গরমে ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশের দোকান থেকে ঠান্ডা ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কিনে খান অনেকেই। সাধারণ জুস বা শরবতের সঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়ের পার্থক্য আছে কিছু। ইলেক্ট্রোলাইট হচ্ছে এক ধরনের খনিজ বা বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত পদার্থ। এগুলো রক্ত, টিস্যু, অঙ্গ এবং অন্যান্য শারীরিক তরলগুলোতে পাওয়া যায়। সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, ফসফেট এবং ম্যাগনেসিয়াম সবই ইলেক্ট্রোলাইট। ইলেক্ট্রোলাইটস শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এগুলো শরীরে পানির পরিমাণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পিএইচ স্তর বজায় রাখতে এবং কোষের ভেতরে এবং বাইরে পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। ইলেক্ট্রোলাইট পেশী, স্নায়ু এবং অন্যান্য অঙ্গকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
তবে গরমে সুস্থ থাকতে কি নিয়মিত ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় খেতেই হবে? ফরাজি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেডের পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ জানান, এই গরমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ঘামের সাথে শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের খনিজ বের হয়ে যায়। সেগুলোর ঘাটতি গুলো পূরণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের খনিজ জাতীয় পানীয় বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস গ্রহণ করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন নামে এই ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকগুলো পাওয়া যায়। তবে অনেক সময় দেখা যায় যে নামে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস হলেও এগুলোতে খনিজ উপাদানের উপস্থিতি সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। সেজন্য আমরা ঘরেই বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস খুব সহজেই তৈরি করে ফেলতে পারি। বিভিন্ন টক ফল যেমন কমলা, আমলকি বা মাল্টার জুসও হতে পারে আদর্শ ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস। আবার ডাবের পানিও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস হিসেবে কাজ করে থাকে। চিনি ও লবণ বিশুদ্ধ পানিতে ভালোভাবে গুলে নিলেই সহজেই তৈরি হয়ে যাবে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস। লবণ, লেবুর রস, ডাবের পানি একসঙ্গে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ সমৃদ্ধ পানীয়। আবার লেবুর রস, লবণ পানির সাথে মিশিয়ে নিলে কিন্তু সেটিও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক হিসেবে কাজ করে থাকে। আমরা আসলে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসকে অনেক দুর্লভ পানীয় বলে মনে করি। কিন্তু ঘরে থাকা খুব সাধারণ উপকরণ দিয়েও যে এই পানীয় তৈরি করা যায় সেটা আমরা অনেকেই জানি না। তবে অতিরিক্ত না ঘামলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাধারণ পানি খাওয়াই সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট। পাশাপাশি ফলের রস ও শরবত খান।
আপনি যদি পর্যাপ্ত পানি খান এবং প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকে, তবে নিয়মিত ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যে পরিমাণ পানি গ্রহণ করেন, এর চেয়ে বেশি তরল হারালে এবং ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে ইলেক্ট্রোলাইট হারাবেন। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব, চরম তৃষ্ণা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ও বিভ্রান্তি। কিছু সময় আছে যখন ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই সময়গুলোতে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় খেতে পারেন। প্রচণ্ড গরমে থাকা, ব্যায়াম করা, বমি বা ডায়রিয়া হলে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় খাওয়া যেতে পারে। ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়তে পানি, ইলেক্ট্রোলাইটস যেমন সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম এবং চিনি থাকে।