প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। এখনও বিয়ে করিনি বলে নানা ধরনের কথা শুনতে হয়। চারপাশ থেকে সবাই আমাকে মানসিক চাপে রাখে। এই চাপ অগ্রাহ্য করেছি অনেক দিন, এখন আর পারছি না। আমারও আজকাল মনে হয় সঠিক বয়সে বিয়ে না করলে বাচ্চা হতে সমস্যা হবে। কিন্তু আমার দীর্ঘদিনের প্রেমিক এখনও বেকার। ফলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কীভাবে মানসিকভাবে সুস্থ থাকবো এই ধরনেত চাপ সামলে?
উত্তর: ১. নিজেকে মতামতকে গুরুত্ব দিন: সমাজ বা পরিবার আপনার থেকে কী প্রত্যাশা করে তার চাইতে আপনার হৃদয় কী চায় সেটাকে প্রাধান্য দিন। অন্যের ভেলিডেশনের উপর নিজের মানসিক প্রশান্তি তথা আবেগীয় নির্ভরতা বন্ধ করুন। নিজের আবেগ অনুভূতিকে বাধা না দিয়ে আনন্দ ও ভালোবাসার সাথে গ্রহণ করুন এবং আপন করে নিন।
২. দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন: বেকারত্ব আমাদের নিজেদের তৈরি করা কারাগার মাত্র। আমরা লেখাপড়াকে জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হিসেবে না দেখে ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে ছোটবেলা থেকে শিখেছি। তাই চাকরি ছাড়া অন্যকিছু করার কথা ভাবতেই পারি না। আপনাকে ও আপনার প্রেমিককে নিজেদের সৃজনশীলতার চর্চা শুরু করুন ও নিজেদের পছন্দের পেশায় আত্মনিয়োগ করুন।
৩. নিজের যত্ন নিন: নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। প্রতিদিন কিছু সময় শরীরে রোদ লাগানোর চেষ্টা করুন। শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রানিজ আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাবার বেশি করে খান। মেডিটেশন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও শারীরিক ব্যায়াম করুন।
৪. নতুন দক্ষতা অর্জন করুন: আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করুন। যেমন, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, এবং ভিডিও এডিটিং। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। ব্লগিং বা ইউটিউব চ্যানেল শুরু করে বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারেন যেমন হস্তশিল্প বা খাবার।
প্রশ্ন: আমার বয়স ২৫ বছর। পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারিনি। পারিবারিকভাবেও সুখি নই। বাবা- মায়ের ঝগড়া দেখে বড় হয়েছি। যাকে ভালোবাসতাম সেও আমাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেছে। আমি জীবন নিয়ে একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছি।
উত্তর: ১. অতীত থেকে বেরিয়ে আসুন: নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করুন। অতীতের ঘটনাবলীকে দোষারোপ করা বন্ধ করে সামনে এগিয়ে যান। একটা পথ বন্ধ হলে প্রকৃতির নিয়মে আরেকটি পথ খুলে যাবে। জীবনটাকে খেলার মতো করে নিন। এখানে কেউ হারতে হারতে জিতে, কেউ জিততে জিততে হারে। এরপর আবার অন্য ধারায় চলে। নিরবিচ্ছিন্ন জিত বা হার বলে কিছু নেই। লারন্ড হেল্পলেসনেসের কারণে মানুষ নিজেকে অসহায় নিয়তিবদ্ধ মনে করে।
২. পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বন্ধ করুন: আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সবকিছু আমাদের ইচ্ছামতো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোন। পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে প্রকৃতির স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দিন, তাহলে মানসিক চাপ কমে যাবে এবং আপনি প্রশান্তি অনুভব করবেন।
৩. গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং করুন: প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট খালি পায়ে ঘাস বা মাটির উপর হাঁটুন বা দাঁড়ান। এটি আপনার শরীরের সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তির সংযোগ স্থাপন করবে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও বড় কোনও গাছের কাণ্ড জড়িয়ে ধরে কিছু সময় কাটান। প্রাকৃতিক জলাশয়ে সাঁতার কাটাও একটি চমৎকার উপায়। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মাধ্যমে আপনি নিজেকে আরও পুনরুজ্জীবিত ও সতেজ অনুভব করবেন।
৪. নতুন কিছু শিখতে শুরু করুন: জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কিছু না কিছু শেখার আছে। আগ্রহ নিয়ে কোনও কিছু শেখার সময় আমরা মাইন্ডফুল মেডিটেশন লেভেলে থাকি এবং আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোতে নতুন নতুন সংযোগ স্থাপন হয়। ইউটিউব থেকে এবং অন্যান্য অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করে আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন।