প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন বারাক ওবামা। তবে এবারের আসন্ন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনও কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হননি। এবার সেই ইতিহাস রচনা করলেন কমলা হ্যারিস। ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অভিবাসী পরিবারের এই সন্তান। যৌথভাবে তারা লড়বেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার রানিং মেট মাইক পেন্সের বিরুদ্ধে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। তার মা শ্যামলা গোপালান ছিলেন দক্ষিণ ভারতের তামিল। আর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ছিলেন জ্যামাইকান। শ্যামলা গোপালান ছিলেন স্তন ক্যানসার গবেষক। ইউসি বার্কেলিতে এন্ডোক্রিনোলজিতে ডক্টরেট করার জন্য ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন তিনি। সেখানেই পরিচয় ডোনাল্ড হ্যারিসের সঙ্গে।
অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করতেন ডোনাল্ড। এ দম্পতির দুই কন্যা সন্তানের একজন কমলা হ্যারিস ও অপরজন মায়া হ্যারিস। কমলার ছোট বোন মায়াও একজন রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্ট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবিরে কাজ করেছেন তিনি। কমলার সাত বছর বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন দুই বোন। ২০০৯ সালে মায়ের মৃত্যু হয়।
কমলা হ্যারিস নিজেকে কৃ্ষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও নিজের ভারতীয় শেকড়ের কথাও তুলে ধরেন তিনি। চেন্নাইয়ে নানারবাড়িতেও বেশ কয়েকবার সফর করেছেন।
৫৫ বছরের জীবনের একটা বড় সময় ওকল্যান্ড ও বার্কেলিতে কাটিয়েছেন কমলা। কিছু সময় কাটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়েস্টে। আর মায়ের শিক্ষকতার চাকরির সুবাদে কয়েক বছর মন্ট্রিলেও থাকতে হয়েছে তাদের।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন কমলা। ১৯৯০ সালে বার অ্যাট ল’ পাসের পর আলামেদা কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর নিয়োগ পান স্যান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয়ে।
ওকল্যান্ডে সহকারি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করার সময় যৌন অপরাধকে প্রাধান্য দিয়েছেন কমলা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক যৌন কর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চালিয়েছিলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাদেরকে বুঝিয়েছিলেন, মেয়েদেরকে যৌন ব্যবসায় নিয়োজিত অপরাধী বিবেচনা না করে ঘটনার শিকার হিসেবে দেখতে হবে।
২০০৩ সালে কমলা সেন্ট ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নির্বাচিত হন। ২০০১ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলও নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করার সময় অপরাধবিষয়ক কঠোর নীতিমালার কারণে সংস্কারপন্থীদের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস।
২০১৬ সালের সিনেট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হন কমলা। লরেট্টা স্যানশেজকে পরাজিত করে ক্যালিফোর্নিয়ার তৃতীয় নারী সিনেটর হন তিনি। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে প্রতিনিধিত্বকারী দ্বিতীয় আফ্রিকান-আমেরিকান ও প্রথম দক্ষিণ এশীয়-আমেরিকান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রার্থী হতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মনোনয়নের দৌড়ে নেমেছিলেন কমলা। একই দৌড়ে ছিলেন জো বাইডেন। সেসময় দুইজনের মধ্যে বাক বিতন্ডা হতে দেখা যায়। পরে প্রার্থিতা প্রত্যাশীর তালিকা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন কমলা।
তারই ৯ মাস পার সে জো বাইডেনের রানিং মেট হলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বড় দুই দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া তৃতীয় নারী তিনি। এর আগে এ পদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন গেরালডিন ফেরারো ও সারাহ পলিন।