X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বেদের ছদ্মবেশে ইয়াবার কারবার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ মে ২০২১, ২০:৫৮আপডেট : ০৫ মে ২০২১, ২২:২৭

পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বেদে। বাপ-দাদারা বেদে জীবন থেকে চলে আসেন অন্যান্য পেশায়। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে লাভের আশায় ফের ভাসমান বেদের পরিচয় কাজে লাগায় তারা। বেদের ছদ্মবেশ নিয়ে ইয়াবার কারবার শুরু করে পাঁচ তরুণ। চক্রটি কড়ি ও তাবিজ বিক্রি করতে করতে কক্সবাজারের সীমান্ত থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসে। এরপর নির্দিষ্ট জায়গায় তা পৌঁছে দেয়। 

বুধবার (৫ মে) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালানো হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায়। এ সময় বেদের ছদ্মবেশে মাদক পাচারকালে ৭৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-২-এর একটি দল। গ্রেফতার ব্যক্তিরা

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলো মো. তারিকুল ইসলাম (২৩), মো. সিনবাদ (২৩), মো. মিম মিয়া (২২), মো. ইমন (১৯) ও মো. মনির (২৮)।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, ‘বেদের ছদ্মবেশে চক্রটি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে গ্রামগঞ্জ হয়ে ঢাকায় আসে। তারা কখনও মহাসড়কে আসে না। ভেতরের সড়কগুলো ব্যবহার করে তারা ঢাকায় পৌঁছায়। এই চক্রটি এর আগেও এভাবে রাজধানীতে ইয়াবা নিয়ে এসেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে একজন ইয়াবা কারবারি তাদের এসব ইয়াবা দিয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জাম, রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র‌্যাক এবং নানা ধরনের ইমিটেশন অলংকার, কড়ি, তাবিজসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-২ সিও জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা পারস্পরিক যোগসাজশে নিয়মিত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করে নিয়ে আসতো। মাদক পরিবহনের জন্য টিনের তৈরি সহজে বহনযোগ্য রান্না করার চুলার মধ্যে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা লুকিয়ে তা আবার ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দিতো। তারা মাদকের চালান কক্সবাজার এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনোই মহাসড়ক ব্যবহার করতো না। উদ্ধার করা সরঞ্জাম

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজি, টেম্পু ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিতো। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়ানোর চেষ্টা করতো।

প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসতো। সেখান থেকে তারা নোয়াখালীর চৌমুহনী, সোনাইমুড়ি এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত আসতো। দ্বিতীয় ধাপে তারা সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকার প্রবেশ করতো। এতে তাদের ৪/৫ দিন অথবা কোনও কোনও সময় এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেত বলে জানায়।

এই দীর্ঘ সময় তারা বেদেদের মতোই জীবনযাপন করতো। সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনোহারি পণ্য, যেমন- চুড়ি, কড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, শিশুদের কোমরে বাঁধার ঘণ্টা, চেইন, সেফটিপিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করতো। মাদক পরিবহনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের কৌশলের মুখোমুখি এর আগে কখনও হয়নি। তারা যে রুটটি ব্যবহার করছে তাও একেবারে নতুন বলা চলে।

লকডাউনে নৌ ও সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধ। এরমধ্যে কীভাবে তারা ঢাকায় মাদকের চালান নিয়ে পৌঁছতে পারলো, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে নৌপথ বা সড়ক পথ কোনোটাই ব্যবহার করেনি। সুযোগ বুঝে যেটা নিরাপদ মনে হয়েছে ব্যবহার করেছে। এজন্য এই চক্রে রয়েছে একটি গাইড বা লাইনম্যান। মূলত নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি ডিল করেন।

প্রথাগত পথের বাইরে তাদের এই মাদকের চোরাচালান বন্ধে র‌্যাবের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে।

 

/এআরআর/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মনজিল হত্যা: সৎমা-ভাইসহ ৬ জনের যুক্তিতর্ক অব্যাহত
কাওরানবাজারে প্রাইভেটকারে আগুন
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
সর্বশেষ খবর
এ বছর পুলিৎজার পেলো ৩ সংবাদমাধ্যম
এ বছর পুলিৎজার পেলো ৩ সংবাদমাধ্যম
মনজিল হত্যা: সৎমা-ভাইসহ ৬ জনের যুক্তিতর্ক অব্যাহত
মনজিল হত্যা: সৎমা-ভাইসহ ৬ জনের যুক্তিতর্ক অব্যাহত
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
টস হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশ
টস হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র