রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন এক ধরনের জোট গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। যে জোটটি পশ্চিমাদের মোকাবিলা করতে পারে। এই সপ্তাহে ইরান সফরে তিনি এই জোট গঠনের বিষয়টি সামনে আনেন। ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশের বাইরে এটিই ছিল তার প্রথম সফর।
মঙ্গলবার পুতিন তেহরান সফর করেন। এর কয়েক দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও সৌদি আরব সফর করেন। সফরে বাইডেন ইসরায়েলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওয়াশিংটন চেষ্টা করবে যাতে করে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা সংগ্রহ করতে না পারে।
রাশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের প্রধান আন্দ্রে কর্তুনভ বলছেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক পুতিনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ ক্রেমলিন নিজেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হতে দিতে চায় না।
পুতিনের ইরান সফরের আগেই মার্কিন কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, তেহরান কয়েকশ’ ড্রোন মস্কোকে সরবরাহ করতে পারে। যদিও ক্রেমলিন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, ইরানের নেতার সঙ্গে এমন কিছু নিয়ে আলোচনা করেননি পুতিন।
যদিও সরকারিভাবে মঙ্গলবারের আলোচনার এজেন্ডা ছিল সিরিয়ার ভবিষ্যৎ। এছাড়া বৈশ্বিক খাদ্য সংকট নিরসনে জাতিসংঘ সমর্থিত ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্য রফতানি পুনরায় শুরুর বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। তবে পশ্চিমারা এটিকে পশ্চিমাবিরোধী বিকাশমান ব্লক তৈরির চেষ্টা হিসেবেই দেখছে।
বিবিসি’র ব্রডকাস্টার জন সিম্পসন টুইটারে লিখেছেন, পুতিনের ইরান সফর নতুন জোটকে দৃঢ় করছে: রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া-চীন-উত্তর কোরিয়া। খুব ভয়ানক হাসিখুশি কোনও গোষ্ঠী নয়।
প্যারিসভিত্তিক ইরানি বিরোধী গোষ্ঠী ন্যাশনাল কাউন্সিল অব রেসিস্ট্যান্স অব ইরান (এনসিআরআই)-এর সদস্য শাহজান গোবাদি এই বৈঠককে দেশে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মুখে তেহরানের স্বার্থের পক্ষে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ইরানের শাসকরা চরম সংকট ও বিক্ষোভ মোকাবিলা করছে। দেশে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই সংকট এতই তীব্র যে তারা রাশিয়ার সহযোগিতা চাইছে বা পারমাণবিক চুক্তি হলেও এই পতন ঠেকানো যাবে না।
বার্লিনভিত্তিক এসডব্লিউপি থিংক-ট্যাংক এর জ্যানিস ক্লুগের মতে, পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে ইরান যে শাস্তির মুখোমুখি তা মস্কোর জন্য কিছুটা শিক্ষা হতে পারে। বিনিময়ে রাশিয়া সামরিক পণ্য এবং সম্ভবত কাঁচামাল বা খাদ্যশস্য দিতে পারে।
তবে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের নিজ নিজ স্বার্থ এই সহযোগিতায় কিছুটা সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারে। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। কিন্তু একই সঙ্গে তারা ইউক্রেনের কাছে সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করেছে। যা দিয়ে ইউক্রেনীয় সেনারা রুশদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
তাছাড়া রাশিয়া ও ইরান উভয় দেশ তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞার ফলে মস্কো বাধ্য হয়েছে চীন ও ভারতের কাছে ছাড়কৃত মূল্যে তেল বিক্রি করতে। এতে উভয় দেশের মধ্যকার প্রতিযোগিতা বেড়েছে।
ইউরেশিয়া গ্রুপ থিংক ট্যাংকের হেনরি রোম বলেন, তেহরানের ভোগ্যপণ্যের মার্কেট দখল করছে মস্কো। কিন্তু ইরানকে দেওয়ার মতো তাদের কাছে খুব কম সরঞ্জাম রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সারে-এর সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব গ্লোবাল পাওয়ার কম্পিটিশনের পরিচালক নিক কিচেন বলেন, বিষয়টি পশ্চিমাবিরোধী জোটের নয়, তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। কিন্তু এতে করে দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ইউক্রেনের রাশিয়ার কৌশলগত অসংখ্য ভুলের কারণে তাদের নতুন অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। যেসব দেশ পুরোপুরি পশ্চিমা অবস্থানের সঙ্গে একমত নয় তারা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দরকষাকষি করে ভালো সুবিধা নিতে পারবে। তুরস্ক ও ইরানের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হলো তারা পুতিনের সঙ্গে কতদূর অংশীদারিত্বে যাবে। এক্ষেত্রে তাদের পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের পরিণতি বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।
সূত্র: নিউজউইক