প্রশ্ন: বারো বছরের সম্পর্ক ছিল আমার। বিয়ের আগে প্রেমিক বেঁকে বসে। নানা কারণ দেখিয়ে সম্পর্ক শেষ করে দেয়। ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্ক কেন রেখেছিলাম সেটা নিয়ে বাবা-মা যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে। পড়াশোনা শেষ করেছি দুই বছর আগে, এখনও কোনও চাকরি পাইনি। এগুলো নিয়ে মা খুব খারাপ ব্যবহার করে। ২৯ বছর হয় গেছে বয়স। না পারছি আগের সম্পর্ক থেকে মানসিকভাবে বের হতে, না পারছি একটা চাকরি জোগাড় করতে। বয়স হয়ে যাচ্ছে, কে বিয়ে করবে আমাকে- এটা নিয়ে কটূক্তি করে পরিবারের সদস্যরা। সামাজিক চাপ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে খুব কঠিন সময় পার করছি। মাঝে মাঝে আত্নহত্যার চিন্তা আসে।
উত্তর: আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, বা, আপনার বিয়ে করা জরুরি কি না, বা আপনার বিয়ে হবে কি না তা আমাদের জানি না। জানি না বলেই জীবন বৈচিত্র্যময়। আমাদের জন্য যেটা প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত সেটাই হবে। প্রকৃতিতে অন্য কোনও প্রাণীকে বিয়ে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। যার যখন যেখানে বিয়ে হওয়ার কথা, তার সেখানেই বিয়ে হবে। সে চাইলেও হবে, না চাইলেও হবে। তবে ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, সেটাকে মেনে নেওয়ার চর্চা করার মাধ্যমেই কেবলমাত্র আপনি প্রশান্তি খুঁজে পাবেন। তবে আপনার বর্তমান অস্থিরতা বা হতাশা কমাতে নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন-
১। নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসার এবং তথাকথিত ভালো-খারাপ সকল বৈশিষ্ট্যসহ মেনে নেওয়ার চর্চা করুন। তাহলে আপনার মনে প্রশান্তি আসবে ও আপনার মনের ক্ষত নিরাময় হতে শুরু করবে। নিজের ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক, ইতিবাচক সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিন। নিজের চরিত্রের নেতিবাচক বৈশিষ্টের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে একে আপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করুন। এর সমালোচনা করবেন না, একে পাল্টানোর চেষ্টা করবেন না বা এর জন্য নিজেকে তিরস্কার বা দায়ী মনে করা যাবে না।
২। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন: মেডিটেশন, ধ্যান, প্রাণায়াম করুন। সংগীত চর্চা করুন বা শুনুন।
৩। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভেতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েকবার এ রকম করুন।
৪। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট খালি পায়ে মাটি বা ঘাসের উপর হাঁটুন।
৫। নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করুন।
৬। বাসায় সরিষার তেল বা অলিভ অয়েলে রান্না করা স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
৭। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
৮। গাছপালা, প্রকৃতির মাঝে, মানুষ এবং অন্য প্রাণীদের মাঝে বেশি সময় কাটান।
প্রশ্ন: আমি বিয়ে করেছি এক বছর হলো। আমার মা স্ত্রীর সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করে। আমরা দুইজন কোথাও ঘুরতে গেলে মাও যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। যদি বলি আমরা দুইজন একটু প্রাইভেসি চাইছি তখন সে এমন ভাব করে যেন আমার স্ত্রী তার ছেলেকে তার থেকে দূরে নিয়ে গেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ব্যাপারটা ঠিক করার। মাকে সময় দিয়েছি, তাকে আলাদা করে ঘুরতে নিয়ে গেছি। তাকে বুঝিয়ে বলেছি। কিন্তু কোনোভাবেই সে বুঝতে চাইছে না। আমার বাবা নেই, তাই মাকে একা রেখে আলাদা বাসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর্থিকভাবেও সেটা সম্ভব না। কী করবো?
উত্তর: প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। দৃষ্টিভঙ্গির এই স্বাভাবিক পার্থক্যকে মেনে না নিতে পারায় আপনার মা এবং আপনার স্ত্রী পারস্পারিক সম্পর্ক ভালো না এবং আপনার সাথেও একারণে উনাদের কারোর সম্পর্ক স্বাভাবিক না। আপনাকে এই পরিস্থিতিতে আরও ধৈর্য্যশীল হতে হবে। আপনি আপনার স্ত্রীকে বোঝান যে, আপনা মা বয়স্ক মানুষ এবং বয়স্ক মানুষ শিশুর মতো। সুতরাং উনার খারাপ আচরণে ক্ষিপ্ত না হয়ে সেসব আচরণকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে এবং উনার প্রতি মমতা অনুভব করতে হবে। যেমনটা আমরা অনুভব করি শিশুদের প্রতি। আপনাদের দাম্পত্য জীবনের চিরস্থায়ী সম্পর্কের উপর জোর দিন। সম্পর্কের স্থায়ী ভালোবাসা ও বিশ্বাসের উপর জোর দিন। মনে রাখবেন আপনাদের মধ্যে আত্মীক সম্পর্ক একমাত্র একে অন্যকে নিঃশ্বর্তভাবে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই স্থাপন করা সম্ভব; পারস্পারিক মতপার্থক্য যতই থাকুক না কেন। আপনারা স্ত্রীর সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় খোলামেলা আলোচনা করুন। একে-অন্যের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে গভীরভাবে জানার এবং বোঝার চেষ্টা করুন। নিজ নিজ ভাবনা ও চিন্তাগুলো শেয়ার করুন। ভিন্ন ভিন্ন বিষয় সম্পর্কে চিন্তা না করে, আপনাদের চিন্তা-ভাবনা কেন্দ্রীভূত করুন আপনাদের সম্পর্কের পজিটিভ দিকগুলোর মাঝে। এরপরেও যদি আপনি নিজেরা সমস্যাটি সমাধানের জন্য অক্ষম হন, তাহলে একজন কাপল থেরাপিস্ট, কাউন্সেলর বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।