সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের অনেক আরব মিত্ররা যখন দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে ঠিক তখন এমন ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সঙ্গে ফোন কলের সময় সিরিয়া এবং তার আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে আম্মানে সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তারা জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন স্পষ্ট করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ২২৫৪ এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থানে ফেরা না পর্যন্ত অন্যদের স্বাভাবিককরণকেও সমর্থন করবে না ওয়াশিংটন।
২০১৫ সালের প্রস্তাবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সিরিয়ায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়।
সিরিয়া, মিসর, ইরাক, সৌদি আরব এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সোমবার জর্ডানের রাজধানীতে আল-আসাদের সরকারকে আরব লীগে ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনার জন্য বৈঠক করেছেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রতিবাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের পর আঞ্চলিক শক্তিরা সিরিয়াকে বয়কট করে। বাদ দেওয়া হয় আরব লীগ থেকে। এক পর্যায়ে সেই দমন-পীড়ন জেরে সিরিয়া গৃহযুদ্ধ বেধে যায়। দীর্ঘদিন চলা সংঘাতে এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহয় হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
ইরান এবং রাশিয়ার সমর্থনে সিরিয়ার সরকার দেশের বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু আরব দেশ দামেস্কের প্রতি তাদের অবস্থান বদলাতে করতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলেছে, তারা সংঘাতের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি ছাড়া আল-আসাদের বিরোধিতা ছাড়বে না।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য জর্ডানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ সময় সিরিয়া ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেছেন, সিরিয়াকে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করবে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, মার্কিন সাংবাদিক অস্টিন টাইসের মুক্তি নিশ্চিত করতে সিরিয়ার সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্টিন ২০১২ সালে সিরিয়া নিখোঁজ হন। মার্কিন কর্মকর্তারা অস্টিনকে আটক করার জন্য সিরিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন।
ব্লিঙ্কেন বুধবার বলেছিলেন, আমরা অস্টিনের বিষয়ে চিন্তিত। এ জন্য সিরিয়ার পাশপাশি অনেক দেশের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা তাকে বাড়ি ফেরানোর উপায় খুঁজতে চাই৷ তা না করা পর্যন্ত আমরা স্থির হবো না।
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র আল-আসাদের সরকারকে বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না, তাই ওয়াশিংটন এবং দামেস্কের মধ্যে সরাসরি আলোচনা কীভাবে হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়ার সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় এক যুগ পর দামেস্কে যান। গত মাসে সৌদি আরবের শীর্ষ কূটনীতিকও সিরিয়ার রাজধানী সফরে আল-আসাদের সঙ্গে দেখা করেন।
চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নের মধ্যেই এমন পরিবর্তন আসে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে সিরিয়ার আসাদ সরকার। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তারা সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তার মিত্রদের নিরুৎসাহিত করে। তবে আল-আসাদের সরকারের কাছাকাছি যাওয়া দেশগুলোর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি ওয়াশিংটন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ২০১৮ সালে দামেস্কে তারা তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে।
সূত্র: আল জাজিরা