মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে রবার্ট মুলারের ২ বছরের তদন্ত শেষে জনসম্মুখে আসছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার কথা রয়েছে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাতে এ সংক্রান্ত এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে উপস্থাপক বলেছেন, ওই প্রতিবেদনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের নাম থাকতে পারে। এর আগে ফক্স নিউজের এক অনুসন্ধানেও একই কথা বলা হয়েছিল। লেট শো অনুষ্ঠানে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে হাস্যরস করেন উপস্থাপক স্টিফেন কলবার্ট। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অ্যাসাঞ্জকে রাশিয়ার সহযোগী প্রমাণ করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সে দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ অভিযোগ করছে, রাশিয়া হ্যাকিংয়ের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের সূত্রে বলা হয়, মস্কোর সঙ্গে যোগসাজশ আছে এমন ব্যক্তিরাই হিলারির ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কমিটি, তাঁর প্রচারবিষয়ক প্রধান এবং অন্যদের ই-মেইল হ্যাক করে গোপনীয়তাবিরোধী ওয়েবসাইট উইকিলিকসকে সরবরাহ করেছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে উইকিলিকসের মাধ্যমে এসব ই-মেইল ফাঁস হয়ে যাওয়ায় হিলারির নির্বাচনি প্রচারে বিঘ্ন ঘটে। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, রুশদের চেষ্টা ছিল মার্কিন নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ক্ষতি করার পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী হতে সাহায্য করা। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস’র লেট শো অনুষ্ঠানে উপস্থাপক কলবার্ট বলেন, ‘এ প্রতিবেদনে (মুলারের প্রতিবেদন) উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের নাম থাকতে পারে। যাকে গত সপ্তাহে লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাস থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করা হয়েছে।’
ক’দিন আগে ফক্স নিউজের এক অনুসন্ধানেও একই দাবি করা হয়েছিল। ক্যাথারিন হেজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মুলারের প্রতিবেদনে অ্যাসাঞ্জের নাম থাকছে।
লেট শো যখন চলছিলো, তখন প্রতিবেদন প্রকাশের আরও কয়েক ঘণ্টা বাকি। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রশ্নে হাস্যরস করতে গিয়ে হাতে এক ডজন ডিম নেন উপস্থাপক। বলেন: ‘সে পর্যন্ত আমি আমার মুরগি গুনতে গুনতে সময় কাটাবো। সেগুলো খুব নিরাপদে একটি ঝুড়ির ভেতরে ভরবো আমি।’ ‘সাত বছর পর ইকুয়েডর কেন তার (অ্যাসাঞ্জ) আশ্রয় প্রত্যাহার করেছে’- প্রশ্ন করেন কলবার্ট। উত্তরে নিজেই বলেন, ‘একটা কারণ হতে পারে, ইকুয়েডর সরকার অভিযোগ করেছে, তাদের দূতাবাসে বসে বসে তিনি (অ্যাসাঞ্জ) অন্য দেশের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করছেন এবং সে দেশেরই (ইকুয়েডর) প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনোর ফোন হ্যাক করেছেন, এরপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোরেনোর লবস্টার খাওয়ার ছবি প্রকাশ করেছেন।’
কলবার্ট ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘এ পৃথিবী নামক গ্রহে অ্যাসাঞ্জ একজন বাজে রুমমেটও বটে। দূতাবাস কর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, অ্যাসাঞ্জ হলের ভেতরে স্কেটবোর্ডে চড়তেন, সারাক্ষণ উচ্চস্বরে গান শুনতেন, অন্তর্বাস পরে হেঁটে বেড়াতেন, তার বিড়ালের যত্ন নিতে চাইতেন না, তার ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি ছিল এবং সে কারণে দূতাবাসের ভেতরে গন্ধ ছড়াতো, দেয়ালে মল মাখিয়ে রাখতেন; মূলত ইকুয়েডরে যা কিছু নিষিদ্ধ তা-ই তিনি গ্রহণ করতেন।’
Embassy Cat has many ties. Here is with a hearts tie, a rainbow tie, a striped tie and a known tie to Russian intelligence. #LSSC pic.twitter.com/o5OcafskQm
— The Late Show (@colbertlateshow) April 18, 2019
এখন অনেক মানুষই বিড়ালটি নিয়ে চিন্তিত। সেই বিড়ালটির কথা মনে আছে? যেটিকে তিনি (অ্যাসাঞ্জ) খাওয়াতেন না’- বলেন কলবার্ট। এরপর মুলারের প্রতিবেদন ও রুশ সংযোগের প্রতীকী হিসেবে অ্যাম্বাসি ক্যাটখ্যাত সেই বিড়ালের কয়েকটি ছবি উপস্থাপন করে কলবার্ট। বলেন, অ্যাম্বাসি ক্যাটের অনেক টাই আছে। এখানে দেওয়া হলো: হার্টের ছবিওয়ালা টাই, রংধনু টাই, স্ট্রাইপের টাই ও রুশ গোয়েন্দাদের পরিচিত একটি টাই। ‘রুশ গোয়েন্দাদের পরিচিত টাইটি হলো ছবিতে যিনি বিড়ালটিকে ধরে রেখেছেন। ওই ছবিটিতে দেখা যায়, অ্যাসাঞ্জের কাঁধের ওপর বসে আছে বিড়ালটি।