ইকুয়েডরে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার রাতে সরকারিভাবে নিহতের এ সংখ্যা জানানো হয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
রবিবারের ওই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন অনেকে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে অভিযানে অংশ নিয়েছেন ১০ হাজার সেনা ও সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য সুইজারল্যান্ড, স্পেন ও বেশ কয়েকটি লাতিন আমেরিকার দেশ থেকে একাধিক টিম কাজ করছে। বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে নিহত ও আহতদের স্বজনদের আহাজারি আর কান্নায় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে উদ্ধারকারী ও স্বজনদের খোঁজ করা পরিবারের সদস্যরা হাতে মাটি খুঁড়ে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
নিরাপত্তামন্ত্রী সিজার নাভাস বলেন, হতাহতদের উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এদিকে, ভূমিকম্পে দেশটির একটি কারাগার থেকে প্রায় ১০০ জন বন্দী পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ইকুয়েডরের বিচারমন্ত্রী লেডি জুনিগা। ভূমিকম্পে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া। এ দুর্যোগের ফলে ইতালি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরছেন তিনি। দেশে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দিয়ে সবাইকে তিনি শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাস পরিস্থিতিকে কঠিন মুহূর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি বিভিন্ন জেলায় আহত মানুষরা ধ্বংসস্তুপে আটকা পড়েছেন। আমরা তাদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছি।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকা থেকে নিহতের খবর আসা শুরু হয়েছে। ফলে নিহতের আরও বাড়তে পারে। ভূমিধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় হেলিকপ্টার ও বাসে করে সেনা সদস্যদের দেশটির উত্তরাঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষ হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ে বেঁচে থাকা মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ত্রাণ ভেনিজুয়েলা ও মেক্সিকো থেকে পৌঁছেছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল পেদারনেলসের মেয়র গ্যাব্রিয়েল আলসিভার জানিয়েছেন, পুরো শহরটিই চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ইকুয়েডর এবং জাপানের ভূমিকম্প কি সম্পর্কিত?
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ইকুয়েডরের মুইজন থেকে ২৩ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে। স্থানীয় সময় রাত আটটার দিকে পরপর দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রথম ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪.৮। তবে দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি ছিল খুবই শক্তিশালী। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৮ এবং গভীরতা ১৯ কিলোমিটার। এরপর এখনও পর্যন্ত ইকুয়েডরে ৫.৪ ও ৪.৮ মাত্রার অন্তত আরও দুটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জলদস্যু স্টাইলে বিশ্বের প্রথম পাস্তাফারিয়ান বিয়ে অনুষ্ঠিত
প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র জানিয়েছে, সুনামি আঘাত হানতে পারে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে ৩০০ কিলোমিটার এলাকা সুনামি সতর্কতায় আওতায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সুনামিতে ৩ ফুট উচ্চতার বন্যায় প্লাবিত হতে পারে উপকূলীয় এলাকা।
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে দুই লক্ষাধিক জনবল নিয়োগ দেবে ভারত
বিশ্বের বড় ভূমিকম্পগুলোর একটি ঘটেছে এই ইকুয়েডরে। ১৯০৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূকম্পন হয় এখানে। ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে সৃষ্ট এই সুনামিতে মারা যান পাঁচ শতাধিক মানুষ। আহত হন আরও দেড় হাজার। মধ্য আমেরিকা ও সানফ্রান্সিসকোতেও অনুভূত হয় এই ভূমিকম্প। যার প্রভাবে হাওয়াইয়ের নদীগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, ইউএসজিএস।
/এমপি/