X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহামারি মোকাবেলায় বলপ্রয়োগ না জনসম্মতি?

ফিরোজ আহমেদ
২৩ মে ২০২০, ১৭:২৩আপডেট : ২৩ মে ২০২০, ১৭:৩১

মহামারি মোকাবেলায় বলপ্রয়োগ না জনসম্মতি?

রাজদণ্ড কথাটার একটা বহুমাত্রিক তাৎপর্য আছে। দণ্ড কথাটার মানে একদিকে লাঠি, যা দিয়ে প্রহার কিংবা আঘাত করা যায়। লাঠিয়ালের মূলে এই লাঠি, বলপ্রয়োগের হাতিয়ার। বলপ্রয়োগের ক্ষমতার কারণেই দণ্ড কথাটার আর একটা অর্জিত অর্থ দাঁড়ালো শাসন বা বিচারের ক্ষমতা। রাষ্ট্র উদ্ভবের শুরু থেকেই দণ্ড প্রয়োগের এখতিয়ার, এবং সেটার সূত্রে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মহামারির কালটা কোনো সাধারণ সময় নয়, সবকিছুই তখন ভেঙে পড়ে। রোগটি সংক্রামক, এই জ্ঞান অর্জিত হবার পর মহামারি প্রতিরোধে রাষ্ট্র নাগরিকদের সঙ্গে কী আচরণ প্রদর্শন করছে, তা দিয়ে ওই রাষ্ট্রের গঠনকে অনেকখানি চেনা যাবে। যেমন, প্রাচীন পৃথিবীর সবচাইতে সুগঠিত এবং পরম্পরা যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল চীনে, সংক্রমণ প্রতিরোধে সবচাইতে দক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাও প্রদর্শন করেছে তারা আজ থেকে দুই হাজার বছর আগেও। রোগের কারণ বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান না থাকলেও পর্যবেক্ষণ থেকেই রোগীকে পৃথক করা, সংক্রমণের মাধ্যম হিসেবে ত্বক, নিঃশ্বাস ইত্যাদিকেও বোঝার চেষ্টায় অজস্র পুস্তক রচনা করেছেন তারা। কিন্তু যতটুকু অগ্রগতি জ্ঞানগতভাবে ঘটেছে, তার প্রয়োগ অনিচ্ছুক জনসাধারণের মাঝে করতে তাদেরকে কমবেশি বলপ্রয়োগ তো করতেই হতো।

অন্যদিকে মধ্যযুগের ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি ব্লাক ডেথের সময়ে ইউরোপের যুদ্ধরত অনির্দিষ্ট সীমানার রাষ্ট্রগুলোতে শাসকরা আত্মরক্ষা করেছিলেন নিজের নিজের সুরক্ষাপ্রাচীর যুক্ত জমিদারিতে আশ্রয় নিয়ে। চার্চও প্রায় অসহায় দশায় পড়েছিল মহামারির তীব্রতায়। ফলে জনপদগুলোর কর্তৃত্ব অনেকাংশ চলে এসেছিল অপ্রথাগত ধর্মগোষ্ঠীগুলো, চলেছিল তাদের উন্মত্ততা আর হিংস্রতা, সঙ্গে ইহুদীনিধন। বহু নগরে রোগাক্রান্ত নাগরিকের বাড়ির দরজায় দেয়াল তুলে অবরুদ্ধ করে দেয়া হতো, সুস্থ অসুস্থ সমেত। ফলে যে গণআতঙ্কের জন্ম হয়েছিল, তার পরিণাম হলো ইউরোপের প্রতিটা মহামারিতে ঘনিষ্ঠতম আত্মীয়দের পরিত্যাগ। এটা কেবল একটা দুটো ঘটনা ছিল না, বরং এটাই ছিল স্বাভাবিক প্রবণতা। সাহিত্যে তার অজস্র নজির আছে। অর্থাৎ, একটা সঙ্কটে মাকে সন্তান পরিত্যাগ করছে কি-না, সেটাতে সন্তানের ব্যক্তিগত দোষ-গুণের চাইতে অনেক নির্ধারক ভূমিকা রাখছে সমাজ কিংবা রাষ্ট্র সন্তানের মাঝে কতখানি ভরসার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারছে, সেটা। আবার সর্বশেষ সুইডেনের উদাহরণে যেটা পরিষ্কার : ন্যূনতম বিধিনিষেধ আরোপ না করেও তারা ইউরোপের মাঝে কঠোরতম ভূমিকায় নামা রাষ্ট্রগুলোর সমান পারদর্শিতাই প্রদর্শন করতে পেরেছে মহামারি নিয়ন্ত্রণে। নাগরিকদের প্রায় সমমানের সাংস্কৃতিক অর্জন এক্ষেত্রে একমাত্র ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে সামান্য সম্পদের একটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্য কেরালা বিপুল জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে অসাধারণ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, ভিয়েতনাম বা চীনের মতো ভিন্ন মতের অধিকারহীন রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া ছাড়াও মহামারি সম্ভবত তার সাক্ষ্য হিসেবে আলোচিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিচতি রাশিয়াতে আবার তা করা সম্ভব হয়নি। সর্বত্রই, চিকিৎসা শাস্ত্রগত পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াও আর একটা বিষয় রাষ্ট্রীয় সাফল্যের মূলসূত্র হিসেবে দৃশ্যমান : জনসাধারণের চিকিৎসা ছাড়াও প্রাসঙ্গিক অন্য প্রয়োজনগুলোকেও পরিমাপ করতে, তার মনোজগত উপলদ্ধি করতে, সম্ভাব্য পরিণামগুলোকে গাণিতিক ছকে ফুটিয়ে তুলতে রাষ্ট্র কতখানি সাফল্য দেখিয়েছে। নাগরিকদের যতখানি উপলদ্ধি করতে পারবে রাষ্ট্র, ততখানি কম বলপ্রয়োগে রাষ্ট্র তার কাঙ্ক্ষিত আচরণ নাগরিকদের কাছ থেকে অর্জন করতেও সক্ষম হবে, এটা এবারের করোনা মহামারি আবারও প্রমাণ করেছে, প্রমাণ করেছে  জনসম্মতি যতখানি আদায় করতে পারবে রাষ্ট্র, দণ্ড প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা ততটা কমে আসবে।

সংক্রামক একটি মহামারি আমাদের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে বহুদিক থেকে উদোম করেছে। সংক্রামক ব্যধির সঙ্গে সাধারণ একটি ব্যধির প্রধান পার্থক্য হলো, এতে শুধু বিপুল পরিমাণ মানুষ আক্রান্তই হন না, প্রতিটি মানুষ পরস্পর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য হন বলে গুরুতর একটি মহামারিতে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ অসম্ভব হয়ে যায়, সমাজের গঠন কাঠামোই ভেঙে পড়ে। তখন কিন্তু শুধু স্বাস্থ্য বিষয়টা নিয়ে ভাবলে চলে না, ভাবতে হয় স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও অনেকগুলো বিষয়ের কথা : একটা মহামারিতে মানুষের সম্ভাব্য আচরণ কী কী হতে পারে, সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে প্রচারণার ভাষা কী হবে, মানুষকে একটা ভরসার অনুভূতি কী করে দেয়া যেতে পারে, কী করলে মহামারির গণআতঙ্ক ছড়াবে না, মহামারির সময়কার বিধিনিষেধগুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য, এবং তারা নিজেরাই যেন অন্যদের তা মানতে বাধ্য করান, তার জন্য কী কী উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে—এই সব ক্ষেত্রে যদি আমাদের মহামারি প্রতিরোধ উদ্যোগের সাফল্য কতদূর, এই প্রশ্ন করা যায়, সম্ভবত উত্তর হবে প্রায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটা বিশেষ মৌলিকত্ব এই দিক দিয়ে যে, এখানকার স্বাস্থ্য-আমলাতন্ত্র সুসম্পূর্ণরূপে পেশাজীবী চিকিৎসক মুক্ত। জানি না এই দিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে একমাত্র নজির কি-না, তবে অনেকগুলো স্বাস্থ্যবান জাতির নজির দেখে জেনেছি যে, সে দেশগুলোতে স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতি নির্ধারণে পেশাজীবী চিকিৎসকদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নামগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, পেশাদার আমলাগণ সেখানে যেমন আছেন—যাদের আছে ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা—তেমনি আছেন পেশাজীবী চিকিৎসকগণ, যারা দেশের হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান রাখেন, যাদের আছে অসুখ সম্পর্কে কার্যকর বিষয়গত জ্ঞান, যারা জানেন সীমাবদ্ধতা আর চাহিদাগুলোর বাস্তবতা কী, কোন কোন খাতে সক্ষমতা ও দক্ষতা কীভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এবং এই স্বাস্থ্যগত নীতি নির্ধারণে সেখানে মহামারিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ট্রাম্প বিশেষভাবে নিন্দিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে এই মহামারিকালে বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রগুলোতে হস্তক্ষেপ করে। বাংলাদেশ সেদিক থেকে আরও এগিয়ে, এদেশের স্বাস্থ্যনীতি ও স্বাস্থ্যখাতটির পরিচালনা সুসম্পূর্ণরূপে বিশেষজ্ঞ মুক্ত, পুরোপুরি আমলাতান্ত্রিক এবং আমলাকেন্দ্রিক।

কিন্তু মহামারি যেহেতু সমাজের মৌলিক কাঠামোতেই আঘাত করে, ফলে মহামারি মোকাবেলায় শুধু পেশাজীবী চিকিৎসকরাই নন, আরও বহু ধরনের জ্ঞানের চাহিদা সমাজে অনুভূত হতে থাকে। কেননা সমাজ স্তব্ধ হয়ে পড়ে, সকল উৎপাদশীল কাজ বন্ধ হয়ে যায়, এবং একই সঙ্গে সাথে মানুষ বহুমুখী আতঙ্কে ভুগতে থাকে বলে সংক্রমণ দমনের প্রয়োজনেই মানুষের বাকি সমস্যাগুলোর দিকে তাকাবার, তাকে বিশ্লেষণ করার দরকার। যেমন ২১ মে সামাজিক গণমাধ্যমে পাওয়া একটা লেখার উদাহরণ দেয়া যাক, বাংলাদেশের একটি জেলার একটি গঞ্জের হাটের ছবি, ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিক্রির জন্য রাখা পশু, পশুর ক্রেতা-বিক্রেতা ও অন্যান্য মানুষজন। আদর্শ পশুর বাজার বলাই যেতো অন্য স্বাভাবিক সময়ে। কিন্তু করোনার এই কালে? ফলে সচেতন লেখক ওই জেলায় ওইদিন সনাক্ত হওয়া করোনারোগীর সংখ্যা ১৬৮ জন  উল্লেখ করে এই অসচেতন বেপরোয়া মানুষের নিজেদের মধ্যকার কথোপকথন তুলে দিয়েছেন, হতে পারে তার কল্পনা, হতে পারে তার নিজের কানে শোনা, কিন্তু আমি সেগুলোকে বাস্তবানুগ বলেই ধরে নিচ্ছি:

—ক্যার করুনাবাইরাস? ডরাইলেই ডর। বনের বাগে কাইতো না, কাইবো মনের বাগে।

—করুনা কতানি বিজর্মা? আমরা অইলাম হুংগা-বিজর্মার বাপ।

—হুটকির ফাতারে কাঁচা কইনচা দিয়া বাড়ি দরাইলে কই যাইবো করুনা!

—আমি আগেই কইছলাম এই করুনা ইহুদি-নাসারার একটা হলিসি।

এই মানুষদের অসচেতনতা ও ঔদাসীন্যের তুলনা যে নাই সেটা সত্যি। কিন্তু মানুষের এই আপাত উদাসীনতার পেছনে কোনো গভীর জীবিকার টান তাকে বেপরোয়া করছে কি-না, সেই খবর আমরা পাই না। এই মানুষদের এই আচরণ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বহু সহানুভূতিশীল মানুষ, তাদের প্রতি একই সঙ্গে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এবং অভিশাপের তুবড়িও ছুটেছে। আরও বড় কথা, মহমামারি বিস্তারেও তাদের এই আচরণকে দায়ী করে দায়িত্ববানরা দায় এড়াবারও সুযোগ খুঁজেছেন। কিন্তু এই বিষয়টা খুব পরিষ্কার : মানুষের এই আচরণ যদি অনুমিত হয়, যদি কোনো মানবিক শাস্ত্র তার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে, তার সমাধান হাজির করতে পারে, তাহলে সেই বিদ্যাগুলোর সাহায্য না নেয়াটাও নীতিনির্ধারকদের বৃহত্তর অক্ষমতার অংশ। অর্থাৎ, বাংলাদেশের শাসকেরা শুধু যে কৃত্রিম শ্বাস নেয়ার যন্ত্রের প্রয়োজন অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাই না, তারা মানুষের স্বাভাবিক আচরণ অনুমান করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।

২.

জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নটাকে শুধুমাত্র রোগী ধরে ধরে চিকিৎসা করার বন্দোবস্ত দিয়ে সম্পন্ন করার কথা ভাবলেই চলে না। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যগত নীতিনির্ধারণে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের সুযোগ খুব সীমিত, কিন্তু জনস্বাস্থ্য এমন একটা প্রশ্ন, যেখানে এমনকি চিকিৎসকও এর মনস্তাত্ত্বিক, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য বুঝতে ব্যর্থ হয়ে সাধারণভাবে রোগীকে কিংবা মোটাদাগে জনগোষ্ঠীর প্রবণতা মহামারি-সংশ্লিষ্ট বিপর্যয়গুলোর জন্য দায়ী করতে পারেন আর সব নাগরিকদের মতোই। বিশেষ করে এবারের করোনা মহামারির কালে সামাজিক গণমাধ্যমে বিপুল সংখ্যক আমলা-চিকিৎসক-লেখক-বুদ্ধিজীবী সহ সমাজের সাধারণভাবে ‘চিন্তাশীল’ অংশ হিসেবে পরিচতদের প্রতিক্রিয়াগুলোর একটা মহাফেজখানা গড়তে গিয়ে দেখতে পেয়েছি, বহু ক্ষেত্রেই পরস্পরের মাঝে যৌক্তিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও জনগোষ্ঠীর ‘খাসলত’কে প্রধান সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করার বেলায় বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও আমলার মাঝে তফাত থাকে না। বরং এই ক্ষেত্রে ঘরে থাকার সুবিধাসম্পন্ন মধ্যবিত্ত অংশ—ওই জেলা শহরের হাটের দৃশ্যে যেমনটা দেখানো হয়েছে—দরিদ্রতর জনগোষ্ঠীর বেপরোয়াপনা, ঔদাসীন্য ও অশিক্ষা নিয়ে ক্রুদ্ধ। কিন্তু সমাজের ‘চিন্তাশীল’ অংশের কাজ কী? মানুষের দৃশ্যমান আচরণের পেছনের অদৃশ্য কারণগুলো খুঁজে বের করবার চেষ্টা করা।

সাম্প্রতিক একটা উদাহরণই দেয়া যাক। ইলিয়াছ কামাল রিসাতকে দেয়া সম্ভবত দেশের প্রথম চিকিৎসা নৃ-বিজ্ঞানী শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাতকারের এই অংশটুকু খেয়াল করুন:

‘ইবোলা মহামারির সময় বেশ কিছু নৃ-বৈজ্ঞানিক কাজ আছে। জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে ইবোলাকে মোকাবেলা করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছিল তাতে দেখা গেল যে, সাধারণ মানুষ তাতে সহযোগিতা করছে না। অনেক ক্ষেত্রে বেশ প্রতিবাদ হয়েছে। তখন নৃ-বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন যে, এই বিরোধটা কেন হচ্ছে। মানুষের কাছে মৃত্যু তো একটা সাংস্কৃতিক বিষয়, ভীষণরকম কালচারাল একটা ব্যাপার। একটা মানুষের জীবন শেষ হচ্ছে সেই জীবনটা শেষ হওয়ার যে কত রিচুয়াল আছে, সেই আচারগুলোকে পালন করা একটা পরিবার-পরিজনের জন্য খুবই জরুরি ব্যাপার। এক ধরনের ক্ষত হয়ে থাকবে সারাজীবন, যদি সে তা পালন করতে না পারে। ইবোলার সময় দেখা যাচ্ছিল যে মানুষের এসব সাংস্কৃতিক আবেগকে একেবারে উপেক্ষা করে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার করা হচ্ছে। মানুষকে একপ্রকার জোর করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, হাসপাতালে মৃত্যুর পরে তাদের পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছিল, কোনো রকম আচার-অনুষ্ঠান করতে দেয়া হচ্ছিল না। তো পরে নৃ-বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভেতর দিয়ে এই সংকটগুলোকে বোঝা যায় এবং তারা এমন একটা পদ্ধতি ব্যবহার করেন যাতে সাধারণ মানুষের আবেগকে সম্মান জানানো যায়। যেমন একটা মুসলমান এলাকা ছিল, তাদের না পুড়িয়ে একটা নির্দিষ্ট এলাকায় দূরে একটা কবরস্থানে তাদের কবরস্থ করা যায় সেটার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে জানাজায় মানুষ যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হয়।’

পুরো সাক্ষাতকারটিই পাঠকের মনে গুরুতর ভাবনার খোরাক জোগাবে, উদ্ধৃতাংশের গুরুত্ব এইটুকু যে, এইখানে একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী একটা নির্দিষ্ট মহামারির শিকার হয়ে যে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে, সেটাকে দোষারোপ না করে তার কারণ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভিন্ন কোনো ব্যধির সম্মুখীন হয়ে, একই বা ভিন্ন কোনো জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া ভিন্নও হতে পারে, কিন্তু সেই সমাজবাস্ততা ও প্রতিক্রিয়াগুলোর স্বরূপ উদঘাটন, কিংবা অন্তত তার প্রয়াসটিই সমাজবিজ্ঞানীর প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশে সংখ্যায় খুব অল্প হলেও কয়েকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নৃ-বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও চিকিৎসা নৃ-বিজ্ঞানীকে এই কাজে যুক্ত দেখেছি, কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সহায়তা-পরামর্শ গ্রহণের কোনো উদ্যোগ আসলেই দেখা যায়নি।

৩.

করোনা মহামারি প্রতিরোধে যারা যারা সফল, তাদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এই : তারা মহামারির আগে আগে হেঁটেছেন। যে দেশগুলো মহামারির পেছনে পেছনে হেঁটেছে, তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হলো। প্রতিবেশী ভারতের কেরালা এক্ষেত্রে একটা আদর্শ উদাহরণ হতে পারে, বাকি ভারতের তুলনায় রাজ্যটির সাফল্য আশাতীত। রাজ্যটি বিদেশ থেকে ফেরত আসা নিজের প্রায় ১.৭০ লক্ষ প্রবাসীকে যথানিয়মে ১৪ দিন শুধু কঠোর তদারকিতে পৃথক করে রাখেনি, অন্যান্য রাজ্যের আরও প্রায় ১.৫ লক্ষ আটকে পড়া শ্রমিককেও খাদ্য ও আশ্রয় জুগিয়েছে। নিজ দেশের প্রবাসীদের যত্ন নেয়া ও পররাজ্যের আশ্রিতকে খাদ্য-আশ্রয় জোগানোর তথ্যটি মুম্বাই বা আহমেদাবাদের মতো বৃহৎ শিল্পায়িত নগরগুলো থেকে শত শত মাইল হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাওয়া শ্রমিকদের বিপরীতে একটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই শুধু তুলে ধরে না, সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটা শিক্ষা যুক্ত করে। বহু বিশেষজ্ঞই এখন মনে করছেন, ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য সামান্য ব্যয়ে কুণ্ঠার ফলাফল ভারতীয় অর্থনীতি সামনের দিনগুলো ভোগ করবে। 

প্রবাসীদের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের দেশে প্রদর্শিত হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বহু নমুনা আমরা সংগ্রহ করেছি। প্রবাসীদের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে যে কত রকম ক্ষত তৈরি করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, সেটা বুঝতে আবারও আমরা শাহাদুজ্জামানকে উদ্ধৃত করি:

‘কিন্তু প্রশাসন দুটো কাজ করলো : তাদের হাতে একটা সীল দিয়ে দেয়া হলো, যে সীলের ভেতরে তাদের কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ডটা রেখে দেয়া হলো এবং তারা যেসব যেসব বাড়িতে গেল, সেসব বাড়িতে লাল পতাকা লাগিয়ে দেয়া হলো। এই যে রাষ্ট্রীয়ভাবে, প্রশাসনিকভাবে তাদেরকে এক ধরনের চিহ্নিত করা হলো যে, তারা অগ্রহণযোগ্য মানুষ, এই যে ‘আদারিং’ যেটাকে বলে এবং গফম্যান যিনি স্টিগমা নিয়ে বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক, তিনি দেখাচ্ছেন, কীভাবে একজনের আইডেন্টিটিটা স্পয়েল করে দেয়া হয়, স্টিগমার ক্ষেত্রে। মানে তার কোনো আচরণ, কোনো পরিচয়-ফিচার এগুলোকে সমাজের জন্য অগ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়। তো প্রবাসীরা যারা একসময় খুব সম্মানিত ছিলেন, তাদেরকে প্রোব্যাবল করোনার উৎস হিসেবে তাদের আইডেনটিটিটা স্পয়েল করে দেয়া হলো। তো এই যে, গফম্যানই দেখাচ্ছেন সমাজে এই পরিস্থিতিতে একটা স্টিগমার পরিবেশ তৈরি করা হয়। তো এই সামাজিক পরিবেশটা হওয়ার কারণে কমিউনিটির ভেতরে একটা ‘স্টিগমা পাওয়ার’ তৈরি হয়। তারা অন্যকে নিগৃহীত করার ক্ষমতা পায়। আমরা দেখেছি যে, এরপরেই পাড়ার চায়ের স্টলে, দোকানে ইত্যাদিতে, প্রবাসীদের প্রবেশ নিষেধ উল্লেখ করে ব্যানার লাগানো হলো যে, প্রবাসীরা ঘোরাঘুরি করছে তাদের নির্যাতন বা এক ধরনের হয়রানি করা হলো। এভাবে এক ধরনের স্টিগমা পাওয়ার তৈরি হল। আমি মনে করি শুধুমাত্র মানুষকে সচেতন করলে হবে না, এ ধরনের নিগ্রহ যারা করবে তাদেরকে আইনের মাধ্যমে থামাতে হবে।’

নিগ্রহকে আইনের মাধ্যমে থামাবে কী, বলতে গেলে প্রবাসীদের খাদ্য-পানীয় বঞ্চিত রেখে, তাদেরকে আশু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিতে ব্যর্থ হয়ে এবং আরও নানাবিধ হয়রানির মধ্য দিয়ে তাদের উত্ত্যক্ত করা হলো, তাদের ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া প্রচার করে আবার সারা দেশে প্রবাসী-বিরোধী একটা প্রবল জনমত তৈরি করা হলো। খেয়াল করুন, কেউ কিন্তু এটা বলছে না যে, প্রবাসীরা সঙ্গনিরোধ না মেনে যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াবার এখতিয়ার পাবেন। কিন্তু তাদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ সঙ্গনিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না, অন্যদিকে সারাদেশে এটা একটা ঘৃণার সংস্কৃতিকে জন্ম দিলো। আরও বেশি তা যা করলো, সেটা হলো অসুখের প্রতি একটা অপরাধের বোধ যুক্ত করা, প্রবাসী হোন বা না হোন, সম্ভাব্য রোগী এবার টের পেলেন তাকে পালিয়ে থাকতে হবে, কারণ করোনার শিকার হওয়া মানে তিনি দশজনের নিগ্রহের শিকার হবেন। 

এর পরের ধাপে কিন্তু সত্যি অনুমিতভাবেই আমরা দেখলাম রোগীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। রোগী সন্দেহে ভাড়াটেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন বাড়িওয়ালারা। দিনমান হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছেন কেউ কেউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজেও সেবা না পাওয়া যন্ত্রণা কাতর গর্ভবর্তী নারীর ছবি শহীদ মিনারের সামনে, কিংবা করোনা সনাক্তের পরীক্ষার জন্য ফুটপাথে ঘুমাবার যে দৃশ্যগুলো আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, সেগুলোর স্বাস্থ্য কাঠামোর তাৎপর্যের পাশাপাশি সামাজিক মনস্তত্বে তার প্রভাব কতদূর উপলদ্ধি করেছি আমরা?

বিশেষজ্ঞরা যে ভুল অনুমান থেকে সর্বদা মুক্ত থাকেন, তাও বলা মুশকিল যদিও। যেমন রোগের ‘পাপতত্ত্ব, ঐশ্বরিক মেডিসিন এবং রোগীর অপরাধ’ শীর্ষক রচনায় শাখাওয়াৎ নয়ন নিতান্তই ভুলভাবে সখীপুরের জঙ্গলে মাকে ফেলে যাবার ঘটনাকে ‘রোগীর অপরাধ’ বর্গের অন্তর্ভুক্ত করছেন। রোগী পাপী, কিংবা অপরাধী বলে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আদৌ ঘটেনি। বরং মায়ের উপসর্গ দেখা দেয়ায় এলাকাবাসী রোগী পাপী কিংবা অপরাধী ভেবে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করেছেন, এবং নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েও একই রকম আরেক দল এলাকাবাসীর শিকার হবেন এই শ্রমজীবী পরিবারটি, এই ভাবনাই তাদেরকে এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটাতে বাধ্য করেছে। তার মানে, এখানে এলাকাবাসীর আচরণটি রোগীর প্রতি রাষ্ট্রের শত্রুজ্ঞান করার আচরণের ফলাফল, আর সন্তানদের আচরণটি রাষ্ট্রের রোগীর দায়িত্ব না গ্রহণ করার ফলাফল। অর্থাৎ, রাষ্ট্র মহামারির কালে মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব যথাযথভাবে না গ্রহণ করলে তার যে কত রকম বীভৎস প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার একটা দৃষ্টান্ত হিসেবেই এটিকে পাঠ করা যায়। সন্তানদের ফেলে যাওয়া একজন মায়ের ক্ষণিকের দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাহবা কুড়ান, কেননা হাজার হাজার মায়ের দায় নেয়ার চাইতে পরিত্যক্ত একজন মায়ের দায় নেয়াটা তুলনামূলক সাশ্রয়ী।

সত্যি বলতে কী, এমন দৃষ্টান্তও বহু আছে, যেখানে জনমনস্তত্ত্ব  না বুঝে, তার চাহিদা না মিটিয়ে মানুষের ওপর স্বাস্থ্যবিধি চাপিয়ে দেয়াটা দ্বন্দ্ব, বিরোধ এমনকি বিদ্রোহও তৈরি করেছে।

৪.

ভাববেন না, মহামারি ও সমাজ বিষয়ক এই সব গবেষণার সময় ও সুযোগ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশে তা একেরপর এক মহাবাঁক নিয়েছে। প্রথম থেকে ভাবুন, প্রবাসী তোলপাড়, ছুটিকাণ্ড, পোশাকশিল্প মালিকদের অবিমৃষ্যকারিতা, পিপিই কিংবা মাস্ক লোপাট ইত্যাদির পর আবারও ঈদের আগেকার গ্রামমুখী মানুষের ঢল। এবং একই রকম প্রশ্নে সামাজিক গণমাধ্যম আবারও গরম হয়ে উঠলো : লকডাউনে ঈদের আগে লাখো মানুষ রাস্তায় কেন? মানুষ কেন রাস্তায়, সেটা জানার জন্য তাদের গালি-গালাজ না করে তাদের কথাগুলো শোনার তো চেষ্টা করা যেতে পারে।

সবচেয়ে বেশি গ্রামমুখী দরিদ্র মানুষজন। শহরে তাদের সকলের খাদ্য, আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে? মধ্যবিত্তরা ঢাকা ছাড়লে তারা আদৌ ভিক্ষা করেও খাবার পাবেন তো এই শহরে? না-কি গ্রামে চেনাজানা মানুষের মাঝে কিছু হলেও খাবারের সংস্থান করতে পারবেন?

গাড়িচালক কিংবা এমনই পেশার লোকজনের কথা ভাবেন, যারা হাত পাততে অভ্যস্ত নন। তারা বাড়িতে সাহায্য না পেলে এইখানে কেন থাকবেন? তাদের অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন।

অত্যাবশ্যকভাবে ঢাকা ছাড়ছেন তারা যাদের পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই গ্রামে থাকেন, খরচ কমাবার জন্য।

পরিবার নিয়ে যাদের পক্ষে থাকা সম্ভব না, তারা ঢাকা ছাড়ছেন। বাড়ি ভাড়া বাঁচবে, অন্যান্য খরচও কমার সম্ভাবনা আছে।

মধ্যবিত্তরাও অনেকেই ঢাকা ছাড়তে চাচ্ছেন। আমি এমনকি এমন লোকের খবরও জানি, যারা আসলে বাড়িওয়ালাকে নোটিশ দিয়ে বাসা ছাড়ছেন। তাদের একমাত্র চিন্তা এই যে, তার চাকরিটা থাকবে না। পরবর্তী সংস্থান না হওয়া পর্যন্ত তারা স্ত্রী সন্তানকে বাড়িতেই রাখবেন।

দরিদ্রতমদের জন্য এর কারণ তাহলে খাদ্য এবং চলবার মতো অর্থের অভাব। মধ্যবিত্তের একাংশের জন্য ঢাকা ছাড়ার কারণ সামনের দিনগুলোর গভীর অনিশ্চয়তা।

এইখানে যদি আপনি লাখো লাখো ঢাকা ছাড়তে উদ্যত মানুষের হাজার খানেক ছবি তুলে বলেন, ‘কীভাবে সম্ভব দেশকে করোনা মহামারি মুক্ত রাখা!’, তাহলে আমরাও বরং আপনাকে প্রশ্ন করি : মানুষ কখন কী করে, কখন করে না, এবং কেন করে, কেন করে না, তার ন্যূনতম বোধ ও বিবেচনা কি আপনার নাই? আপনাদের নাই?

আশঙ্কা হয়, এই ঈদে যে দরিদ্রতর মানুষগুলো ঢাকায় আটকা পড়বেন, তারা অভুক্ত থাকবেন, বড় কোনো উদ্যোগ না নেয়া হলে। এবং গত কয়েক দিনে রাস্তায় খাদ্যের সন্ধানে বেড়ানো মানুষদেরও বড় অংশটিই দেখতে পাচ্ছি নারী-শিশু ও বৃদ্ধ, যাদের পক্ষে লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিবহণ সঙ্কটের মহাঝুঁকি পেরিয়ে গ্রামে পৌঁছানোর সুযোগ ছিল না।

সব পাঠকই আশা করি খেয়াল করেছেন, দেশে শুধু না, বিশ্বজুড়ে আজ অন্যতম বিতর্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে, জীবন রক্ষা না জীবিকা রক্ষা। সম্ভবত এই বিতর্কে জীবিকার অগ্রগণ্যতার পক্ষে যারা আছেন জীবন রক্ষার নামে, তারা হয়তো উপলদ্ধি করতে পারছেন না বাংলাদেশের মানুষ করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে যতরকম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করলো, তাতে আমরা খুব নাজুক ভারসাম্যের ওপর দিয়ে হাঁটছি। এই ভারসাম্যকে একটা সুস্থিত পর্যায়ে না নিয়ে, মানুষের ভরসা পুরোপুরি ফেরত না এনে, অর্থনীতি চালু করতে গেলে অর্থনীতি কার্যত বহুগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় দিয়ে এই বাস্তবতাটা বোঝা যাবে না। শুরুতে যে জেলা শহরের পশুরহাটের দৃষ্টান্তটি দেওয়া হয়েছে, সামান্য অর্থনৈতিক বিবেচনা থেকেই বোঝা যায়, এই মানুষগুলো ঈদের আগে বিক্রির জন্য পোষা পশুগুলোর ব্যবস্থা না করতে পারলে বিপদে পড়বেন, তাদের বেপরোয়া না হয়ে তাই উপায় থাকে না। কারণ রাষ্ট্র তার জন্য অর্থনৈতিকভাবে  টিকে থাকার বিকল্প কোনো বন্দোবস্ত করেনি। করোনাকে উপেক্ষা করার সংলাপে তিনি নিজেকে তাই সেই সাহসটুকুই যোগান, যেটা যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকও করে থাকে। কিন্তু এই পশুগুলোর বড় অংশই হয়তো শেষপর্যন্ত রাজধানীতে এসে পৌঁছুবে, যারা নিরাপদে বাড়িতেই থেকে এই মাংস উপভোগ করবেন। এই আমাদের যেকোনো পণ্য নিরাপদে উপভোগ করতে পারার পেছনে যে অজস্র মানুষের অনিরাপদে বাইরে থাকতে হয়, তাদের ভিন্ন ভিন্ন সমাজ বাস্তবতাতেই অজস্র ভিন্ন ভিন্ন সত্য ক্রিয়াশীল। সেসবের তাৎপর্য উপলদ্ধি করাটা জনস্বাস্থ্য রক্ষা বা মহামারি প্রতিরোধ নয়, মহামারির প্রতিক্রিয়ায় সমাজ ও অর্থনীতি যে ছিন্নভিন্ন হবার উপক্রম, তাকে শুশ্রূষা দেয়ার জন্য জরুরি।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা