প্রশ্ন: নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ঠিক করার কোনও উপায় কী রয়েছে?
উত্তর: আমরা যেভাবে পার্সোনালিটিকে ক্যাটাগোরাইজ করি তা সম্পূর্ণ আপেক্ষিক, অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিযুক্ত। মানব মস্তিষ্কের সহজাত একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবকিছুর মাঝে প্যাটার্ন খোঁজা এবং সবকিছুকে ক্যাটাগোরাইজ করা। নার্সিসিজম বনাম অল্ট্রুইজম আসলে পার্সোনালিটির একটি ডোমেইন। এটি কখনোই কারোর সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক হতে পারে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে পৃথিবীতে সকল মানুষই সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ এবং মানবিক বিচারের ঊর্ধ্বে। যাদের চরিত্রে নার্সিসিজমের বৈশিষ্ট্য বেশি, তাদের মধ্যেও অন্যান্য তথাকথিত ভালো বৈশিষ্ট্য থাকে। অন্যান্য পার্সোনালিটি প্যাটার্ন বা ডোমেইনের মতোই নার্সিসিজমের তীব্রতা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিশেষ করে চল্লিশ বছর বয়স পার হবার পর থেকে ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। নার্সিসিজমের একটি মজার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যাদের মধ্যে এটি রয়েছে তারা নিজেদেরকে নার্সিসিস্টিক মনে করেন না। তবে যাদের মেটাকগনিশন লেভেল বেশি তারা নিজেদের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত। তারা নিম্নলিখিত পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন-
১। নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে পারলে এবং ভালো-খারাপ সকল বৈশিষ্ট্যসহ মেনে নিতে পারলে একটা ম্যাজিক ঘটবে। আপনি যে সমাজকে নিয়ে এখন ভয় পাচ্ছেন, সেই সমাজই দেখবেন আপনাকে বাহবা দিচ্ছে আপনার সাহসী এবং প্রথাবিরোধী ভূমিকার জন্য।
২। সেলফ অবজারভেশন বা আত্মসচেতনতা বাড়ানো: নিজের ভাবনা, মনোভাব এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। এটি আপনার নার্সিসিস্টিক প্রবণতার উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ।
৩। নিজের ব্যক্তিত্বের সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিন: নিজের চরিত্রের নেতিবাচক বৈশিস্টের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে একে আপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। এর সমালোচনা করা যাবে না বা এর জন্য নিজেকে তিরস্কার করা বা দায়ী মনে করা যাবে না। নিজের ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক, ইতিবাচক সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিতে হবে।
৪। আত্মবিশ্বাস বাড়ান: আপনার নিজের মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনি আত্মসহায়তা বই, মনোযোগ বা নিঃশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি করতে পারেন। প্রয়োজন অনুভব করলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৫। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা: অন্যের ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন। এটি আপনার সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এবং সমাধান নির্মাণে সহায়তা করবে।
৬। সহানুভূতি অনুশীলন: অন্যদের অনুভূতি এবং দুঃখের প্রতি সহানুভূতি অনুশীলন করুন। এটি আপনাকে নিজের নার্সিসিস্টিক প্রবণতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে দ্রুত যোগাযোগ করুন।
প্রশ্ন: অস্থিরতা বা অ্যাংজাইটির সমস্যায় ভুগছি অনেকদিন ধরে। সবকিছু নিয়েই উদ্বেগ কাজ করে। অ্যাংজাইটির সমস্যা কীভাবে দূর করবো?
উত্তর: ১। দুশ্চিন্তার পৌনঃপুনিক চক্র থেকে বেরিয়ে আসুন: আপনি যে অমূলক দুশ্চিন্তা রোগে ভুগছেন তা থেকে প্রাথমিক অবস্থায় নিজের চেষ্টায় বের হয়ে আসাটা একটু কঠিন। কারণ আমরা যতোই এ ধরনের দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করবো, ততোই তা আমাদেরকে গ্রাস করবে। এই চক্র থেকে বের হতে হলে প্রথমে আপনাকে দুশ্চিন্তার সাথে যুদ্ধ করা বন্ধ করতে হবে। কারণ এ যুদ্ধে কখনোই আপনি জিততে পারবেন না।
২। নিজের মধ্যে আসা সব ধরনের আবেগ অনুভূতিকে মেনে নিন: প্রথমে আপনাকে মনের মধ্যে আসতে থাকা অহেতুক দুশ্চিন্তাসহ সব ধরনের আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা মেনে নিন। যখন আপনি এই অহেতুক দুশ্চিন্তার সাথে যুদ্ধ করা ছেড়ে দেবেন, তখন আপনার ভেতরে ধীরে ধীরে একটা প্রশান্তি চলে আসবে। এভাবে চর্চা করতে থাকলে আপনি একসময় অহেতুক দুশ্চিন্তাকে সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে পারবেন। এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আপনাকে অবশ্যই কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
৩। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। যোগা, ধ্যান, দীর্ঘশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে মনোবল বাড়ান।
৪। স্ট্রেস হ্রাসের উপায় শিখুন: ধ্যান, প্রাণায়াম স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া সংগীত শুনুন বা কার্যক্রম চর্চা করুন যা আপনাকে শান্তি ও স্বাস্থ্যকর মনোভাব দেবে।
৫। ব্রিদিং এক্সারসাইজ: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভিতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েবার এরকম করুন।
৬। নিজের পরিচর্যা করুন: নিজের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন। শ্রান্তি নিন এবং সুস্থ খাবার খান। মেডিটেশন করুন। যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করুন।
৭। সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন: সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশি করে অংশগ্রহণ করুন। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। দেখবেন আপনার অ্যাংজাইটি কমে গেছে।
৭। ধৈর্য্য ধরুন: ধৈর্যশীলতা বজায় রাখুন এবং পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত করুন। দেখবেন, সকল অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পেরেছেন।
৮। কাউন্সেলর বা চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন: যদি আপনার দুশ্চিন্তা বেশি দিন ধরে চলে বা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর তা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, তাহলে একজন কাউন্সেলর বা মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।