বৈশাখী আয়োজন কি নানা পদের ভর্তা ছাড়া জমে? পান্তা ভাতের পাশাপাশি গরম ভাত কিংবা খিচুড়ি দিয়েও পরিবেশন করা যায় ভর্তা। সহজে তৈরি করা যায় এমন কিছু ভর্তার রেসিপি জেনে নিন।
মাছের ভর্তা
যেকোনো বড় মাছ দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন মজাদার মাছ ভর্তা। একটি প্লেটে আধা চা চামচ লবণ, আধা চা চামচ মরিচের গুঁড়া ও ১ চিমটি হলুদের গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মাছের দুটি টুকরা মসলায় মেখে নিন। ভর্তার জন্য সবসময় মাছের পিঠের অংশ নেবেন। মাছ মসলায় ম্যারিনেট করে রাখুন কিছুক্ষণ। প্যানে ৩ টেবিল চামচ তেল দিন। তেল গরম হলে মাছ দিয়ে দিন। দুই দিক ভালো করে ভেজে নিন। ভাজা মাছ থেকে কাঁটা বেছে নিন। একই প্যানে তেল গরম করে শুকনা মরিচ ভেজে নিন। মরিচ ভাজা হলে উঠিয়ে একই প্যানে দিয়ে দিন মোটা করে কাটা পেঁয়াজ। রসুনের একটি কোয়া রেখে বাকি কোয়া কুচি করে দিয়ে দিন পেঁয়াজের মধ্যে। নাড়তে থাকুন। কিছুটা ভাজা ভাজা হলে আদা কুচি দিন। সব উপকরণ নেড়েচেড়ে ভেজে নিন মাঝারি আঁচে।
কাঁটা বেছে রাখা মাছ দিয়ে দিন প্যানে। নাড়ার সময় মাছ ভেঙে দেবেন। কিছুক্ষণ পর সরিষার তেল দিন। ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে ফেলুন।
প্লেটে লবণ দিয়ে ভেজে রাখা শুকনা মরিচ ডলে নিন। রেখে দেওয়া রসুনের কোয়া কুচি ও সামান্য আদা কুচি দিন। সরিষার তেল দিয়ে সবকিছু মেখে নিন। চুলা থেকে নামানো ভাজা মাছ দিয়ে মেখে নিন। ধনেপাতা কুচি ছিটিয়ে পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে।
টমেটো ভর্তা
টমেটো মাঝ থেকে কেটে টুকরো করে নিন। প্যানে সরিষার তেল গরম করে শুকনা মরিচ মচমচে করে ভেজে উঠিয়ে নিন। একই প্যানে আস্ত রসুনের কোয়া দিয়ে ঢেকে দিন। পোড়া দাগ লেগে যাওয়া পর্যন্ত ভাজুন। রসুন নরম হয়ে গেলে উঠিয়ে প্যানে আরো কিছুটা তেল দিয়ে টমেটোর টুকরা দিয়ে দিন। প্যান ঢেকে দিন। টমেটো একেবারে নরম হয়ে গলে যাওয়া পর্যন্ত রাখবেন চুলায়। এরপর নামিয়ে শুকনা মরিচ, রসুন, স্বাদ মতো লবণ, পেঁয়াজ কুচি ও ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে মেখে নিন মজাদার টমেটো ভর্তা।
ডিম আলু ভর্তা
আলু ও একটি ডিম সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে চটকে রাখুন। প্যানে তেল গরম করে কয়েকটি শুকনা মরিচ ভেজে নিন। একই তেলে পেঁয়াজ কুচি নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। কাঁচা মরিচ কুচিও ভেজে নিন। শেষে টমেটোর স্লাইস ও কয়েক কোয়া রসুন দিয়ে দিন তেলে। টমেটো ও রসুন নরম হয়ে গেলে সেদ্ধ করে রাখা আলু ও ডিমের মিশ্রণ দিয়ে দিন। ভেজে রাখা পেঁয়াজ, মরিচ, আধা চা চামচ চাট মসলা ও কোয়ার্টার চা চামচ গরম মসলা দিয়ে নেড়ে নিন সব কিছু। সবশেষে ভেজে রাখা শুকনা মরিচ ভেঙে গুঁড়া করে দিন। নেড়েচেড়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে।
রসুন ভর্তা
প্যানে খানিকটা সরিষার তেল গরম করে কয়েকটি শুকনা মরিচ ভেজে নিন। মচমচে করে ভেজে উঠিয়ে নিন প্যান থেকে। একই প্যানে আরও কিছুটা সরিষার তেল যোগ করে পৌনে এক কাপ দেশি রসুনের কোয়া দিয়ে দিন। দেশি রসুনের কোয়া দ্রুত ভাজা হয়ে যায়, ঝাঁজও থাকে বেশি। কোয়াগুলো লালচে হয়ে গেলে উঠিয়ে একই প্যানে দিয়ে দিন আধা চা চামচ কালোজিরা ও আধা কাপ পেঁয়াজ কুচি। নেড়েচেড়ে ভাজুন। ভেজে রাখা মরিচের বোঁটা ফেলে ভালো করে চটকে ভেঙে নিন। ভেজে রাখা পেঁয়াজ ও কালো জিরা দিয়ে দিন। স্বাদ মতো লবণ দিয়ে মেখে নিন সবকিছু। শেষে রসুনের কোয়াগুলো চটকে আধাভাঙা করে মিশিয়ে নিন।
বেগুন ভর্তা
৪০০ গ্রাম লম্বা বেগুন ছোট টুকরা করে কেটে ২০০ মিলি পানিতে সেদ্ধ বসান। ১ চিমটি লবণ ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিন প্যান। সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে রাখুন। আরেকটি প্যানে সরিষার তেল গরম করে শুকনা মরিচ ভেজে নিন কয়েকটা। ভাজা হয়ে গেলে মরিচগুলো উঠিয়ে দুটো পেঁয়াজ কুচি করে দিয়ে দিন একই তেলে। কাঁচা মরিচ কুচি ও একটি রসুনের আস্ত কোয়াগুলো আলাদা করে দিয়ে দিন। নেড়েচেড়ে ভাজুন। পেঁয়াজ নরম হয়ে গেলে সেদ্ধ করে রাখা বেগুন দিয়ে দিন। ভালো করে নেড়ে ভাজা ভাজা করে নিন বেগুনের মিশ্রণ। লবণ ও সরিষার তেল দিয়ে ভেজে রাখা শুকনা মরিচ ভেঙে নিন। পেঁয়াজ কুচি ও ধনেপাতা কুচি মেশান। এবার ভেজে রাখা বেগুনের মিশ্রণ মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজাদার বেগুন ভর্তা।
শুঁটকি ভর্তা
পেঁয়াজ ও রসুন ছোট করে কাটুন। ধনেপাতা কুচি করে নিন। শুঁটকি পরিষ্কার করে ছোট ছোট করে টুকরা করে কাটুন। ভালো করে ধুয়ে ১০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন শুঁটকির টুকরা। চুলায় প্যান বসিয়ে ২ টেবিল চামচ সরিষার তেল গরম করে সামান্য লবণ দিয়ে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি বাদামি করে ভাজুন।
ভাজা পেঁয়াজ ও রসুন একটি বাটিতে উঠিয়ে একই প্যানে আরও ২ টেবিল চামচ সরিষার তেল দিন। মিডিয়াম আঁচে শুঁটকির টুকরা বাদামি করে ভাজুন। হালকা বাদামি থাকতে থাকতে তুলে নিন। অতিরিক্ত ভাজলে শক্ত হয়ে যাবে। এবার শুকনা মরিচ টেলে সামান্য লবণ দিয়ে মেখে নিন। এরপর একে একে ভেজে রাখা সব উপকরণগুলো হাত দিয়ে ভর্তা করুন। একদম ভেঙে ফেলবেন না শুঁটকি। ধনেপাতা কুচি দিয়ে মেখে বাটিতে সাজিয়ে পরিবেশন করুন শুঁটকি ভর্তা।