ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের অবস্থান কী হবে! সামনে কী কী সমস্যা রয়েছে? শক্তিশালী ‘বিভাজনের রাজনীতি’ আর তার সমাধান কী হতে পারে? এসব বিষয় নিয়ে শনিবার (২৫ জুন) মুখ খুলেছেন ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। একইসঙ্গে লেবার পার্টিতে নিজের নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলেছেন এই লেবার নেতা।
২৩ জুন বৃহস্পতিবারের গণভোটে ব্রিটেনের জনগণ নিজেদের রায় জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী, ব্রিটেনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে সরে যাওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে এ বিষয়টি নিয়ে পুরো বিশ্বে আরও দুই বছর ধরে আলোচনা চলবে বলে মনে করেন জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, ‘এখন খেয়াল রাখতে হবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি যেন পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন ইস্যু থেকে নজর সরিয়ে না নিতে পারে।’
তিনি জানান, ব্রিটেনের অনেক শিল্পাঞ্চল ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দিয়েছে। এসব এলাকা সবচেয়ে বেশি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, “এখানে যে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ এখানে গড়ে উঠছে, এ থেকে তা বোঝা সম্ভব।”
করবিনের মতে, এই গণভোটের মধ্য দিয়ে এক বিভক্ত ব্রিটেনের চেহারা সামনে এসেছে। লন্ডন, স্কটল্যান্ডের মতো অঞ্চলগুলোতে বিভাজন রেখা আরও সুস্পষ্ট হয়েছে।
ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে অসম শিল্পায়ন এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে মনে করেন করবিন। তিনি বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন শহরের মধ্যকার সাংস্কৃতিক ভিন্নতা এবং কোনও অঞ্চলে শিল্পায়নপূর্ব সামাজিক সম্পর্ক গণভোটকে প্রভাবিত করেছে।’
শরণার্থী সংকট প্রসঙ্গে এই লেবার নেতা বলেন, ‘আমরা শরণার্থী সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমি শরণার্থী সংকট নিয়ে কথা বলতে ভয় পাই না। আমি বিশাস করি, তা দেশকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তবে আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে সমাজে যে চাপ সৃষ্টি হয়, সেটা আমি বুঝি।’
তিনি বলেন, “এটা পরিষ্কার যে, এই গণভোট মানুষের স্বাধীন চলাচলের ওপর এক বাধা। তবে এ সম্পর্কে ‘লিভ’ শিবির থেকে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেন দেখতে কেমন হবে, সেটাও বলা হয়নি।”
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি উন্মুক্ত এবং আন্তরিক বিতর্ক শুরু করতে হবে। পুরো বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সুস্থির এবং যৌক্তিক আলোচনা হতে হবে।’ তিনি কয়েকজন ব্রিটিশ এমপি’র নাম উল্লেখ করে জানান, তারা ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলে দলীয় নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
জেরেমি করবিন ব্রিটেনের বেকারত্ব সমস্যা, মানবাধিকার এবং ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনার পরিসর বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
তার দাবি, কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে দলীয় সম্মেলনে নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী প্রস্তাব করার পর আগাম সাধারণ নির্বাচন দিতে হবে। এই রাজনীতিক মনে করেন, ব্রেক্সিট প্রশ্নে জনগণের এই অবস্থান লেবার পার্টির রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। আবাসনের প্রশ্ন, কর্মসংস্থানগত সুরক্ষার প্রশ্ন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রশ্নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিকল্প হাজির করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। করবিন মনে করেন, দলে যারা তার প্রতি অনাস্থা এনেছেন, তাদের সেই কাজ বাদ দিয়ে লেবার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করা উচিত।
জেরেমি করবিন প্রশ্ন তোলেন, ‘এক বছর আগে যখন আমি দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলাম, তখন দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় কিংবা নিজেদের মধ্যকার দ্বিমত নিয়ে বিতর্ক করা যেত। কিন্তু সেটা না করে এখন কেন এইসব তৎপরতা?’
নিজ দলে যারা করবিনের নেতৃত্বের সমালোচনা করছেন, তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, তাদের মাথায় কী চলছে। তবে আমি এখানেই আছি, আপনাদের ধন্যবাদ।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
আরও পড়ুন:
প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজের আহ্বান অ্যামনেস্টির
লন্ডন, এডিনবরায় ব্রেক্সিটবিরোধী বিক্ষোভ
/এসএ/এমপি/