X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
পর্ব—পাঁচ

কুসতুনতুনিয়ায় কয়েকদিন

মুহম্মদ মুহসিন
০৮ জুলাই ২০২২, ০০:০০আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ০০:০০

পূর্ব প্রকাশের পর

৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলমানদের জয়ের পরে সিরিয়ার দামেস্ক পর্যন্ত সুমলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃত হলো। খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী সুমলিম শাসন সাদরে গ্রহণ করল। তবে জেরুজালেম নগরী আত্মসমর্পণ করল না এবং এই শাসনাধীন হলো না। ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে জেরুজালেমের প্রধান চার্চের প্যাট্রিয়ার্ক সফরোনিয়াস শর্ত দিলেন যে, তিনি আত্মসমর্পণ করবেন এবং মুসলিম শাসন গ্রহণ করবেন যদি খলিফা উমর নিজে আসেন। এই শর্ত অনুযায়ী খলিফা জেরুজালেম গমন করলেন। খলিফাকে তাঁরা সাদরে গ্রহণ করলেন, জেরুজালেম নগরী তাঁকে ঘুরিয়ে দেখালেন এবং জোহরের নামাজের সময় হয়ে গেলে সফরেনিয়াস খলিফাকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁদের প্রধান গির্জায়ই জোহরের নামাজ আদায় করার জন্য। খলিফা রাজি হলেন না। তিনি বললেন, ‘আজ আমি আপনাদের এই গির্জায় নামাজ আদায় করলে এই ঘটনাকে ব্যবহার করে পরবর্তী কালে মুসলমানরা এটিকে সমজিদে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করার আশংকা থাকবে’। হজরত উমরের এমন আদর্শ স্থাপনের পরেও দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে মুসলিম শাসক ও বিজয়ীরা অপর ধর্মের উপাসনালয়কে মসজিদে রূপান্তর করেছে, যা ছিল স্পষ্টতই সুন্নাহবিরোধী এবং মুসলিম জাতিকে কঠিন সমালোচনার মুখোমুখি দাঁড় করার একটি পরোক্ষ প্রয়াস।

যাক, আমার মতো চুনোপুঁটির এমন মনে করা দিয়ে কিছু যায় আসে না। ফলে এই ভাবনা অল্পের মধ্যে ঝেড়ে ফেলে চার্চ-কাম-মসজিদ আয়াসোফিয়ার মধ্যেই দৃষ্টি ও ভাবনা নিবদ্ধ করলাম। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আয়াসোফিয়াকে খুব বিশাল স্থাপনা মনে হওয়ার সুযোগ কম। এর দৈর্ঘ্য ২৭০ ফুট, প্রস্থ ২৪০ ফুট এবং প্রধান গম্বুজের উচ্চতা ১৮০ ফুট। পিলার সংখ্যা ১৭০, মূল গম্বুজের ব্যাস ১০৫ ফুট। এই স্থাপনার বিশালতা বুঝতে হলে অবশ্যই ভাবতে হবে এই যে, এই আয়তন, এই গম্বুজ, এই পিলার সবই স্থাপিত হয়েছে ৫৬০ খ্রিষ্টাব্দে যখন ভারতবর্ষের মানুষ স্থাপত্যের নির্মাণে গম্বুজ কী কাজে লাগে তা জানেই না।

আমি যে বলেছি আয়াসোফিয়ায় জুমার দিনে লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ পড়ে তারা সবাই যে, আয়াসোফিয়ার অভ্যন্তরে নামাজ পড়তে পারে এমনটা নয়। এদের বেশিরভাগই মূলত নামাজে দাঁড়ায় সমজিদের সাথে সংযুক্ত সুলতান আহমেদ স্কয়ারে। এই স্কয়ারও ঐতিহাসিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান। বায়জান্টাইন সম্রাটের সময় এর নাম ছিল হিপ্রোড্রোম (Hippodrome)। শাব্দিক অর্থে হিপোড্রোম মানে ঘোড় দৌড়ের জায়গা, রেসকোর্স ময়দান। বর্তমানের ১৪৭৬ ফুট দীর্ঘ ও ৪২৭ ফুট প্রস্থ এই স্কয়ারের অপর প্রান্তেই রয়েছে ব্লু মস্ক। জুমার দিনে যখন আয়াসোফিয়ায় নামাজ হয় তখন আয়াসোফিয়ার মুসল্লিদের সারি এত বিস্তৃত হয় যে, তা প্রায় ব্লু মস্কের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তখন মনে হয় ইচ্ছে করলে আয়াসোফিয়ার মসজিদের ইমামের অধীনেই পুরো দুই মসজিদের মুসল্লিরা একত্রে নামাজ আদায় করে ফেলতে পারে।

এই দৃশ্য দেখে মনে প্রশ্ন জেগেছিল এত্ত কাছাকাছি এত বড় দুটা মসজিদের কী প্রয়োজন ছিল? ব্লু মস্কটা আর একটু দূরে কোথাও হলেই তো পারত। এ প্রশ্ন অবশ্য মদিনায় বসেও অনেকবার মনে হয়েছে। যেখানে বিশাল মসজিদে নববি অবস্থিত, সেখানেই চার/পাঁচ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে কেন আবু বকর (রঃ)-এর মসজিদ, আবার আলী (রঃ)-এর মসজিদ আলাদা আলাদা হতে হলো। মদিনায় অবশ্য মসজিদের নববির পাশ-ঘেঁষা আবুবকর, ওমর, আলীর মসজিদে এখন আর জামাতে নামাজ হয় না। সেদিক দিয়ে দেখলে আয়াসোফিয়ার অত কাছে ব্লু মস্ক নির্মাণের কি প্রয়োজন ছিল?

যাক আদার ব্যাপারীর এত সব জাহাজের খবরের জন্য উতলা হওয়ার দরকার নেই মর্মে নিজেকে শান্ত করে এবার আয়া সোফিয়ার অভ্যন্তর থেকে বের হলাম এতক্ষণ ধরে দূরে থাকা অর্ধেক অঙ্গ অর্থাৎ অর্ধাঙ্গী নাসিমা জাহান লুসির খোঁজে। মসজিদ থেকে নেমে রওয়ানা দিলাম মসজিদের যে কর্নারে তার থাকার কথা ছিল সেদিকটায়। কিন্তু পুলিশ বাঁধা দিলো। ওদিকটায় যাওয়া যাবে না। বলতে চেষ্টা করলাম—‘আরে মশাই, এটা কি মশকরা নাকি? আমার অর্ধেক অঙ্গ ওদিকে দাঁড়িয়ে আছে, আর আপনি বলছেন ওদিকে যাওয়া যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে এটা কেমনতর বেইনসাফি?’ কিন্তু আমি যদ্দূর যা চিল্লাইলাম তা ঐ কানা ফেরেস্তার কানে কিছুই ঢুকল না। ফলে যেদিক যাওয়ার তিরচিহ্ন রয়েছে সেদিকেই হাঁটতে লাগলাম। তারপর কিছুদূর এগিয়ে দেখলাম রাস্তা দুদিক, দুদিকের যেদিক খুশি যাওয়া যায়। ধরলাম সেই রাস্তা যেটি দিয়ে লুসি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকটায় পৌঁছা যায়। কিছুদূর হেঁটে দেখলাম ঠিকই পৌঁছতে পেরেছি যেখানটায় তার থাকার কথা। কিন্তু কই? যেখানে তার থাকার কথা ছিল তার থেকে ২০ মিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তপরিধিতেও তার টিকিটির চিহ্ন নেই। আল্লাহ, আল্লাহ, তোমার ঘরে নামাজে ঢুকে আমি বৌ হারিয়ে ফেললাম! ওদিকে যে রাস্তা ধরে এসেছি, এবার দেখছি পুলিশ সে রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছে। এবার আমি তাহলে বের হব কেমনে? হায় খোদা, বৌ খুঁজতে নেমে এবার দেখছি নিজেরেই হারিয়ে ফেলেছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইন্নালিল্লাহ পড়ছি আর মোবাইল ফোন বের করে একবার আমারে খোঁজার জন্য জয়নালকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করছি। লুসির তো ফোনে সিম নেওয়া হয়নি, ফলে তাকে ফোন দেওয়ার তো সুযোগই নেই। জয়নালের ফোনও বাজে না। এমন সময় এক পাকিস্তানি জওয়ান এসে বলল—‘ব্রাদার, ক্যান আই ইউজ ইয়োর ফোন টু মেক এ কল? আই হ্যাভ লস্ট মাই ফ্রেন্ডস’। মনে মনে বললাম—‘মিয়া আছ মৌজে, আমি বৌ পাই না, আর তুমি আইছো দোস্ত না পাওয়ার গপ্পো লইয়া’। মুখে অবশ্য কিছু না বলে ফোনটা দিলাম ওর হাতে। ও ফোন করল। ফোনে দোস্তের সাথে কথা বলতে পেরে সে যেন আনন্দে আটখানা। সে তার দোস্তরে পাইয়া গেছে আর চিন্তা নাই। আমাকে থ্যাঙ্ক ইউ, শুকরিয়া অনেক কিছুতে ভিজাইয়া দিয়া গেল। আমি খালি আল্লাহ আল্লাহ করছি আর মনকে প্রবোধ দিচ্ছি—‘মন তুই আকুলিবিকুলি করিস না, মহানবীও (স.) আয়শাকে (র.) হারিয়েছিলেন আবার ঠিকঠাক মতো পেয়েও গিয়েছিলেন, তুইও পেয়ে যাবি। দুশ্চিন্তা করিস না’। এই প্রবোধের বরকতেই হয়তো দেখলাম আমি যে রাস্তায় এসেছিলাম সেই বন্ধ রাস্তাটি আবার খুলে দিয়েছে। রাস্তা খোলা পেয়ে এবার হাঁটছি আর ভাবছি—‘যাক, নিজেকে যখন ফেরত পেয়েছি, বৌকেও পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ’। কিছুদূর হেঁটে মসজিদের আঙিনা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামলাম। ইচ্ছে হয়েছিল সামনে এগিয়ে বামে সুলতান আহমেদ স্কয়ারে ঢুকে আবার সেই গেটে যাব যে-গেট থেকে আমরা আয়াসোফিয়ায় প্রবেশ করেছিলাম। হয়তো শেষ পর্যন্ত লুসিও সঠিক জায়গায় যেতে না পেরে সেই প্রবেশদ্বারে অপেক্ষায় থাকবে। প্রায় ১ কিলোমিটার হেঁটে তারপর পুলিশ ব্যারিকেড শেষ হলো এবং ঢুকতে পারলাম সুলতান আহমেদ স্কয়ারে। তারপর হেঁটে হেঁটে পৌঁছলাম সেই প্রবেশদ্বারে। কিন্তু কই? এখানেও তো নেই। এবার প্রবেশদ্বার দিয়ে আবার ঢুকলাম আয়াসোফিয়ায়। ঘুরে ফিরে আবার পৌঁছলাম সেই জায়গায় যেখানে কথা ছিল লুসি নামাজের পরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। গিয়ে দেখি, কী অবাক কাণ্ড! লুসি তো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে আমি কেন এত ঘুরলাম আর এত দোয়া-দরুদ খরচ করলাম? সে গল্প পুরোটা বলছি না। নিজের উজবুকি কাহাঁতক আর বলা যায়!

কিছুক্ষণে পেয়ে গেলাম জয়নালকেও। এবার আর মানুষ নয়, বরং মানুষের খাবার খোঁজার পালা। সুলতান আহমেদ স্কয়ারের সামনে শয়ে শয়ে খাবার দোকান, আর তাতে হাজার হাজার দালাল। দালালরা চেহারা দেখেই বুঝে ফেলল আমরা বাঙাল এবং ভাষাবিকৃতিতে আধুনিক তুর্কিদের পারঙ্গমতার শীর্ষে উঠে চেঁচিয়ে বলল—‘হাই! বাংলাদেশ!! আমি তোমাকে ভালোবাসি’। মনে হচ্ছিল এই দালালরা দুনিয়ার সব ভাষায় ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’-এর ট্রান্সলেশনটা জানে। তবে তাদের সেই ভালোবাসায় আমরা পড়লাম না, কারণ আমাদের সাথে জয়নাল ছিল। জয়নাল আমাদেরকে নিয়ে প্রবেশ করলে মধ্যমমানের এক রেস্টুরেন্টে। খাবার মেনুতে কাবাবই বেশি। সুপ আছে তবে তার নাম হলো ‘চোরবা’ যা মূলত আমাদের দেশি রান্না পাতলা ডালের বিভিন্ন সংস্করণ। ভেতো বাঙালি খুজঁছি ভাত-মাছ যা একেবারেই বিরল। ফলে নিলাম ‘দানা’ মানে বিফ কাবাব, চোরবা আর একটা চিকেন কাবাব। এছাড়া একটা রাইসও নিলাম। এদের কাবাব, চোরবা, চিকেন—এগুলোই মেনুতে উল্লেখ থাকে। সাথে ‘একেমেক’ এবং ‘পিদে’ যত খাও ফ্রি। একমেক হলো শক্ত বাকলের পাউরুটির এক সংস্করণ এবং পিদে হলো আমাদের দেশি নানরুটি যার দিকে তাকালে মনে হবে রুটিটা তারা ভাজেনি, বরং আগুনে ঝলসিয়েছে। খেলাম খারাপ না। তবে এক চায়ের কাপ ভাতের জন্য ১৬ লিরা মানে প্রায় ১১০ টাকা বিল দিতে গিয়ে আঁতকে উঠলাম! ভাবলাম রুটি যেখানে ফ্রি সেখানে এক চায়ের কাপ ভাতের দাম ১১০ টাকা হলে তো মানে দাঁড়ায় এই যে, পাকিস্তানিরা ওদের ভাই, আর আমরা ওদের শালা। যাহ্ শালা, তোদের দেশে আর ভাত খাব না—কিড়া কাটলাম। অবশ্য সে কিড়া বেশিক্ষণ টিকিয়ে রাখতে পারিনি। সাধে কি আর মানুষ আমাদের ভেতো বাঙালি বলে?

এবার বের হয়ে আমাদের গন্তব্য ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ। এই মসজিদের প্রাতিষ্ঠানিক নাম অবশ্য সুলতান আহমেদ জামে মসজিদ। তবে এই নাম কোথাও চলে না। দুনিয়াজুড়ে মানুষ এটিকে ব্লু মস্ক হিসেবেই চেনে। কারণ হলো অভ্যন্তরীণ নকশায় ব্যবহৃত বিশ হাজার নীল ইজনিক টাইলস। মসজিদের ওপরের অংশের পেইন্টও নীল। মসজিদের দুশো জানালার কাচের রঙও নীল। সেই নীল কাচের ভেতরে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীল আলোর এক বন্যা মসজিদের অভ্যন্তরে খেলা করে। রাতের আকাশে এর অভ্যন্তরের আলো নীল কাচের মধ্যদিয়ে বিকিরিত হয়ে যে নীল আলোর ফোয়ারা সৃষ্টি করে রাতের ইস্তাম্বুলে কয়েক কিলোমিটার দূরের এশীয় অংশ থেকে পর্যন্ত সে আলোর লহরী দৃশ্যমান হয়। আজ চারশো বছরের অধিক কাল ধরে সুলতান আহমেদের নির্মিত এই বিখ্যাত মসজিদ তাঁর নামে পরিচিত না হয়ে দুনিয়াজুড়ে নীল মসজিদ বা ব্লু মস্ক নামেই খ্যাতিমান হয়ে আছে।

ইস্তাম্বুলের অন্যান্য ঐতিহাসিক মসজিদ থেকে ঐতিহাসিকভাবেই ব্লু মস্কের একটু ভিন্নতা রয়েছে। ওসমানীয় অর্থাৎ আটোম্যান সম্রাটরা যেসকল বড় বড় মসজিদ নির্মাণ করেছেন সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল কোনো-না-কোনো যুদ্ধে জয়ের পরে খোদার প্রতি শুকরিয়া স্বরূপ যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমাতের মালের অর্থ দিয়ে তৈরি। কিন্তু ব্লু মস্ক তৈরির পেছনে রয়েছে বরং উল্টো রকমের এক ঘটনা। হাঙ্গেরির সাথে যুদ্ধে সুলতান আহমেদ ১৬০৬ সালে সন্ধি করতে বাধ্য হন। অপরদিকে পারস্য সম্রাটের সাথে ১৬০৩ থেকে ১৬১৮ সাল পর্যন্ত চলমান যুদ্ধে সুলতান আহমেদের সময়কালে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। এ অবস্থায় বিভিন্ন দিকে অটোম্যান সাম্রাজ্যের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে মর্মে যে রব উঠে তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে সুলতান আহমেদ ১৬০৯ সালে এই জৌলুসময় মসজিদ স্থাপনের হুকুম দেন। ফলে অন্য মসজিদের ব্যয় যেখানে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে নির্বাহ হতো, সেখানে এই মসজিদের ব্যয় সম্পূর্ণভাবে রাজকোষ থেকে নির্বাহ হয়েছে।

এটি যখন নির্মিত হয় তখন দুনিয়ায় কাবা ব্যতীত অন্য কোনো মসজিদে ৬ মিনার ছিল না। কাবার পরে এটিই বিশ্বের প্রথম মসজিদ যার ৬টি মিনার নির্মিত হয়েছিল। যদিও এটি ব্লু মস্কের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে, তবে ঘটনাটি ঘটেছিল নিছক একটি ভুলের কারণে। এই মসজিদের স্থপতি ছিলেন বিশ্বস্থাপত্য ইতিহাসের কালজয়ী পুরুষ মিমার সিনানের শিষ্য সাদেফকার মোহাম্মদ আগা (১৫৪০-১৬১৭)। মোহাম্মদ আগাকে সুলতান আহমেদ হুকুম দিয়েছিলেন Altin minareler অর্থাৎ স্বর্ণের মিনার বানাতে। কিন্তু স্থপতি মোহাম্মদ আগা শুনলেন সুলতান তাঁকে বলেছেন Alti minareler অর্থাৎ ৬টি মিনার বানাতে। এই শ্রুতিপ্রমাদের কারণে কাবার পরে পৃথিবীর প্রথম মসজিদ নির্মিত হলো ৬টি মিনার নিয়ে। এতে সুলতান মনঃক্ষুণ্ন হলেন, কারণ, মানুষ ভাবতে পারে যে, তিনি কাবার সমকক্ষ এক মসজিদ বানিয়ে বেশ নাফরমানির এক কাজ করেছেন। এই উপলব্ধি থেকে তিনি আদেশ দিলেন কাবায় একটি ৭ম মিনার নির্মাণের জন্য। তবে বর্তমানে ৬ মিনারের মসজিদ বিশ্বে অনেক আছে। তুরস্কেই বর্তমানে অন্তত আরো ৪টি মসজিদ রয়েছে যাদের মিনার সংখ্যা ছয়।

ব্লুমস্কের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রবেশদ্বারে মানুষের স্বাভাবিক মাথা বরাবরের চেয়ে একটু উচ্চতায় আড়াআড়ি একটি ভারী শেকল টানানো আছে। এর কারণ হলো, সুলতান মসজিদের মূলদ্বার দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে প্রবেশ করতেন। প্রবেশের সময় যাতে এই শেকলের কারণে তাঁর মাথা নিচু হয় এবং আল্লাহর প্রতি মাথা নত করে যাতে তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন সেই জন্যই এই শেকল টানানোর ব্যবস্থা। তুরস্কের বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মসজিদের মতো এটিতেও প্রবেশদ্বারের পরে বিশাল আকারের উন্মুক্ত চত্বর রয়েছে। চত্বরের তিনদিক করিডোরের মতো স্থাপনা দ্বারা বেষ্টনীকৃত এবং সম্মুখভাগে মূল মসজিদ। চত্বরের মাঝবরাবর ওজুর ব্যবস্থাদি। মূল মসজিদের আয়তন আর সামনের চত্বরের আয়তন প্রায় সমান। মসজিদের মূল গম্বুজটি ১৪১ ফুট উঁচু এবং ১৫৪ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট। মূল গম্বুজের পাশে প্রথম চারটি গম্বুজ একটু ক্ষুদ্র আকারের। এরপরের ধাপে আরো ৮টি গম্বুজ রয়েছে আরো একটু ক্ষুদ্রাকারের। সামনের স্থাপনা-অভ্যন্তরের চত্বরসহ এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৪০ ফুট এবং প্রস্থ ২১৩ ফুট। প্রতি মিনারের উচ্চতা ২১০ ফুট। একসাথে দশ হাজার মুসল্লি মসজিদের অভ্যন্তরেই নামাজ আদায় করতে পারে। চলবে

পর্ব—চার

 

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা