোটা গ্রামে। পরদিন সকালে সাদা ধুতি এবং উত্তরীয় পরে কুয়ে নদী থেকে ঘট ভরে পূজা শুরু করতেন। নিজেই চন্ডিপাঠ করতেন। সে সময় অবারিত দ্বার ছিল মিরিটির ‘মুখার্জি’ বাড়িতে। শুধু কংগ্রেস নয়, সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। 

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাগ্নে অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মামা প্রতিবছর পূজার আগের দিন আমাদের বাড়িতে আসতেন। বাড়ির বাইরে মা কে প্রণাম করে তবেই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেন। মামার জন্য একটা কাঠের বিশেষ চেয়ার ছিল। সেখানেই বসে পরিবারের সকলের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। তারপর মিরিটি গিয়ে পূজার তদারকি করতেন। সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতেই থাকতেন। আর সেই আড্ডা আর হবে না।’

কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি, অধুনা তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। প্রতিবছর পূজার চার দিন আমি তার পাশেপাশে থাকতাম। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নবমী কিংবা দশমীর দিন ফিরে গিয়ে রামলীলা ময়দানে দশেরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে নাড়ু

মিরিটি মুখ্যোপাধ্যায় বাড়ির পূজার পাশাপাশি মূল আর্কষণ প্রসাদ হিসাবে তৈরি গুড় আর চিনির নাড়ু। পারিবারিক রীতি মেনে এবারও তৈরি হয়েছে বিভিন্ন স্বাদের নাড়ুও মোয়া। এবার প্রায় দেড় কুইন্টাল গুড়ের নাড়ু ও আর ৫০ কেজি চিনির নাড়ু তৈরি করা হয়েছে মা দুর্গা প্রসাদের জন্য। এই নাড়ু তৈরি করছেন প্রায় ১০ জন কারিগর। এই নাড়ু তৈরির মুখ্য কারিগর বাসুদের মন্ডল বলেন, এবার এই গুড় ও চিনির নাড়ু তৈরি করা হয়েছে ২০০টি নারকেল দিয়ে। এছাড়াও খইয়ের মোয়া, মুড়ির মোয়া, চিড়ের মোয়া ও ছোলা-বাদামের মোয়াও তৈরি করা হয়েছে। খই ও গুড় মিশিয়ে তৈরি করা মুড়কি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের খুব প্রিয়, তাও তৈরি করা হয়েছে।

পারিবারিক দূর্গা পূজাতে যোগ দিতে পানাগড় থেকে হেলিকপ্টারে কীর্নাহার বাসস্ট্যান্ড মাঠে আসতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাকে দেখতে কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়ে ছিল মাঠে। হ্যালিপ্যাড থেকে সরাসরি গাড়িতে কীর্নাহারের পরটা গ্রামে তার দিদির অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি যেতেন। পূজায় আর ঘট ভরেন না মিরিটি গ্রামের ‘পল্টু’

দশমী পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি বোনের বাড়িতেই থাকতেন। বোনের বাড়িতে সাবেক রাষ্ট্রপতির জন্য একটি ঘর নির্দিষ্ট  করা থাকতো, তিনি সেই ঘরেই থাকতেন। ঘরটিতে অন্য আন্য আসবাপত্র ছাড়াও একাধিক বিভিন্ন ধরনের বই থাকে। কারণ সময় পেলেই বই পড়তেন তিনি।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার তিবে বোনের বাড়ি থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায় মিরিটি গ্রামের পারিবারিক পূজায় যোগ দিতেন। পারিবারিক নিয়ম অনুসারে প্রণব মুখোপাধ্যায় মন্দিরে যাওয়ার পর মা দূর্গার মূর্তি থেকে ঢাকা কাপড় সরিয়ে দেওয়া হতো। মা দূর্গাকে প্রণাম করার পর তিনি পারিবারিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতেন।

গ্রামের এই বাড়ির টানেই পূজায় চলে আসতেন ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি

২০২০ সালের ৩১ আগস্ট প্রয়াত হন কংগ্রেসের চাণক্য বলে পরিচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুর আগে বোনের বাড়িতে শেষ পূজায় সাবেক ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, আমার জীবনে ৫ থেকে ৬ বার পারাবারিক দুর্গাপূজায় আসতে পারিনি। কারণ সে সময় আমি জাতিসংঘে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছিলাম। আমি সবসময় পারিবারিক পূজায় আসতে চাই। আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানাতে চাই। এই পূজাকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক সৌভাত্রিত্ববোধের বিকাশ ঘটুক।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
রাফায় আবারও ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ