জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর আবারও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নতুন বর্ধিত নিষেধাজ্ঞাকে উত্তর কোরিয়ার ওপর এখনও পর্যন্ত আরোপ করা নিষাধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে কঠোরতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমা পরীক্ষার বিপরীতে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উত্তর কোরিয়ার মিত্রশক্তি হিসেবে পরিচিত চীনও এই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব সমর্থন করেছে। নতুন নিষেধাজ্ঞায় প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ায় যাওয়া বা দেশটি থেকে আসা সব কার্গো জাতিসংঘের সদস্য দেশ কর্তৃক তল্লাশি করার বিধান রাখা হয়েছে। সেই সাথে নতুন করে ১৬ জন ব্যক্তি এবং ১২টি সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপ করা চলমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে বিস্তৃত করে দেশটির কাছে ক্ষুদ্র আকারের অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক সুরে কথা বলেছে, যা পিয়ংইয়ং-এর কাছে একটা বার্তাই বহন করে নিয়ে যাচ্ছে: উত্তর কোরিয়াকে অবশ্যই এসব বিপজ্জনক কার্যক্রম থেকে সরে আসতে হবে এবং জনগণের জন্য একটি উত্তম ভবিষ্যত বেছে নিতে হবে।’
নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণের পর নিরাপত্তা পরিষদে রাখা বক্তব্যে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সামান্থা পাওয়ার বলেন, ‘এটি এক স্বেচ্ছাচারী বাস্তবতা যে, উত্তর কোরিয়া তার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেয়ে পারমাণবিক আর ব্যালাস্টিক কার্যক্রমে অনেক বেশি আগ্রহী।’
নতুন বর্ধিত নিষেধাজ্ঞায় আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে – পারমাণবিক বা ব্যালাস্টিক মিসাইল কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ায় কয়লা, লোহা এবং লৌহ আকরিক রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা। স্বর্ণ, টাইটেনিয়াম আকরিক, ভ্যানাডিয়াম আকরিক এবং অন্যান্য মূল্যবান খনিজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা। বিমানের জ্বালানি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা। সামরিক ও পুলিশ সহযোগিতার ওপর নিষেধাজ্ঞা। নতুন বিলাসবহুল পণ্য এবং ক্রীড়া সরঞ্জামাদি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা। সেই সাথে উত্তর কোরিয়ার আর্থিক ও ব্যাংকিং ক্ষেত্রে কাজ করা দেশগুলোকে পারমাণবিক এবং মিসাইল কার্যক্রমের সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলোর সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য দেওয়া হয়নি। উত্তর কোরিয়ায় মানবিক ত্রাণ সহায়তাও অব্যাহত রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে আর অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি সু-ইয়ং জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতি পরিচালনা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল এবং পিয়ংইয়ংকে সমালোচনার পাত্রে পরিণত করার অভিযোগ করেন।
জানুয়ারিতে পরীক্ষা চালানো পরমাণু বোমাটি হাইড্রোজেন বোমা ছিল বলে দাবি করেছিল উত্তর কোরিয়া। এটি ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমার চতুর্থ পরীক্ষা। সূত্র: বিবিসি, এপি, এএফপি।
/এসএ/