X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রহ্মপুত্র পাড়ে জয়নুল উদ্যানের ছায়াশীতল পরিবেশে ভ্রমণপিপাসুরা

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৪আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৪

পালতোলা নৌকা এ যেন ময়মনসিংহ নগরীর ফুসফুস! শত শত বৃক্ষরাজির ছায়াশীতল পরিবেশকে ফুসফুস বলাই যায়। ব্রহ্মপুত্র পাড়ে জয়নুল উদ্যানে এমন নির্মল পরিবেশ পাচ্ছেন নগরবাসী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা। সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে অসংখ্য ভ্রমণপ্রেমীর সমাগমে জয়নুল উদ্যান হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। জয়নুল উদ্যানের ছায়াশীতল পরিবেশে বিদেশি পর্যটকদেরও দেখা যায়।

ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র পাড়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জাদুঘর সংলগ্ন পার্কের ভেতর জয়নুল উদ্যান গড়ে তুলেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। ব্যস্ত নগরবাসীসহ ভ্রমণপিপাসুদের নির্মল আনন্দ দিতে এই জায়গাকে নতুনরূপে সাজানো হয়েছে বলে জানান মসিকের প্রশাসক ইকরামুল টিটু।

মূল পার্কের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে জায়গাকে ‘জয়নুল উদ্যান’ নামে সংরক্ষিত করেছে সিটি করপোরেশন। উদ্যানে ব্রহ্মপুত্রের বুকে আবহমান বাংলার ছবির পাশাপাশি শিশু-কিশোরসহ নানান বয়সী মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, মিনি চিড়িয়াখানা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকাসহ বিভিন্ন রাইড। উদ্যানের বাইরে নাগরদোলা, চরকি, ঘোড়ার গাড়ি টমটমে ঘুরে বেড়ানো যায়।

মিনি চিড়িয়াখানায় আছে ভালুক, বানর, সজারু, খরগোশ, ময়ূর, উটপাখি, ধনেশ, কুমিরছানা, হরিণ, অজগর সাপ, ঘুঘু, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি। মিনি চিড়িয়াখানার টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। রাইডগুলোতে চড়তে হলে ৩০ থেকে ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হয়।

ঘোড়ার গাড়ি পুরো পার্ক এলাকার একাধিক ঘাটে আছে বাহারি ও রঙিন পালতোলা নৌকার সারি। এগুলো ভাড়া ঠিক করে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভেসে আসতে পারেন ভ্রমণপ্রেমীরা। এছাড়া আছে ব্রহ্মপুত্র নদমুখী টাইলসে মোড়ানো বসার জায়গা, নামাজখানা, বৈশাখী মঞ্চ, ভাষা সৈনিক মোস্তফা মতিন পাঠাগার ও টয়লেটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।

ভেতরে-বাইরে রয়েছে অসংখ্য চটপটি, ফুসকা ও চা-কফির দোকান। উদ্যানের ভেতরে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে দোলনায় চড়াসহ বিভিন্ন বিনোদনের সুযোগ। শিশুদের খেলনাসহ নানান পণ্য সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেছে অনেক হকার।

জয়নুল উদ্যানে নাগরদোলা উদ্যানের ভেতরে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নানান উদ্যোগ এখন দৃশ্যমান। সুস্থ বিনোদনের জন্য এমন আয়োজন নিয়ে খুশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। নগরীর বিশিষ্টজনেরাও সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ব্রহ্মপুত্র পাড়ের এই পার্ক ছাড়া নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের কোনও বিকল্প জায়গা ছিল না। জয়নুল উদ্যানসহ পার্কটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে সিটি করপোরেশন তাদের স্বস্তি দিয়েছে।
ম্যাজিক নৌকা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। মূলত এই ব্রহ্মপুত্র নদ ময়মনসিংহকে দুই ভাগ করে রেখেছে। ব্রহ্মপুত্রের একপাশে ময়মনসিংহ শহর। আরেকপাশে চর ও গ্রাম। যদিও এখন ব্রহ্মপুত্রের ওপাড়ে পশ্চিমা বিশ্বের আদলে আধুনিক নগর গড়ে তোলা হচ্ছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় হেড কোয়ার্টারের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে ওই চরে।

একসময় কাচিঝুলি সাহেব কোয়ার্টার সংলগ্ন এই জায়গার নাম ছিল উমেদ আলী পার্ক। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের নৈসর্গিক পরিবেশের এই পার্কের পাশেই ছিল ময়মনসিংহ কালেক্টরটে কর্মরত ইংরেজ সাহেবদের বাসভবনগুলো। সেই থেকে সাহেব কোয়ার্টার হিসেবে পরিচিতি পায় এলাকাটি। ময়মনসিংহ নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বরাবর পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার পেরিয়ে সড়কটি চলে গেছে সার্কিট হাউস মাঠ হয়ে কাচিঝুলি মোড়ে। এর মধ্যে কাচারি ফেরিঘাট থেকে কাচিঝুলির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জাদুঘর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র পাড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গাই উমেদ আলী পার্ক হিসেবে বিবেচিত।

জয়নুল উদ্যানে ভ্রমণপ্রেমীরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ব্রহ্মপুত্রের বুকে পালতোলা নৌকা, মাঝিদের গুণ টানা, চরের মানুষের জীবন-জীবিকা, নদী পারাপারের অপেক্ষাসহ ময়মনসিংহে বসে অসংখ্য ছবি এঁকেছেন। শিল্পাচার্যের দুর্লভ সব শিল্পকর্ম নিয়ে জয়নুল সংগ্রহশালা তথা জয়নুল জাদুঘর এই ব্রহ্মপুত্র পাড়েই অবস্থিত। জয়নুল জাদুঘর আধুনিকায়ন করে শিল্পাচার্যের অসংখ্য দুর্লভ শিল্পকর্ম ও ছবি রাখা হয়েছে।

শহরের চরপাড়া এলাকা থেকে বেড়াতে আসা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা হাদিকুল আলম জায়গাটির নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তার দৃষ্টিতে, পালতোলা নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভেসে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। শিল্পাচার্যের শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ এই কর্মকর্তা মনে করেন, তরুণ ও নতুন প্রজন্মের জন্য এই জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ।

জয়নুল উদ্যানে ফোয়ারা সম্প্রতি জয়নুল উদ্যানের ভেতর মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানচলাচল নিষিদ্ধ করেছে সিটি করপোরেশন। ফলে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা স্বস্তি পাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় নজরদারি অব্যাহত আছে। এছাড়া আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সিভিল পোশাকে নজরদারিতে রাখছেন পুরো পার্ক এলাকা। নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যার পর পার্ক এলাকায় থাকার অনুমতি নেই।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা