X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
উৎকণ্ঠায় হাজারো বাংলাদেশি

ব্রিটেনে শতা‌ধিক কেয়ার কোম্পানির স্পন্সর লাইসেন্স বাতিল

মুনজের আহমদ চৌধুরী, লন্ডন
২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১০আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১০

সেবাখাতের না‌মে রীতিমতো পরিকল্পিত আদম ব্যবসার কারণে কেয়ার ভিসায় বাংলাদেশসহ বি‌ভিন্ন দেশ থেকে কর্মী আনা অন্তত শতা‌ধিক কোম্পানির বিদেশি কর্মী স্পন্সর করার লাইসেন্স প্রত্যাহার করেছে ব্রিটেনের হোম অফিস। এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চলমান। স্পন্সর কোম্পানির লাইসেন্স সরকার প্রত্যাহার করায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ভিসা বা‌তিলের শঙ্কার চিঠি পেয়েছেন হাজারো কর্মী। ইতোমধ্যে সরকার কয়েক শ’ কর্মীকে ভিসা বাতিলের চিঠিও পাঠিয়েছে। এর ফলে সদ্য ব্রিটেনে আসা অনেক বাংলাদেশি এখন গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। যারা পরিবার-সন্তান নিয়ে এ দেশে এসেছেন, তারা থাকার জায়গা ও কাজ না পেয়ে  সীমাহীন ভোগা‌ন্তি‌তে সময় পার করছেন। ছুটছেন কমিউনিটির আইনজীবীদের কাছে। অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছেন।

তথ্য অধিকারের আওতায় একটি আইনি সংস্থার অনু্রোধের পর হোম অফিস জানায়, কেবল ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৯৪টি কেয়ার কোম্পানির বিদেশি দক্ষ কর্মী আনার স্পন্সর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

জানা গেছে, অনেক কোম্পানিকে লাইসেন্স স্থগিতের পাশাপা‌শি জ‌রিমানাও করা হ‌চ্ছে। স্পন্সর করা কর্মীদের কোম্পানি পরিবর্তনের ব্যাপারে সময়মতো রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হওয়া, বেতন পরিশোধ এবং দক্ষতার প্রমাণ দিতে না পারা, ভিসার মেয়াদ শেষে হোম অফিসকে না জানানো এবং সামগ্রিকভাবে অভিবাসন আইনের লঙ্ঘনের মতো বিভিন্ন কারণে হোম অফিস বিদেশি কর্মী আনার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে।

নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে ওই কোম্পানিটি কোনও নতুন বিদেশি কর্মী আনতে পারবে না। লাইসেন্স স্থ‌গিত  প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের নতুন স্পন্সর খুঁজতে হয় অথবা ভিসার ধরন পাল্টাতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি বিপুল ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ।

ভিসা বাতিলের শঙ্কা উল্লেখ করে একটি স্পন্সর লাইসেন্স প্রত্যাহার হওয়া কোম্পানির চিঠি

ইতোমধ্যে স্পন্সর করার লাইসেন্স বাতিল হওয়া বেশ কয়েকটি কেয়ার হোম তাদের বিদেশি কর্মীদের ভিসা বাতিলের শঙ্কার কথা উল্লেখ করে চিঠি পাঠিয়েছে। এমন একটি কোম্পানির চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের ভিসা এখনও বাতিল হয়নি। হোম অফিস থেকে ৬০ দিন সময়ের নোটিশ দিয়ে ইমেইল পাঠানোর পর ঐ সময়কাল পর্যন্ত বর্তমান ভিসা বহাল থাকবে।

কোম্পানিটি তাদের বিদেশি কর্মীদের পরামর্শ দিয়ে ব‌লে‌ছে, আপনাদের উচিত হোম অফিসের চিঠি পাওয়ার আগেই অপর কোনও কোম্পানিতে যোগদান বা ভিসার ধরন পরিবর্তনের উদ্যোগ শুরু করা।

হোম অফিসের ৬০ দিনের নোটিশের সময়কালের মধ্যে কর্মীরা নতুন স্পন্সর খুঁজে না পে‌লে অথবা ভিসার রুট প‌রিবর্তনে ব‌্যর্থ হ‌লে ভিসা স্থগিত হ‌য়ে যাবে।

অসংখ্য অনিয়ম ও অসঙ্গতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক ‌কেয়ার কোম্পানিকে হোম অফিস বিশেষ ব্যবস্থায় নজরদারি‌তে রেখেছে। অতি সম্প্রতি, কেয়ার কোয়ালিটি কমিশনের পরিদর্শনের পর উলভারহ্যাম্পটনে অবস্থিত সান্তোস কেয়ারসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিদেশি কর্মী আনার লাইসেন্স বা‌তিল করা হয়েছে।

তবে কিছু কেয়ার কোম্পানি লাইসেন্স প্রত্যাহার ও বাংলাদেশিসহ বিদেশি কর্মীদের ভিসা বা‌তিলের হোম অফিসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে। সম্প্রতি, সাপোর্টিং কেয়ার লিমিটেড নামের এক‌টি প্রতিষ্ঠান অভিবাসী কর্মী আনার স্পন্সর লাইসেন্স প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে জিতেছে। যার ফ‌লে কোম্পানিটির প্রায় ৬৪ জন কর্মী এবং তাদের পরিবারের ব্যাপারে ইতিবাচক রায় পেয়েছে তারা।

পূর্ব লন্ড‌নের চ্যান্সেরি সলিসিটরসের প্রিন্সিপাল সলিসিটর মো. ইকবাল হোসেইন মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেয়ার ভিসা চালুর পরই রাতারাতি এক শ্রেণির কেয়ার হোম মা‌লিক ও তাদের দালালরা ভারত, বাংলাদেশসহ বি‌ভিন্ন দেশ থে‌কে ব্রিটেনে আইনের ফাঁক গলে মানুষ পাচারের রীতিমতো ব্যবসা শুরু করে। যে কেয়ার হোমে ৫ জন কর্মীর দরকার সেখানে ৪০ জন আনা হয়েছে। নি‌য়োগদাতার প্রতিশ্রুত কর্মঘণ্টা ও বেত‌নের অর্ধেকও পা‌চ্ছেন না হাজা‌রো কর্মী।

তিনি আরও বলেন, আবার এমন কর্মীও এসেছেন যারা কেয়ার দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত না, ন্যূনতম ধারণা নেই। তারা যাদের কেয়ার দেবেন সেসব ব্রিটিশদের কথাও বুঝতে পারেন না। হোম অফিসের উচিত ছিল প্রথম থেকেই যি‌নি কেয়ার ভিসায় আসছেন কর্মী হিসেবে তার দক্ষতা যাচাই বা নি‌শ্চিত করা। এখনও কাজ দেবে না জেনেও মানুষ আসতে চান। এখ‌নও কেয়ার ভিসার ক‌স (সার্টিফিকেট অব স্পন্সরশিপ)-এর জন্য মানুষ ছুটছেন।

উল্লেখ্য, ব্রিটেনে বাংলাদেশিসহ বি‌ভিন্ন অভিবাসী কমিউনিটিতে কেয়ার ভিসা নিয়ে হাজার হাজার পাউন্ডের বা‌ণিজ্য ও কর্মীদের এনে কাজ না দি‌তে পারার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে কেয়ার হোমগু‌লোর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কেয়ার হোমগুলো বলছে, যারা বাংলাদেশসহ বি‌ভিন্ন দেশ থেকে কেয়ার ভিসায় আসছেন তা‌দের কাজের ও ভাষাগত ন্যূনতম দক্ষতা না থাকায় কাজ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা।

/এএ/
সম্পর্কিত
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
লন্ড‌নের মেয়র প‌দে হ্যাটট্রিক জ‌য়ের প‌থে সা‌দিক খান
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ
সর্বশেষ খবর
এক উপজেলায় ১৩ প্রার্থীর সবাই আ. লীগের
এক উপজেলায় ১৩ প্রার্থীর সবাই আ. লীগের
শিরোপাজয়ী দল কি কোটি টাকা পাবে?
ফিরছে সুপার কাপশিরোপাজয়ী দল কি কোটি টাকা পাবে?
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে ইউক্রেন: গোয়েন্দা কর্মকর্তা
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে ইউক্রেন: গোয়েন্দা কর্মকর্তা
আ.লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার
আ.লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ