বাবরি মসজিদ ও রাম জন্মভূমি ভূমি বিরোধ মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত রায় ঘোষণা করছে না। তবে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ৭০ বছর পুরনো মামলাটি মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় সমাধান হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ফলে অপেক্ষা থাকছে আদালত মধ্যস্থতাকারীদের সমঝোতা নাকি নিজেদের রায়ে বিষয়টির সমাধান করবেন।
বাবরি মসজিদের অবস্থান উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে৷ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশের দাবি, যেখানে মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে সেই জায়গাটি ছিল দেবতা রামের জন্মভূমি, তা ভেঙে মসজিদ বানানো হয়। এ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ বহুদিনের। ১৯৯২ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাবরি মসজিদ। এর জেরে সৃষ্ট দাঙ্গায় প্রাণ হারায় অন্তত ২ হাজার মানুষ। ভারতের প্রাচীন শহর অযোধ্যার ওই বিতর্কিত স্থানটি কোন সম্প্রদায়ের দখলে থাকবে, তা নিয়ে মামলা চলছে ৬০ বছর ধরে।
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাবরি মসজিদের ভূমি তিন ভাগে ভাগ করে বণ্টনের আদেশ দেয়। আদালতের নির্দেশনায় মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড, নিরমাজি আখড়া আর রামনালা পার্টিকে সেখানকার ২ দশমিক ৭ একর জমি সমানভাগে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছিল। বুধবার সেই শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ নভেম্বরের আগে এই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।
ফের, আরকেবার
এর আগে একবার মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছিল। এরপরও আগস্টে বিরোধ নিরসণে সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতার দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এফ এম আই খলিফুল্লা, সিনিয়র অ্যাডভোকেট শ্রিরাম পাঞ্চু ও আধ্যাত্মিক নেতা শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর নিয়ে একটি মধ্যস্থতাকারী প্যানেল গঠন করা হয়। যদিও এতে হিন্দু ও মুসলিম পক্ষ সতর্কতা জানিয়েছিল।
সমঝোতার শর্ত হিসেবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বিরোধপূর্ণ ২ দশমিক ৭৭ একর জমির দাবি ছেড়ে দেবে। এর বিনিময়ে সরকার অযোধ্যায় ৫২টি মসজিদের কাজ পুনরায় শুরু করবে। ওয়াকফ বোর্ড বিকল্প একটি স্থানে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করবে।
পার্থক্য কোথায়
অতীতের মধ্যস্থতাকারী মুসলিম পক্ষকে সমঝোতায় রাজি করাতে পারেনি। এবার মধ্যস্থতাকারীরা এই কাজটি করতে পেরেছে। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়ার অভিভাবক সংগঠন নির্ভানি আখড়া, হিন্দু মহাসভা ও রাম জন্মস্থান পুনরুদ্ধার সমিতি মধ্যস্থতায় রাজি। এমনকি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সমর্থিত নিয়াজ মধ্যস্থতায় অংশ না নিলেও সমঝোতায় তাদের দাবি রক্ষিত হয়, বিরোধপূর্ণ জমিতে রাম মন্দির ভবন। মুসলিম পক্ষে, জমিয়ত উলেমা সমঝোতায় স্বাক্ষর করেনি। যদিও বিরোধপূর্ণ ভূমির মালিকানা সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের।
নাটকীয় মোড়
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে অনেক নাটকীয় ঘটনার জন্ম হয়। হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বিকাশ সিং একটি মানচিত্র তুলে ধরেন, যা রামের জন্মভূমির বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি আরও অনেক নথি হাজির করেন। মুসলিম পক্ষের আইনজীবী রাজিব ধাওয়ান এতে আপত্তি তুলেন। তিনি এই মানচিত্রের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
বিদ্রুপে হার?
রাজিব ধাওয়ান নতুন প্রমাণ হাজির করায় আপত্তি তুলে ধরেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুমতি চান, ‘আমি কি এই নথি ছিড়ে ফেলার জন্য আপনার অনুমতি পেতে পারি... এটি সুপ্রিম কোর্ট, কোনও কৌতুকশালা নয়’। আইনজীবীর এই কথায় রসিকতা করেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈও। এতে মানচিত্র ছিড়তে এগিয়ে যান ধাওয়ান। প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চের অপর পাঁচ বিচারপতি উভয়পক্ষকে রসিকতা না করার বিষয়ে সতর্ক করেন। বিচারকরা বলেন, ‘আমরা এখনই চলে যেতে এবং পুরো প্রক্রিয়ার ইতি টানতে পারি’।
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কোনও ছুটি নেই
উত্তর প্রদেশ সরকার ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সক্রিয় দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সময়ে কেউ ছুটি নিতে পারবেন না। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির শেষ দিনে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।