X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫-এর ট্র্যাজেডি

স্বপন নাথ
১৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:২০আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:৫৮

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার রূপকার ও স্থপতি। সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধু ব্যতীত আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ও বাস্তবায়নে তাঁর মতো কেউ ছিল না। বস্তুত, জাতি গঠনের ইতিহাসে বাঙালি কম লড়াই করেনি সেই প্রাচীন কাল থেকে একাত্তর পর্যন্ত। বাঙালির দীর্ঘকালীন স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি মুক্তির স্বপ্ন, প্রেষণা, ইচ্ছাশক্তি মানুষের ভেতরে জাগাতে পেরেছেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। লক্ষণীয়, ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করলো বাঙালি আর শাসক হলো পশ্চিম পাকিস্তানিরা। এ যেন ইতিহাসের নির্মম নিয়তি।

ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে বাঙালিরা লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে। এ উপনিবেশের আগেও বাঙালিরা স্বতন্ত্র থাকার চেষ্টা করেছে। তারা প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু ক্ষমতার কাছাকাছিও যেতে পারেনি। এ উপমহাদেশে যেকোনো আন্দোলনে বাঙালির অবদান কোনো বিবেচনায় কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান নামের দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব, সাংস্কৃতিক ব্যবধান, মানুষের চলন, বলন, আচরণ, কামনা, বাসনা, রুচিবোধ সবই আলাদা। এমন ভূমির রাষ্ট্র গঠনে বিস্মিত হতে হয়। ফলে, বিভাজনের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার দিক থেকে আবুল মাল আবদুল মুহিত-এর পর্যবেক্ষণ : ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস এক হিসেবে প্রায় দুশো বছরেরও বেশি দীর্ঘ। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা নানাভাবে বিভিন্ন সময়ে রুখে দাঁড়িয়েছে, আবার আনুগত্য দেখিয়েছে অনেক।... পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরা তাদের ন্যায্য ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যায়। এই প্রচেষ্টা ১৯৭১-এর মার্চে ব্যর্থ হলে শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ অধ্যায়- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। [মুহিত ২০১২ : ৩০৩]

স্বাধীনতা উত্তরকালে ’৭৫-এ পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ নেই, ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হই আমরা। আমরা হয়ে গেলাম আত্মঘাতী, বিশ্বাসঘাতক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হতে পারে, এ কথা কেউ ভাবেনি। শুধু হত্যাই করা হলো না, এর সমর্থনে কিছু রূপকথার কাহিনি, বয়ান ও আইনি জটিলতা তৈরি করা হলো। এমনভাবে প্রচার শুরু হলো যেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা নিরর্থক প্রাণ দিয়েছেন। এমন উল্টো পরিস্থিতিতে আমাদের প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কী কোনো লক্ষ্য ছিল? নাকি এমনিতেই এরকম জঘন্য একটি হত্যাকাণ্ড ঘটালো ঘাতকরা? হত্যার পক্ষে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে একটি গোষ্ঠী কিছু প্রোপাগান্ডা ও বয়ান তৈরি করেছে একসময়। যেসব প্রচার করা হয়েছে : ‘বিপথগামী কয়েকজন সৈনিক শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থার প্রতিবাদে মানুষ ক্ষুব্ধ হলে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয় এবং মানুষ শেখ মুজিবের বিপক্ষে চলে যায়। সে সময় খাদ্য সংকটে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। তিনি সেটা সামাল দিতে পারেননি। শেখ মুজিব দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ ইত্যাদি। এর বিপরীতে বিশাল ষড়যন্ত্র, নীলনকশা, বিশৃঙ্খলা তৈরি করা এসব প্রায় চাপাই পড়ে গেল। পরিণামে দীর্ঘ অন্ধকারে আমরা বঙ্গবন্ধু, জয়বাংলা, সোনার বাংলা ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ উচ্চারণ করতে পারিনি। স্তব্ধতার ঘোরে আমরা অনেক সময় উচ্চারণ করিনি—কারা হত্যা করেছে। বহুদিন এ হ্যাংওভার কাটানো যায়নি। আবার সব জেনেও একধরনের তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে যাতে হত্যাকাণ্ডের পক্ষে যুক্তি তৈরি হয়। কিছু এলোমেলো ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য এনে ধোঁয়াশা তৈরি করা হলো।

প্রসঙ্গত, ‘১৯৭১-এর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, লক্ষ্য, মূল্যবোধ ও চিন্তা-চেতনাকে বিনষ্ট করাই ছিল এই সব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর প্রধান উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসার ও অন্যান্য সদস্য কোনোভাবেই এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জড়িত ছিল না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থী অতি মুষ্টিমেয় ও নগণ্য সংখ্যক অফিসার ও সাধারণ সৈনিক কতিপয় দেশি ও বিদেশি মহলের এজেন্ট হিসেবে এ সমস্ত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।...১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ফলাফলকে পাকিস্তানের মিলিটারির একটি অংশ এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো, মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর কতিপয় নেতা কোনোক্রমেই মেনে নেননি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই সেই সমস্ত পাকিস্তানি ব্যক্তিত্ব এই ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল মুক্তিযুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফল মাথায় রেখেই। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর যে তেরোজন কর্মকর্তা এবং চারজন ননকমিশন্ড কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারবর্গের সদস্যদের এবং আওয়ামী লীগের চারজন প্রবীণ নেতার হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল বলে তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে, তারা সকলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থী।’ [মিয়া ১৯৯৩ : ২৬৯ ]

মূলত পাপাচার ভুলাতে, অপরাধ লুকাতে, লুটপাট করতে মিথ্যে বয়ান প্রচার করা হয়েছে। ১৯৭৫ পরবর্তী যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা এ প্রোপাগান্ডার সাথে জড়িত ছিল। এখনও আছে। ইতিহাস থেকে জানি, ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার অনিবার্য শর্ত হলো আগের চিহ্নসমূহ মুছে ফেলা। এ নির্মম ঘটনার খুনিরাও সুবিধাভোগকারী গোষ্ঠী, যেনতেনভাবে ক্ষমতা দখল ও স্থায়ী করতে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী এবং যারা এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না, এসব মানুষকে একটি প্লাটফর্ম নিয়ে এসে ক্ষমতার অংশীদার করেছে। এমনই এদের রঙ, যে-রূপ ধরাও মুশকিল। এগুলো অনেকে স্বীকারও করতে চান না। এ আদর্শটি সরাসরি রাজনীতিকে সমর্থন করে আবার কখনও অদৃশ্য থাকে। কখনও অপধর্মের আলোছায়ায় বিস্তৃত হয়। তারা যা প্রচার করতে যুক্তি দেখায়, এসবে কুতর্ক, বিভ্রান্তিকরণের প্রলেপ থাকে। সাধারণ মানুষ তাই সহজে এদের ছদ্মবেশ বুঝে উঠতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে তাদের কথাবার্তা, আলোচনা, কর্মতৎপরতা, বক্তৃতা, বিবৃতি, তর্কের ভাষা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যায়। এসব অপতৎপরতা একটি উল্লম্ফন, উন্নাসিক, সুবিধাবাদী ও দেশপ্রেমহীন শ্রেণি ও গোষ্ঠী তৈরি করেছে।

সাদাচোখে হত্যাকারী ও সমর্থকদের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় : [ক] এরা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা নিয়ে কিছু কুতর্কমূলক কথা উত্থাপন করে; বলে, গণ্ডগোলের বছর; [খ] জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সফলতা, ব্যর্থতার গঠনমূলক আলোচনা না করে নিন্দামূলক বিচিত্র কথা প্রচার করে। শেখ মুজিব বললেও বঙ্গবন্ধু শব্দ উচ্চারণ করে না; [গ] পাকিস্তানের সুবিধা ও একত্ব নিয়ে যুক্তি দেখায়; [ঘ] ওরা ব্যক্তিগত জীবনে খুবই আত্মসচেতন, আত্মস্বার্থপর; [ঙ] এরা এ যুগের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে চায় শ্রমহীনতার বিনিময়ে। [চ] কথা, আলোচনায় নিজেকে কখনও গণতান্ত্রিক হিসেবে জাহির করতে কার্পণ্য করে না। আবার মানুষের মধ্যে মুক্তচিন্তা রোধে এর বিপক্ষে প্রচারণা চালায়। [ছ] তারা নিজেকে প্রগতিশীল দাবি করে বটে, কিন্তু কর্মকাণ্ড, ভাবনা, কর্মসূচি ও তৎপরতায়, ধ্যানে, জ্ঞানে প্রতিক্রিয়াশীল। প্রতিনিয়ত পশ্চাৎপদ চিন্তাভাবনা লালন ও চর্চা করে। হলিউডি, বলিউডি এমনকি মূল্যবোধবিরোধী মুভি, ডকুমেন্টারি দেখে আপ্লুত হয় এবং অন্যকে উৎসাহিত করে। আবার ধর্মের বিষয়ে উগ্রতা প্রকাশ করে। তারা ভোগবাদের সমর্থক, কিন্তু অন্তরে লালন করে চরম পশ্চাৎপদ চিন্তা। একইসাথে বাঙালি, বাঙালিত্ব নিয়ে তাদের অনীহা ও উষ্মা বিস্ময়কর; [জ] তারা সৃজনশীল উদ্ভাবন ও মুক্তচিন্তার বিরোধী। সবসময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে সমর্থন করে। তারা নানা পর্যায়ে, স্তরে, ব্যক্তিগত আচার-অনুষ্ঠানে, মাঠে-ময়দানে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যা-ই থাক, এরপক্ষে তারা অবস্থান গ্রহণ করে। ভাষায় বোঝায় তারা দেশব্রতী। কিন্তু তাদের কর্মতৎপরতা থাকে এদেশের মূল্যবোধ ও চেতনাবিরোধী।

বস্তুত, বাংলাদেশের সমাজজীবনে এরা প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছে। তারা আপাত সফল হয়েছে বলা যায়। ক্রমশ এ পশ্চাৎপদ চিন্তার সাংগঠনিক রূপ দিতে থাকে। এ পিছিয়ে পড়া চিন্তা ভাবনার আলোকে আমরা বিচ্যুত হই ১৯৭১-এর মূল্যবোধ, চেতনা ও ঐতিহ্য থেকে। কারণ, পশ্চাৎপদ চিন্তাচর্চার সামাজিকায়ন ও এর দীর্ঘ প্রক্রিয়া সমাজে বিশাল বিস্তৃতি নিয়ে বিদ্যমান। আমাদের প্রশ্ন হলো এমন সামাজিক শক্তি, গোষ্ঠী কোথায় হতে কীভাবে তৈরি হলো। নিশ্চয়ই বীজ, ক্ষেত্র ও পরিচর্যা ছাড়া হওয়ার কথা নয়। যারা মনে মননে লোকায়ত বাঙালির স্বাধীন ও মুক্ত বাংলাদেশ। একইসাথে যারা ভিন্ন খোলসে একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র বানাতে চায়। বস্তুত, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী গোষ্ঠী শক্তি সঞ্চয় করেছে উল্লিখিত স্ববিরোধী অংশের কাছ থেকে। সামাজিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার এমন প্রতিফলন, কী কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো, এমন প্রশ্নের উত্তর আমরা পেয়ে যাই। আমাদের বক্তব্যের সমর্থনে কিছু কথা এখানে উল্লেখ করতে পারি। এবং আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও স্পষ্ট করে বলেছেন- ‘স্বাধীন বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে কিন্তু পাকিস্তানি প্রভাব এখনো শক্তিশালী। এই প্রভাবের বিকাশ হয়েছে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে প্রতিবিপ্লবের সাফল্যে। পাকিস্তানি সামরিক সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবন লাভ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে। ... বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাই হয়েছে আঠারো বছর ধরে পাকিস্তানে সেনাশাসন এবং মাত্র সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে আরো ষোলোবছর বাংলাদেশে একই সেনাশাসন। এই দুঃশাসনে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রথম আঘাতেই বিসর্জিত হয় ১৯৭৮ সালে। ভারত বিদ্বেষ আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সমাজে সমতার পরিবর্তে বিশেষ গোষ্ঠির সুযোগ সৃষ্টি পায় প্রাধান্য। গণতান্ত্রিক আচার-আচরণের পরিবর্তে আসে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শিষ্টাচার, সহিষ্ণুতা ও সততা বিদায় হয়। জনপ্রশাসন হয় দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থান্বেষী। জ্ঞানসাধনা হয় গণবিচ্ছিন্ন ও সীমিত। সর্বোপরি রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠতে না পারে তার জন্য সামরিক শাসন সবরকম পদক্ষেপ নেয়।’ [মুহিত ২০১২ : ৩৪৮]

আরও একটি দ্বান্দ্বিক বিষয় আমরা খেয়াল না রেখে সমাজ-পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করি। ১৯৭৫-এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, আত্মস্বীকৃত খুনিদের অনেকেই ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শামিল ছিল। বস্তুত, এত সরলীকরণ বিচার করেছি বলেই আমরা বিশ্বাসঘাতক হতে পেরেছি। এসব প্রচারকারী পক্ষ, দল আগে থেকেই পাকিস্তানবাদকে মনে, চেতনায় লালন করতো। একটি পক্ষের হয়ে বিপক্ষে থাকা মানেই এ নয় যে চেতনায় বিরোধী থাকা। নির্ভেজাল, বাঙালিত্বে উদ্বুদ্ধ কোনো ব্যক্তি দেশ ও বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারে না, হত্যা করা দূরের কথা। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা এবং এদেশে বিপুল সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধা হত্যা সম্পর্কিত অনেক দলিল, তথ্য আমাদের সামনে এখন প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ ও এর পরবর্তী ঘটনাবলির তথ্যসমৃদ্ধ বিবরণ দিয়েছেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ-এর ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড [২০০৮], মিজানুর রহমান খান লিখিত মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড [২০১৪] ও লরেন্স লিফশুলৎজ-এর বাংলাদেশ : দ্য আনফিনিশড রেভল্যুশন [১৯৭৯]সহ বিবিধ গ্রন্থে। ১৫ আগস্টের ট্র্যাজিক ঘটনা নিয়ে পরবর্তী বিশ্লেষণ থেকে কিছু মন্তব্য উদ্ধৃত করা যেতে পারে। যা থেকে পশ্চিমা বিশ্ব, হত্যাকারী ও সহযোগীগোষ্ঠীর চারিত্র্য বোঝা যায়।

১. ‘‘অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলোতে এ রকম ইঙ্গিত ছিল যে, যদি বাংলাদেশের নাম পুরো পরিবর্তন করা না-ও সম্ভব হয়, তাহলেও এর একটি অধিকতর ইসলামি চরিত্র স্পষ্ট করে তোলা হবে। আমরা বুঝতে পারি যে রেডিও বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বর্জন করেছে। ব্যতিক্রমটুকু শুধু এখনো জাতীয় সংগীতেরই বেলায়। ... ভাষণের শেষে ‘জয় বাংলা’র উচ্চারণ, যাতে কিনা সংস্কৃত ভাষার ব্যঞ্জনা রয়েছে, তা পরিহার করা হয়েছে। এর পরিবর্তে এসেছে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’।’’ [খান ২০১৪ : ১১৫]

২. ‘মার্কিন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতি কখনো খুশি ছিল না। নিক্সন-কিসিঞ্জার স্বাধীন বাংলাদেশকে কখনো মেনে নিতে পারেননি। স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল তাদের জন্য ব্যক্তিগত বড় পরাজয়। সে জন্য চুয়াত্তর সালে খাদ্য-সাহায্য না দিয়ে মার্কিন সরকারের রাজনৈতিক চাপ ও তার ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্য সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছিল। ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ও মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে শেখ মুজিবের পতনে তারা খুশি হয়েছে। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরই শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী পাকিস্তান, চীন ও সৌদি আরব সরকার বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি দেয়।’ [খান ২০১৪ : ৩৫১]

একইসাথে মার্কিন ও পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা ও লিবিয়ার সামরিক সরকার এ পরিকল্পনার সাথে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। অতএব বলার অপেক্ষা থাকে কি বাংলাদেশকে কেমন রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছে; কীভাবে তারা দেখতে চায়, এসবই একটি পরিকল্পনার অংশ। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমরা যে পাকিস্তানপন্থার কথা বলি এটি কোনো আদর্শ নয়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌম রাষ্ট্র যারা মানে না, ১৯৭১-এর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ যাদের নেই, বাঙালির দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, আন্দোলন-ত্যাগ-নির্যাতন স্বীকার করে না, বাঙালিত্বের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে না, হাজার বছরে বাঙালির প্রাণ বিসর্জন এবং অর্জনে যাদের কোনো আস্থা নেই, যারা বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক, এরাই বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবার এবং অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তারা বাহ্যিকভাবে বাঙালি বা বাংলাদেশি, যা-ই হোক, প্রকৃতার্থে অন্তরে তারা চাষাবাদ করে ভিন্ন চিন্তা ও আদর্শ। ফলে, ১৯৭১ এবং ’৭৫-এর ট্রাজিক ঘটনার পর ক্ষমতার সুবিধা ভোগ করতে তারা নানামুখী তৎপরতা চালায়। একটি পর্যবেক্ষণ দ্রষ্টব্য : As Zia set about creating political space for himself, he realized he would need his power base. … He made some politically inept choices, such as bringing Shah Azizur Rahman in his cabinet, given that Azizur was widely viwed as a collaborator, as he gone to the UN as a Pakistani delegate in December 1971 to speak against the independence of Bangladesh. `it was a slap on our face’ Sultana Kamal said, recalling that appointment.’’ [Tripathi 2014: 263]

উল্লেখ্য যে, ’৭৫-এর পর সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় গঠিত সকল মন্ত্রিসভায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী কোলাবোরেটররা অভ্যর্থিত হয়। এমনকি মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্তরাও মন্ত্রিত্ব লাভ করে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের সম্মান দিয়ে আসন দেওয়া হয়। স্পষ্টত, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী গোষ্ঠী এবং পঁচাত্তর পরবর্তী বেনিফিসিয়ারিদের চরিত্র, কথা, আলাপের পাঠোদ্ধারই বলে দেয় কারা ’৭৫ ট্র্যাজেডির ঘটনাকারী। আত্মস্বীকৃত খুনী লে. ক. ডালিমের কথা থেকেই আমরা বুঝে নিতে পারি—বঙ্গবন্ধু তাদের কতটুকু কাছে নিয়েছিলেন এবং কীভাবে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। [দ্র : যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি ২০০১]। মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘‘মেজর রশিদ ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষদিকে ‘ছুটিতে এসে’ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে। ... মেজর ফারুককে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমার কাছে ফাইল আসে। সে পাকিস্তানের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে থেকেও ৯ মাসেও স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগদান করেনি।’’[চৌধুরী ২০১৪ : ৭৪]

তারা নিশ্চিত ছিল, বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে থাকলে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে রূপ নেবে, এখানে আর কোনো খবরদারি চলবে না। আরও একটি কথা প্রচার করা হয় যে, বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্র নাকি ধ্বংস করেছেন। প্রচার করার জন্য তা বলাই যায়। আমাদের প্রশ্ন হলো : মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল কী শাসিতের গণতন্ত্র না শোষিতের গণতন্ত্র? এখানেই শোষক শ্রেণির সমস্যা। উপনিবেশ পরিবর্তনের মাধ্যমে শোষণ প্রক্রিয়া বা শোষক চরিত্র বদলায়নি। যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বক্তব্য, সাক্ষাৎকার ও ভাষণে। বাকশালের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মূলত সামন্তবাদী ক্ষমতার অধঃক্ষেপ দূর, মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতন্ত্র, একটি আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাকশাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। স্মরণীয়, মানুষের মুক্তির জন্য তিনি নিজস্ব ভঙ্গিতে এ কর্মসূচির বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছিলেন। কারণ, তিনি ব্যক্তি বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের ভাবাদর্শের অন্ধ অনুকারক ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু এ কর্মসূচির লক্ষ্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সেই জন্য আমার দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক। ভেঙে ফেলে সব নতুন করে গড়তে হবে। নিউ সিস্টেম করতে হবে। সেই জন্য কো-অপারেশনে গিয়েছি। ... আমরা একটা নতুন এডুকেশন সিস্টেম করতে বলেছি। কেরানি পয়দা করে লাভ হবে না। মানুষ পয়দা করতে হবে।... এখানে যে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি, সে অর্থনীতি আমাদের, সে ব্যবস্থা আমাদের। ... আমার মাটির সাথে, আমার মানুষের সাথে, আমার কালচারের সাথে, আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে, আমার ইতিহাসের সাথে যুক্ত করেই আমার ইকনমিক সিস্টেম গড়তে হবে। ... একটা শোষণহীন সমাজ গড়তে চাই, আমরা একটা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি করতে চাই।’’ [মোমেন ২০২০ : ৫৮০-৫৮২]

অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম ও রেহমান সোবহান উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন লেখা, স্মৃতিকথায় এ বাকশাল প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনা করেছেন। প্রসঙ্গত,'...Bangabandhu should himself have initiated his own, more radical agenda for agrarian reform as part of his social agenda for BAKSHAL. In his program, he proposed a policy for compulsory cooperatives as part of his agrarian reform agenda. … He also introduced the revolutionary proposal for the socialization of this distribution of the product from the land based on the Tebhaga principle.’ [Sobhan 2022: 126-127]

যারা ভূমি সংস্কার বিরোধী ও সামন্তবাদ-পুঁজিবাদের সমর্থক এবং শোষণমুক্ত সমাজবিরোধী তারাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, নিশ্চিত করা যায়। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেক্যুলার সমাজব্যবস্থার সমর্থক। এ সেক্যুলার বলতে অনেকেই ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। এটাই বিপদ। বঙ্গবন্ধু কিন্তু শুধু ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি ও সাম্পদ্রায়িকতাকে লক্ষ্য করে এ সেক্যুলার রাজনীতির কথা বলেননি। এর লক্ষ্য ছিল—ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিগত অসমতার সেক্যুলারিজম। অর্থাৎ, মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সম্প্রদায় নিরপেক্ষ সেক্যুলারিজম ছিল তাঁর কাম্য।

ফলে, শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নয়, পশ্চাদৎপদ রাজনীতির খেলাও ছিল তাদের লক্ষ্য। পাকিস্তানপন্থী এসব ব্যক্তি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। তখন এমন রাজনৈতিক চর্চা আমদানি করে, তাতে কোনো আদর্শের বালাই ছিল না। সংগঠন, গঠনতন্ত্র, সংবিধান তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ক্রমশ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি কেন, তাঁর নাম, কর্ম, চিহ্ন মুছে দিতে কম চেষ্টা করা হয়নি। পাঠ্যবই থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সকল স্তর থেকে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত উপাদান ও চিহ্নগুলো অপসারণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটি সহনশীল জাতিকে তারা সাম্প্রদায়িক, উগ্র বানাতে সমূহ চেষ্টা করেছে। এখনও সক্রিয় রয়েছে এসব কাজে।

মোদ্দা কথা হলো, ওই উন্নাসিক, উল্লম্ফন একটি শ্রেণিকে আমরা জানতে, চিনতে ও বুঝতে চেষ্টা করি না। এটাই আমাদের বড় সীমাবদ্ধতা। এরা কখন কী আদর্শ গ্রহণ ও কখন কী রূপ ধরে বোঝা মুশকিল। সাধারণ জনমানুষ এদের দ্বারাই বিভ্রান্ত হয়। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে এরাই বাংলাদেশের সবকিছু উলট-পালট করে দেয়।

এমন চরিত্রের লোকজন স্পষ্টত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেসব প্রশ্ন বাজারে ঢেউ ছড়ায়, তারা ওই সুবিধাবাদী শাখারই সদস্য। এ শক্তিই বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সাথে 'বঙ্গবন্ধু' বলতে চায় না। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসক ও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা মিলে এদেশে পাকিন্তানি আদর্শবাদের সমর্থক ও রাজাকার-আলবদর-আলশামস পুনর্বাসন শুরু করে। তারা মূলত তাদের ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করতে দেশের ঐতিহ্যিক ও সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে অস্বীকার করে। বলা বাহুল্য যে, এ দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমান্বয়ে সামাজিক শক্তি অর্জন করতে সমর্থ হয়। ফলে, আর আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেক্যুলার সংস্কৃতি চর্চায় ফিরে যেতে পারিনি।

এরা খুব সুকৌশলে কাজগুলো করে থাকে। তাদের স্বীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্য তৈরি করে। এ শ্রেণির আধিপত্যের বিপরীতে যত ভালো কথা বলা হোক না কেন, কেউ তা মানেনি দীর্ঘদিন। বরং এমন কোটেট মার্কা কথা প্রচার করা হয়, যেক্ষেত্রে অপরাধীদের নৈতিকতা, বিশ্বাস ও আর অপরাধ এক হয়ে যায়। সবই মনে হয় ঠিকই চলছে। এর পরিণামে আমাদের যে, ‘জয়বাংলা স্লোগান’ এবং ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না,’ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’, বঙ্গবন্ধুর নাম, একাত্তর, বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা এসব ব্যর্থ ও মূল্যহীন হতে থাকে। সামষ্টিক স্বপ্ন ব্যর্থ ও একাত্তরের অর্জনগুলো মূল্যহীন করতে ওই শ্রেণির প্রয়াস হলো পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ড। সুতরাং, আমরা বলতে চাই এ হত্যা শুধুই পরিকল্পনাহীন বিপথগামী সৈনিকদের ছিল না। তারা নেতৃত্ব দিয়েছে ওই ভ্রান্ত, বাংলাদেশের চেতনা, সভ্যতা ও মানবতাবিরোধী পক্ষের। এটাকে বলা যায় বিভ্রান্তিকর বিষবৃক্ষের বাগান তৈরির পদক্ষেপ। আপাতভাবে তারা সফলও হয়েছে, আমাদের সর্বস্ব হারানোর বদৌলতে। এরা বলে এটি একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা। এও এক অপপ্রচার। বঙ্গবন্ধু শুধুই কী রাষ্ট্রপতি ছিলেন? তিনি অন্য দেশের মতো রাষ্ট্রপ্রধান নন। তিনি হঠাৎ করে নির্বাচনে রাষ্ট্রপ্রধান হননি। দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, আন্দোলন ও ত্যাগের ফলেই তাঁর ব্যক্তিত্ব নির্মিত হয়েছে। এটা কথার কথা নয়। পুরো জাতিকে তিনি সংগঠিত করেছেন একই লক্ষ্যে ও আদর্শে। আবেগে, আদর্শে ও নিষ্ঠায় মানুষকে কাছে ডেকেছেন। সুতরাং, বঙ্গবন্ধু একটি জনগোষ্ঠী, পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী ও নিপীড়িত মানুষের চিরকালের প্রতিনিধি।

তবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তোষণ ও অপকর্ম অভ্যর্থিত রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে।ক্ষমতার আধিপত্য বিরোধী সংগ্রাম করেই এন্টি-হেজিমনি তৈরি করতে হয়। যেমনটি বলেছেন গ্রামসি। যা আমরা করেই চলেছি। এ সংগ্রামের বদৌলতে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আর রক্তস্নাত ইতিহাসের কথামালা উচ্চারণ করতে পারছি। যে বিষবৃক্ষের বাগানে অন্ধকার তৈরি হয়েছিল। যেখানে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে ভ্রান্তির ভূগোল তৈরি হয়েছে। এগুলোর শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত হয়েছে সবেগে। এসব শাখা-প্রশাখার উচ্ছেদ ও এর অসুস্থতা থেকে বের হওয়ার সংগ্রামই চলছে এখন। এ সংগ্রাম-বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং তাঁর জীবনাদর্শ ও কর্মকে পুনঃস্থাপনের সংগ্রাম। এজন্য আমরা বলি আমাদের স্বপ্ন হলো- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ তথা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

তথ্যপঞ্জি :
১.     আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১২। বাংলাদেশ : জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব। ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ
২.     এম এ ওয়াজেদ মিয়া। ১৯৯৩। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ। ঢাকা : ইউপিএল
৩.     এ কে আবদুল মোমেন। ২০২০। ভাষণসমগ্র ১৯৫৫-১৯৭৫ শেখ মুজিবুর রহমান। ঢাকা : চারুলিপি
৪.     মেজর জেনারেল(অব.)মইনুল হোসেন চৌধুরী বীরবিক্রম। ২০১৪। এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক। ঢাকা : মাওলা ব্রাদার্স
৫.     মিজানুর রহমান খান। ২০১৪। মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড। ঢাকা : প্রথমা
৬.     Rehman Sobhan. 2022. Untranquil Recollections from Dawn to Dusk Political Economy of Nation Building in Post-Liberation Bangladesh. Dhaka: University Press Ltd.
৭.     Salil Thripati .2014. The Colonel Who Would Not Repent: The Bangladesh War and Its Unquiet Legacy. Delhi: Aleph Book Company

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
শেখ রেহানাকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা
বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস, এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা
ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য উন্মোচন
সর্বশেষ খবর
মাতৃহারা হলেন অভিনেতা জামিল
মাতৃহারা হলেন অভিনেতা জামিল
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলে দুঃসংবাদ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলে দুঃসংবাদ
২৭ মে সারা দেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি অটোরিকশাচালকদের
২৭ মে সারা দেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি অটোরিকশাচালকদের
এনএসইউর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবিএম কামাল উদ্দিন খানের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
এনএসইউর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবিএম কামাল উদ্দিন খানের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু